জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মামলায় হাইকোর্টের জাল জামিনাদেশ তৈরির অভিযোগে অধস্তন আদালতের দুই আইনজীবীসহ তিনজনকে দ্রুত গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৯ জুন) বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। হাইকোর্ট বলেছেন, জামিন জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জাল জামিনাদেশ তৈরির ঘটনায় অধস্তন আদালতের দুই আইনজীবীসহ চারজনের জড়িত থাকার প্রমাণ পায় সিআইডি। এর মধ্যে একজন অ্যাডভোকেট তানজিম আল মিসবাহ বগুড়া জজ কোর্ট এবং অপরজন অ্যাডভোকেট রাজু আহমেদ ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী।
বাকি দুইজনের একজন আইনজীবী সহকারি। যার নাম মো. সোহাগ। অপরজন কম্পিউটার অপারেটর মো. মাসুদ রানা। হাইকোর্টের নির্দেশে অনুসন্ধান করে বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল ডিভিশন বেঞ্চে বুধবার (৯ জুন) এই রিপোর্ট দাখিল করা হয়।
হাইকোর্টের জাল জামিন আদেশ তৈরিতে ২ আইনজীবীসহ ৪ জন জড়িত
সিআইডির ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাল্পনিকভাবে নথি তৈরি করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের উচ্চ আদালতের আগাম জামিনাদেশ সৃজন করেছেন অভিযুক্তরা। পরে আদালতে সিআইডির দাখিলকৃত অনুসন্ধান প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া। তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশ জাল করার ঘটনায় শাহবাগ থানায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে আইনজীবী সহকারি মো. সোহাগকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে এই আসামি। এখন তিনি জেলহাজতে আছেন। তবে বাকি আসামিরা গ্রেফতার হয়নি। পলাতক রয়েছেন। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ পর্যায়ে আদালত বলেন, উচ্চ আদালতের আদেশ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সৃজনের সঙ্গে জড়িতদের কোন ছাড় নয়। একইসঙ্গে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঐদিন তদন্ত কর্মকর্তাকেও আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হয় একাধিক মামলা। এরমধ্যে একটি মামলায় ৩০ আসামি হাইকোর্টের আগাম জামিনের জাল আদেশ প্রস্তুত করে দাখিল করেন বগুড়া সদর থানা পুলিশের কাছে। সেই জাল আদেশবলে আসামিরা প্রকাশ্যে এলাকায়ও ঘুরে বেড়ান। দেন মহড়াও। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের মধ্যে সন্দেহের সৃষ্টি হলে এক আইনজীবীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে খোঁজ নেন। এরপরই জাল জামিনাদেশ প্রস্তুতের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এরপরই বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নজরে আসলে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ থেকে আসামিদের গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
টগর হত্যার ২৭ বছর পর খালাস ১৮ আসামি
পাশাপাশি জাল জামিনাদেশ সৃজনের সঙ্গে কারা জড়িত তা অনুসন্ধানের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ঐ নির্দেশের পরই সিআইডি ঘটনার অনুসন্ধান করে হাইকোর্টে রিপোর্ট দাখিল করে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় মোটর মালিক গ্রুপের অফিস দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্যের মধ্যে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রাজশাহী বিভাগীয় মোটর মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম এবং মোটর মালিক গ্রুপের সাবেক আহ্বায়ক ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম মোহন এই সংঘর্ষের ঘটনায় একে অপরকে দায়ী করেন। এ ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় দায়েরকৃত তিনটি মামলার মধ্যে একটি মামলা করেন মোহনের ছোট ভাই মশিউল আলম। এই মামলায় আমিনুল ইসলাম, মো. আলীম, মো. আনোয়ার মন্ডলসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।