এম আব্দুল মান্নান: জার্মানির CBS ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে বাংলাদেশের সাসটেইনেবল এবং সোশ্যাল রেসপনসেবলিটি বিষয়ক সেমিনারে গেস্ট লেকচারার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জার্মান দূতাবাসে নিযুক্ত বাংলাদেশি অনারারি কনস্যুলেট ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া।
জার্মানির কোলন সিটিতে অবস্থিত CBS ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলে গতকাল ২০ মার্চ সাসটেইনেবল এবং সোশ্যাল রেসপনসেবলিটি CBS ব্যাচেলর ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে ৬০ মিনিট প্রথম বারের মতো বাংলাদেশের উপর এবং বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়ন ও সোশ্যাল রেসপনসেবলিটি উক্ত সেমিনারে আলোচনা করা হয়।
সেমিনারে বর্তমান সরকার এযাবৎ ২ লক্ষ ১৫ হাজার ৮ শত ২৭টি বাড়ি সরকার ও শিল্প নতুন বিনিয়োগ পরিবেশ বান্ধব রক্ষা করে যাচ্ছেন সে বিষয়টি তুলে ধরা হয। সরকারের পাশাপাশি জার্মানির নন-প্রফিটেবল অরগানাইজেশনের মাধ্যমে শিক্ষা ও সাস্থ্য ক্ষেত্রে বিরাট ভুমিকা রেখে আসছে বিগত ১২ বছর যাবৎ। জার্মানীর হোকসুলে টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, মোনসেন গ্লাডবাক ও বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি গত ১৫ বছরের এডুকেশন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের কথা উল্লেখ করা হয় যা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের বাংলাদেশের সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে আসছে।
জার্মান নন-প্রফিটেবল সংগঠন “ফর বাংলাদেশ” স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং সহযোগিতা, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও মানবিক সহায়তা দিয়ে প্রতিটি অপারেশনের মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।
বিগত ১২ বছরে জার্মান, হাঙ্গেরি এবং নেদারল্যান্ডসের বিদেশি সনামধন্য মেডিক্যাল ডক্টর টিম নিয়ে বাংলাদেশে ২ হাজারেরও বেশি শিশু, বিকলঙ্গ রোগীদের বিনামূল্যে মানসম্মত চিকিৎসাসেবা দিয়ে এসেছে। ২০১৪ সালে যখন বিএনপি জামাত শিবিরের জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছিলো নির্বিচারে সাধারন মানুষকে পেট্রোল বোমা দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দগ্ধ করা হয়েছিলো তখন ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া তার নন-প্রফিটেবল প্রতিষ্ঠান ফর বাংলাদেশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন এবং এই আগুনে পুড়ে যাওয়া দগ্ধ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এছাড়াও ফর বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের মাধ্যমে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেডিকেল ও নার্সিং কলেজে দেওয়া অত্যাধুনিক আল্ট্রাসাউন্ড মেশিনের মাধ্যমে আজ শত শত রোগী মানসম্মত আধুনিক সেবা পাচ্ছেন। এছাড়াও রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় সেই সময়ে ইমারজেন্সী ভাবে জার্মানী থেকে প্লেনে করে ৩ টন ওষুধ বাংলাদেশে পাঠানো হয় এবং রোহিঙ্গাদের বিভিন্নভাবে খাদ্য, পানীয় সামগ্রী দিয়ে সার্বিক ভাবে সাহায্য করা হয়।
২০১২ সাল থেকে বিদেশি মেধাবী বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ টিম এনে বাংলাদেশের ডক্টরদের উন্নত মানের ট্রেনিং প্রদানসহ বিনা মূল্যে গরীব দুঃখী মানুষকে চিকিৎসা প্রদান করেন। এছাড়াও ১০২ টি আধুনিক বেড জার্মানী থেকে বাংলাদেশ মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটিতে প্রদান করা হয়, ২০১৩ সালে জার্মান থেকে হসপিটালের ডোনেশন করা হয় যা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব আরও শক্তিশালী করতে সহযোগীতা করে আসছে। এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশব্বিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হসপিটালে আলাদা বার্ন ইউনিট সহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য খাতে অবদান রেখে চলছে। ফর বাংলাদেশ এসোসিয়েশন, যার প্রতিষ্ঠাতা মেম্বার এবং সভাপতি বাংলাদেশ সরকারের অনারারি কনস্যুলেট ইঞ্জিনিয়ার হাসনাত মিয়া।
