জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেনে মানিক মিয়া হলে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাকিস্তানের জাতির জনক মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়।
নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত এই স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হতো না। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টি পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তাঁর। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের একটি অংশ (পূর্ব পাকিস্তান) ভাগ হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। যদি জিন্নাহ তখন এই অঞ্চলকে (পূর্ব পাকিস্তান) পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে না নিতেন তবে আজ বাংলাদেশ সৃষ্টি হতো না।
এঘটনার পর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেনে মানিক মিয়া হলে পাকিস্তানের জাতির পিতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ সভার ছবি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নেটিজেনরা নানা রকম মন্তব্য করতে থাকে।
সিনিয়র সাংবাদিক মাহবুব কামাল লিখেছেন, ‘আমি আগে বিশ্বাসই করতাম না, এদেশে পাকিস্তানপন্থি কেউ আছে। উগ্র ইসলামপন্থী যে আছে, সেটা প্রমাণ করার দরকার নেই। স্বাধীন দেশের কোনো নাগরিক অন্য একটি দেশের জাতির পিতাকে নিজ দেশের জাতির পিতা হিসেবে গণ্য করতে পারে, ভাবাই যায় না। এখন দেখছি শেখ হাসিনা যে ‘পাকিস্তান পাকিস্তান’ করতেন সেটাই ঠিক। শেখ হাসিনা অনেক ফালতু কথা বলতেন; কিন্তু তার কিছু কথা যে ফেলে দেয়ার নয়, তা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে।
যাহোক, প্রধান উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করবো না, তিনি কেন এমন এক অনুকূল পরিবেশ তৈরি করলেন, যেখানে জিন্নাহকে জাতির পিতা বলা হচ্ছে। এর চেয়ে ইব্রাহিমই তো ভালো ছিলো। প্রশ্ন করবো না, কারণ ন্যায়-অন্যায়ের বিতর্কটা এখন তামাদি হয়ে গেছে। পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই, সেটা ফিলিস্তিন, ইউক্রেন বা মণিপুর হোক কিংবা ট্রাম্প-কমলা হ্যারিসের বিতর্কে হোক, একটা নতুন থিওরি চালু হয়েছে। সেটা হলো, মাইট ইজ রাইট অর্থাৎ ‘জোর যার মুল্লুক তার’ থিওরি বাস্তবায়নের চেষ্টা। মাইটি শেখ হাসিনা মাইট দেখিয়েছিলেন, এখন যারা মাইটি, তারা দেখাচ্ছে। আবার এখনকার শক্তিকে পরাজিত করে অন্য কোনো শক্তি এলে তারাও দেখাবে।’
নকশীকাঁথা ব্যান্ডের ভোকাল সাজেদ ফাতেমী লিখেছেন, ‘মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে বলেছিল, উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার ওই ভাষণে তখন এ দেশের তরুণরা ফুঁসে উঠেছিল। সেই জিন্নাহর মৃত্যুবার্ষিকী ঢাকাতেই পালন করা হলো। এ কেমন কথা?
ড. ইউনুস স্যার, বিগত সময়ে দেশজুড়ে ভয়ানকভাবে উগ্রবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। হোক সে ধর্মীয় কিংবা দলীয় উগ্রবাদ। দেশে চলমান সংকট সেই উগ্রবাদ ও উগ্রবাদীদের দ্বারা সৃষ্ট। এর সবই আপনার জানা। তাহলে এই সময়ে এসে জিন্নাহর মতো মানুষের মৃত্যুবার্ষিকীর উন্মাদনা আমাদের দেখতে হবে কেন?’
সাগর লোহানী নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান নেতা মোহম্মদ আলী জিন্নাহর জন্ম-মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আলোচনা অনুষ্ঠান হতেই পারে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ‘কায়েদ ই আজম’ জিন্নাহকে নিয়ে কোন অনুষ্ঠান।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকজন লিখেছেন, ‘নিজেকে বাঙালি পরিচয় দিতে লজ্জা লাগছে‘।
অভিনেতা খায়রুল বাসার লিখেছেন, ‘ঘেন্না আপনাদের জন্য মুরুব্বিরা। ছি! ৭১ এর পর আল্লাহ আপনাদের উঠায় নিলেই ভালো হতো। এই দিন আমাদের দেখতে হতো না। আপনাদেরও বিরহ নিয়ে বাঁচতে হতো না।’
এরপর মন্তব্যের ঘরে এক মন্তব্যে তিনি লিখেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে শ্রেষ্ঠ উন্মাদেরা! একজনের বক্তব্য নিউজ পোর্টাল মারফত টাইমলাইনে আসলো, শুনতে গিয়ে ঘেন্নায় স্কিপ করলাম। পূর্ব বাংলা বলে চালিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ নামটা মুখে নিতেও তার কষ্ট হচ্ছে। বিস্ময়! এই বুড়াদের সাথে কিছু তরুণরাও আছে! জিন্নাহ তাদের পাকিস্তান দিয়েছে এই গর্বে মরে যাচ্ছে! এদের জায়গা দিবে পাকিস্তান? আল্লাহ তাদের পাকিস্তান চলে যাওয়ার পথ করে দিক এই দোয়া করি।’
ঢাকায় মুহাম্মদ আলি জিন্নাহর ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন ঢাকার নবাব পরিবার খাজা সলিমুল্লাহর বংশধর ঢালিউড অভিনেতা নাঈম।
তিনি লিখেছেন, ঢাকার নবাব পরিবার এটি সাপোর্ট করে না। আমি খাজা নাঈম মুরাদ নওয়াব সলিমুল্লাহর পৌপুত্র এবং গর্বিত বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে। আমি এমন কোনো গোষ্ঠী বা কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত নই, যা আমাদের জাতীয় পরিচয় বা ইতিহাসকে ক্ষুণ্ণ করে। নবাব সলিমুল্লাহ একাডেমির সঙ্গে আমাদের ঢাকা নবাব পরিবারের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এদের প্রচারিত মূল্যবোধের বিরুদ্ধে আমরা অবস্থান করি।
মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এ অভিনেতা বলেন, ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা, ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের প্রতি যে কোনো কর্মকাণ্ড, যা জনসাধারণের আশা এবং মূল্যবোধের বিরোধিতা করে আমি তা সমর্থন করি না। আমি বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার এবং তাদের স্বার্থের প্রতি দৃঢ়ভাবে অবস্থান করি। নবাব সলিমুল্লাহ বড় একটা ফ্যাক্ট। এই নাম দিয়ে অনেকে সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের পরিবার এই সংগঠন সম্পর্কে স্পষ্ট জানেই না।’
প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দাবিও তুলেছে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।