জুমবাংলা ডেস্ক : চট্টগ্রাম নগরে চিকিৎসক কুরবান আলী হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং কিশোর গ্যাং নেতা সেই গোলাম রসূল নিশান আদালত থেকে জামিনে এসে এলাকায় শোডাউন করেছে। গত শনিবার দুপুরে পশ্চিম ফিরোজ শাহ আবাসিক এলাকায় গ্যাংয়ের ১৫/২০ জন সদস্য নিয়ে মহড়ায় অংশ নেয়। এ সময় এলাকার লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পুলিশ জানায়, কুরবান আলী হত্যা মামলার পর গত ১০ এপ্রিল থেকে আত্মগোপনে চলে যান গোলাম রসূল নিশান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। গত সপ্তাহে ওই হত্যা মামলায় নিশান এবং তার সহযোগী রাজু ও অপূর্ব উচ্চ আদালত থেকে জামিন পায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা আকবর শাহ থানার উপপরিদর্শক টিটু নাথ জানান, চিকিৎসক কুরবান আলী হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত মোট আসামি ১২ জন। এর মধ্যে মামলা দায়েরের পর এজাহারভুক্ত আসামি সাফায়াত, শাহ আমানত ওরফে সংগ্রাম ও মোহাম্মদ সাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ওই তিনজন এখন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি।
কুরবান আলী হত্যা মামলাটি গত ৩০ এপ্রিল পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়ের নির্দেশে নগর ডিবির (পশ্চিম) বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে জানান আকবর শাহ থানার উপপরিদর্শক টিটু নাথ।
মামলাটির বর্তমান তদন্ত মহানগর ডিবির (পশ্চিম) উপপরিদর্শক রাজিব হোসেন। তিনি আজ সোমবার বলেন, ‘উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে মামলার প্রধান আসামি গোলাম রসূল নিশান এলাকায় সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে মহড়া দিচ্ছে বলে মামলার বাদী অভিযোগ করেছেন। গতকাল (রবিবার) রাতে মামলার বাদী আলী রেজাকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে বেশ কিছুক্ষণ অবস্থান করেছি। মামলার এজাহারভুক্ত ১২ জন আসামির মধ্যে ছয়জন এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। কিশোর গ্যাং বলা হলেও আসামিদের বয়স ১৮ থেকে ৩২ বছর।’
গত ৫ এপ্রিল নগরের আকবর শাহ থানার পশ্চিম ফিরোজ শাহ আবাসিক এলাকায় দন্ত চিকিৎসক কুরবান আলীকে ইট দিয়ে আঘাত করা হয়। তার মাদরাসাপড়ুয়া ছেলে আলী রেজাকে বাঁচাতে এসে তিনি হামলার শিকার হন। আলী রেজা ওই দিন সন্ধ্যায় ইফতারি কিনতে এসেছিলেন। এলাকায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নির্মাণাধীন একটি ভবন থেকে ১৫/২০ জন কিশোর গ্যাং সদস্য লাঠিসোঁটা নিয়ে আলী রেজার ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান চিকিৎসক বাবা। এ সময় কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্য ইট দিয়ে কুরবান আলীর মাথায় আঘাত করে। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১০ এপ্রিল চিকিৎসক কুরবান আলী মারা যান।
পুলিশ জানায়, কুরবান আলী ও তার ছেলের ওপর হামলায় সেদিন অংশ নিয়েছিল স্থানীয় কিশোর গ্যাং সদস্য মো. সামির, মো. রিয়াদ, সোহেল ওরফে বগা সোহেল, মো. আকিব, মো. অপূর্ব, মো. রাজু, মো. সাগর, মো. বাবু, মো. রাজু, মো. সংগ্রাম, মো. সাফায়েত ও মো. আকবর। তারা সবাই কুরবান আলী হত্যা মামলায় আসামি।
স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নিশানের অনুসারীরা পশ্চিম ফিরোজ শাহ আবাসিক এলাকার বিভিন্ন দোকান থেকে মাসিক চাঁদা, এ কে খান ও অলংকার মোড় এলাকায় বাস, অটোরিকশা ও টেম্পো থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে। ফিরোজ শাহ এলাকায় নির্মাণাধীন ১০ তলা ভবনকে ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করে নিশান। এলাকার উঠতি বয়সের কোনো কিশোর বা তরুণ তার কথা না শুনলে টর্চার সেলে ধরে এনে নির্যাতন করে তার অনুসারীরা।
উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে নিশান ও তার সহযোগীরা এলাকায় মহড়া দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আকবর শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম রব্বানী আজ সোমবার বিকেলে বলেন, আমার সতর্ক আছি। কিশোর গ্যাং নামে এলাকায় কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গোলাম রসুলের নিশান গ্রুপ ছাড়াও আকবর শাহ থানা এলাকায় রয়েছে আরও ৬টি কিশোর গ্যাং গ্রুপ। এসবের ‘নেতা’ হিসেবে আছেন বেলাল উদ্দিন জুয়েল, সাগর ওরফে লাল সাগর, মনোয়ারুল আলম ওরফে নোবেল, সোহেল ওরফে ঝোলা সোহেল, মো. মানিক ওরফে লাল মানিক এবং স্থানীয় কাউন্সিলর জহুরুল আলম ওরফের জসিম। তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তাদের প্রত্যেকের দলে ১৫/২০ জন করে সদস্য আছে। তাদের বিরুদ্ধে আকবর শাহ থানা এলাকায় চাঁদাবাজি, ইভটিজিং, জমি দখল, পাহাড় কাটার অভিযোগ রয়েছে। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।