জন্মনিবন্ধন সনদ একটি দেশের নাগরিকত্বের প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। এ ছাড়াও একজন নাগরিকের আইনি অধিকার, মৌলিক অধিকার, সম্পদ ও উত্তরাধিকার, আইনি সুরক্ষা, লিঙ্গ-সমতা, পরিকল্পনা ও নীতি প্রণয়ন, জনস্বাস্থ্য ও রোগ নিয়ন্ত্রণ, সম্পদ বণ্টন ও বাজেট প্রণয়ন এবং সুশাসন ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার জন্যও জন্মসনদ প্রয়োজন।
দেশের একজন নাগরিকের জন্মকে নথিভুক্ত করে পরবর্তীকালে শিক্ষা, চাকরি, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে জন্মনিবন্ধন সনদ গ্রহণকে বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এ কারণে জন্মনিবন্ধন সনদ ছাড়া দেশে ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সেবা পাওয়া যাবে না। যার মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ও পাসপোর্ট অন্যতম। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, জাতিসংঘের আঞ্চলিক সংস্থা ‘ইউএনএসকাপ’ ঘোষিত সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস (সিআরভিএস) দশকের আওতায় বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে শতভাগ জন্ম এবং মৃত্যুনিবন্ধন নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এসডিজি’র ১৬.৯ লক্ষ্যমাত্রায় জন্মনিবন্ধনসহ সবার জন্য বৈধ পরিচয়পত্র প্রদানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে জন্মনিবন্ধনের হার ৫০ শতাংশ, যা বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অগ্রগতির তুলনায় অনেক কম। ইউনিসেফ-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বে জন্মনিবন্ধনের গড় হার ৭৭ শতাংশ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় এটি ৭৬ শতাংশ। মৃত্যুনিবন্ধনেও পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ, যা বর্তমানে হার ৪৭ শতাংশ। অথচ বৈশ্বিক গড় হার ৭৪ শতাংশ।
উল্লেখ্য, ব্যক্তিগত পর্যায়ে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন নাগরিকত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার ও ভোটাধিকারের মতো মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে। অন্যদিকে, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সঠিক জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য তথ্য পরিকল্পনা, বাজেট, জনস্বাস্থ্য ও সুশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে যে ১৯টি নাগরিক সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সরকার জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি), পাসপোর্ট, শিক্ষা, চাকরি, ভোটার আইডি কার্ড, বিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরির নিয়োগ, উচ্চতর শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, টিকা, সম্পদ ক্রয়, বিক্রয়, সম্পদ হস্তান্তর, ব্যাংক হিসাব খোলা, বিমা সুবিধা প্রাপ্তি, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা এবং সরকারি যেকোনও সুবিধা পেতে হলে জন্মসনদ থাকতে হবে।
জানা গেছে, বিভিন্ন সেবার জন্য আবশ্যক করা হয়েছে জন্মসনদ। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভিত্তি হিসেবেও জন্মসনদ কাজ করে। জন্মনিবন্ধন না থাকলে মৃত্যুনিবন্ধন করা যায় না, যা উত্তরাধিকার নিশ্চিত করতে বাধা সৃষ্টি করে। দেশের প্রায় ৬৭ শতাংশ শিশু স্বাস্থ্যসেবার আওতায় জন্মগ্রহণ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধনের ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। এছাড়াও বিদ্যমান আইন অনুযায়ী নিবন্ধকের নিকট জন্ম ও মৃত্যুর তথ্য প্রদানের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট পরিবারকে দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বকে ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।