এই প্রতিষ্ঠানকে তিনি শুধু বাংলাদেশের সেবায় সীমাবদ্ধ রাখেননি আফ্রিকার জাঞ্জিবারে চার্চের ফাদারকে যখন দুর্বৃত্তরা এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো তখন তিনি ফর বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের মাধ্যমে জার্মানে এনে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করেন।
এছাড়াও ফর বাংলাদেশ এসোসিয়েশনের মাধ্যমে পাবনার জোড়া মাথা নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশু রাবেয়া, রোকেয়ার বিরল এবং ক্রিটিক্যাল এই সফল অপারেশন হয় যেখানে দীর্ঘ ৬ মাস ইউরোপে এই অপারেশন এ যুক্ত ছিলো ৩৪ জন সনামধন্য ইউরোপীয়ান প্রফেসর, ডক্টর এবং ফাইনাল অপারেশনটি ঢাকা সিএমএইচ এ করা হয় যেখানে ফাইনাল অপারেশন সহ যাবতীয় খরচ আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহেনা ছোট আপা সরাসরি যুক্ত থেকে বহন করেন। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে জোড়া মাথাবিশিষ্ট জমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়ার সফল চিকিৎসা শেষে CMH থেকে মুজিব শতবর্ষে গৃহে প্রত্যাবর্তন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্ত ছিলেন শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশে সহকারী কোঅরডিনেট শবনম মিয়া কেয়া।
বিগত ১৩ বছরে বর্তমান সরকারের সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও সার্বিক অবকাঠামো উন্নয়ন তুলে ধরা হয়। নারী উন্নয়ন, শিল্প বিপ্লব, যুব সমাজের কর্মসংস্থানসহ আধুনিক নতুন আইসিটি পার্ক, শিল্প পার্কের মাধ্যমে সরাসরি ৮ লক্ষর ও বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এবং আগামীতে আরো বিভিন্ন খাত হতে যাচ্ছে, যেখানে পরিবেশ রক্ষা বিশেষ ভাবে সংরক্ষিত রেখে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির উপরে কথা হয়, যা বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যন্ত পৌঁছে যাচ্ছে। এই সরকারের আমলে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন বর্তমানে ২৮২৪ ডলার জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ও সংগ্রামের কথা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের একটি বাড়ি, একটি খামার, কমিউনিটি ক্লিনিক, দরিদ্র গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব প্রকল্প হিসেবে চালু করে এবং এযাবৎ ১ লক্ষর উপরে গৃহহীন মানুষ বাসস্থান সহ কৃষি জমি পেয়ে নিজেদেরকে এবং পরিবারকে দারিদ্র জীবন হতে মুক্তি করতে পেরেছে।
CBS ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ড.আনজা কার্লশাউস, প্রফেসর ড. টিম ব্রিটবার্থ, মিসেস মারলিন্ডা বেয়ারহেজ সহ সকল ছাত্র-ছাত্রী আশ্চর্য হন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন যখন তারা শোনেন এই সরকার ১.২ মিলিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়েছে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গৃহহীনদের জন্য আবাসন নিশ্চিত করার মতো সামাজিক ও মানবিক বোধ যা নাকি বর্তমান বিশ্বে বিরাট উদাহরণ হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এই সেমিনারে বাংলাদেশের প্রকৃতি এবং সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়। সোনালী আশ জুটের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার উপর শেখ হাসিনা সরকারের ভুমিকা তুলে ধরা হয় ও পরিবেশ রক্ষার ভুমিকার কথা উঠে আসে। বাংলাদেশের সোলার সিস্টেমের কথা তুলে ধরা হয় এবং শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন সাফল্য দেখানো হয়। অর্থনৈতিক সাসটেইনেবলটি এবং স্টার্ট আপের কথা তুলে ধরা হয় ও এই সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে গ্রামীণ জীবনের মেয়ে ও নারীদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন হয়।
সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন CBS ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস স্কুলের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. আনজা কার্লশাউস (বাংলাদেশ CBS একচেঞ্জ প্রোগ্রাম) সবাইকে স্বাগত জানান। এরপর প্রফেসর ড. টিম ব্রিটবার্থ, ডিপার্টমেন্ট হেড CBS গেস্ট লেকচারের পর আলোচনা পরিচালনা করেন। মিসেস মারলিন্ডা বেয়ারহেজ, ক্যাফে ইন্টারন্যাশনাল ড্রিংকো এন্ড এমডি প্রথম গেস্ট লেকচার হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।