মৃত্যু মানুষের জীবনের এক অবশ্যম্ভাবী সত্য। কেউই এ সত্যকে এড়িয়ে যেতে পারে না। জন্ম যেমন নিশ্চিত, তেমনি মৃত্যু নিশ্চিত। মৃত্যুর পর মানুষের দুনিয়াবি সব সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এবং শুরু হয় পরকালের যাত্রা। ইসলামে মৃত ব্যক্তির প্রতি জীবিতদের অন্যতম দায়িত্ব হলো জানাজার নামাজ আদায় করা। জানাজার নামাজের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত কামনা করা হয় এবং এতে অংশগ্রহণকারীদের জন্যও রয়েছে অনেক সওয়াব ও ফজিলত। তাই জানাজার নামাজের নিয়ম, দোয়া ও এর গুরুত্ব জানা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

এ প্রসঙ্গে রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আর কিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ কাজের পূর্ণ প্রতিদান দেওয়া হবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫; সুরা আনকাবুত : ৫৭)
আর সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যখন তাদের নির্ধারিত সময় এসে যায়, তখন তারা এক মুহূর্তও বিলম্বিত করতে পারে না, আবার ত্বরান্বিতও করতে পারে না।’ (আয়াত : ৬১)
মৃত্যুর পর পরকালীন জীবনের প্রথম ধাপ হলো কবর। যারা এই ধাপ সহজে অতিক্রম করতে পারবে, তাদের জন্য পরবর্তী ধাপগুলো হবে সহজ ও শান্তিময়। আর যারা কবরের আজাবে নিপতিত হবে, তাদের জন্য সামনে অপেক্ষা করবে আরও কঠিন ও ভয়াবহ পরিণতি।
হাদিসে এসেছে, কোনো ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করলে তার গোসল, কাফন, জানাজা ও দাফনের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা উচিত। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন— ‘তোমরা মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত দাফন করো। যদি সে নেককার হয়, তবে তাকে কল্যাণের দিকে তাড়াতাড়ি পৌঁছে দিলে; আর যদি অন্যরকম হয়, তবে সেই বোঝা তোমাদের কাঁধ থেকে নেমে গেল।’ (সহিহ বোখারি : ১৩১৫)
জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া। এ নামাজ মুসল্লিদের জন্য সওয়াব বাড়ায় এবং মৃত ব্যক্তির জন্য ক্ষমার সুপারিশ। জানাজায় লোক সংখ্যা বেশি হওয়া মুস্তাহাব এবং মুসল্লি সংখ্যা যত বাড়বে ততই ভালো।
জানাজা নামাজ হলেও অন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মতো না। জানাজার নামাজের জন্য রয়েছে আলাদা আলাদা দোয়া। নিচে সেই দোয়াগুলো তুলে ধরা হলো—
মৃত ব্যক্তি যদি বালেগ পুরুষ বা নারী হন তবে এই দোয়া পড়তে হবে
আরবি উচ্চারণ-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا، وَمَيِّتِنَا، وَصَغِيرِنَا، وَكَبِيرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِيمَانِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الْإِسْلَامِ، اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهُ
বাংলা উচ্চারণ-
আল্লাহুম্মাগফির লি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়েবিনা ওয়া ছগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উংছানা, আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফফাহু আলাল ইমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আঝরাহু ওয়া লা তুদিল্লানা বাদাহু।
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত এবং মৃতদের, উপস্থিত এবং গায়েবদের, ছোট ও বড়দের এবং আমাদের নারী-পুরুষ সবাইকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাদের মধ্য থেকে যাকে জীবিত রাখবেন তাকে ইসলামের ওপরই জীবিত রাখুন।
যাকে মৃত্যু দান করবেন তাকে ইমানের সঙ্গেই মৃত্যু দিন। হে আল্লাহ! এর সওয়াব থেকে আমাদের বঞ্চিত করবেন না এবং এরপর আমাদের পথভ্রষ্ট করবেন না। (আবু দাউদ ৩২০১, তিরমিজি ১০২৪)
মৃত যদি ছেলে শিশু হয় তবে এই দোয়া পড়তে হবে—
আরবি উচ্চারণ-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهُ لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا شَفِيْعًا وَّمُشَفَّعًا
বাংলা উচ্চারণ-
আল্লাহুম্মাজআলহু লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহু লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহু লানা শা-ফিআও ওয়া মুশাফ্ফাআ।
বাংলা অর্থ-
হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।
আর মেয়েশিশু হলে এই দোয়া পড়তে হবে—
আরবি উচ্চারণ-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرَطًاً , وَّاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَّذُخْرًا , اَللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا شَفِيْعَةً وَّمُشَفَّعَة
বাংলা উচ্চারণ-
আল্লাহুম্মাজআলহা লানা ফারাতঁও ওয়াজআলহা লানা আজরাঁও ওয়া জুখরাঁও ওয়াজআলহা লানা শা-ফিআতাঁও ওয়া মুশাফ্ফাআহ।
বাংলা অর্থ-
হে আল্লাহ! এ বাচ্চাকে আমাদের নাজাত ও আরামের জন্য আগে পাঠিয়ে দাও, তার জন্য যে দুঃখ তা আমাদের প্রতিদান ও সম্পদের কারণ বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানাও, যা তোমার দরবারে কবুল হয়।
জানাজা নামাজ আদায় পদ্ধতি
জানাজার নামাজ আদায়ের আগে মৃত ব্যক্তিকে কিবলার (পবিত্র কাবা শরিফ) দিকে জমিনে রাখতে হবে। ইমাম তার বুক বরাবর দাঁড়াবেন। এরপর জানাজার নিয়ত করতে হবে। নিয়ত মনে মনে করলেই যথেষ্ট।
তাকবির বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হবে। এরপর নাভির নিচে হাত বেঁধে সানা (নামাজের) পড়তে হবে। তবে সানার মধ্যে ‘ওয়া তাআলা জাদ্দুকা’এর পর ‘ওয়া জাল্লা সানাউকা’ পড়তে হয়। এরপর তাকবির বলে দরুদে ইব্রাহিম পড়তে হয়। তারপর তাকবির বলে নির্দিষ্ট দোয়া পড়তে হয়। চতুর্থ তাকবির বলে ডানে ও বাঁয়ে সালাম ফিরিয়ে জানাজার নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



