জুমবাংলা ডেস্ক : দ্রুত নগরায়ণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় টেকসই নগর উন্নয়নের আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা।
বুধবার ( ২৬ জুন ) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হওয়া দুই দিনের ‘আরবান রেজিলেন্স ফোরাম’ এর প্রথম দিনে এ আহ্বান জানানো হয়।
এই সম্মেলনটি স্থানীয় সরকার বিভাগ, যুক্তরাজ্য সরকার এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) এর ‘নগর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প’ এর অংশ হিসেবে আয়োজিত হয়েছে। যার লক্ষ্য হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করে টেকসই নগর নীতি বাস্তবায়ন করা। সম্মেলনের উদ্দেশ্য হলো টেকসই নগর নীতির উপর গুরুত্বারোপ করা। যাতে টেকসই শহর এবং কমিউনিটি গঠন করা যায়। এছাড়া সাশ্রয়ী মূল্যে বাসস্থান (হাউজিং), নগরের সামাজিক নিরাপত্তা, ইনোভেশন ও স্মার্ট সিটি ও আরবান রেজিলিয়েন্সের জন্য স্থানীয় পদ্ধতি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
প্রথম সেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার, বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান অধিবেশনটির সভাপতিত্ব করেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. মাসুম পাটোয়ারী স্বাগত বক্তব্য দেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবার এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং এর অধ্যাপক ড. আখতার মাহমুদ।
মোঃ তাজুল ইসলাম বলেছেন, স্থিতিশীল শহর ও নগর গড়তে সরকার এখন স্থির অবকাঠামো, সমন্বিত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি-ভিত্তিক অভিযোজন, বনায়ন ও ইকোসিস্টেম পুনরুদ্ধার এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।
তিনি বলেছেন, সাইক্লোন, বন্যা সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উন্নত জীবনের আশায় উপকূলীয় অঞ্চলের প্রচুর মানুষ অভ্যন্তরীণ অভিবাসন করছে।
তিনি জানান, ঢাকা ও এর আশেপাশে ভূমির সংখ্যা কম এবং ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ৪৯হাজার মানুষ বাস করছে। সবার জন্য সমান নাগরিক সুবিধা দেওয়া সরকারের জন্য কিছুটা চ্যালেঞ্জ।
তারপরও সরকার দেশকে ক্লাইমেট রিজিলিয়েন্ট করে গড়ে তোলার জন্য জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা ও বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করেছে।
স্টেফান লিলার বলেন, সাশ্রয়ী আবাসন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গৃহহারা মোকাবেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এই লক্ষ্য অর্জনে তৃণমূল থেকে উপর মহল পর্যন্ত একসাথে কাজ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি শক্তিশালী জাতীয় নগর নীতি পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য এবং বাংলাদেশের জন্য একটি জলবায়ু-স্মার্ট, টেকসই নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়ক। ইউএনডিপি টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতের জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সারা কুক বাংলাদেশে দ্রুত নগরায়ণের মাঝে চরম দারিদ্র্য কমানোর জন্য দেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন, যদিও তিনি উল্লেখ করেন যে শহরগুলি এখনও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সংগ্রাম করছে।
তিনি বলেন, আরবান রেজিলেন্স ফোরাম বাংলাদেশ সরকারের এবং উন্নয়ন অংশীদারদের অন্তর্ভুক্তিমূলক জলবায়ু-স্মার্ট নগর উন্নয়ন নিশ্চিতকল্পে একটি মাইলফলক।
অধ্যাপক ড. আখতার মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ একটি দ্রুত নগরায়ণ দেশ। ২০৩৫ সালের মধ্যে এর জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ শহরাঞ্চলে থাকবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। নগরায়ণ এবং শিল্পায়ন জিডিপির বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করেছে। কিন্তু একই সময়ে, দ্রুত এবং অপরিকল্পিত নগর রূপান্তর উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। যার মধ্যে রয়েছে নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য উচ্চ ঘনত্ব, তীব্র যানজট, অপর্যাপ্ত আবাসন, বস্তির বিস্তার, অতিরিক্ত চাপযুক্ত পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা এবং ক্রমবর্ধমান বায়ু ও পানি দূষণ। অতিরিক্তভাবে, প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলিতে সীমিত প্রবেশগম্যতা এবং সামাজিক বৈষম্য।
দ্বিতীয় সেশনে মাহমুদা আলমের সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের আরবার এন্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ড. ইশরাত ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নায়লা আহমেদ, রিহাবের সভাপতি মো. ওহিদুজ্জামান, নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র শহীদুল্লাহ খান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান এবং এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী শেখ মুজাক্কা জাহের প্রমুখ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।