নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং একটি মাদ্রাসার সাতজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে ২০ বছর যাবৎ শিক্ষকতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সচেতন মহল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দুই দফায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সনদপত্র চাইলেও সরবরাহ করছেন না শিক্ষকেরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে সনদপত্র সরবরাহ না করলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)।
অভিযুক্তরা হলেন—শ্রীপুর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন, শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন এবং পটকা দাখিল মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন, ভকেশনাল শাখার ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর কম্পিউটার মো. নাঈম মেহেদী, আইসিটি শিক্ষক মো. মকবুল হোসেন, ট্রেড শিক্ষক ড্রেস ম্যাকিং শিরিনা ও খাদিজা খাতুন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম এবং চলতি মাসে দ্বিতীয় অভিযোগ দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সনদ যাচাই করতে গত সপ্তাহে ইউএনও তাদেরকে নোটিশ দিয়েছেন। এতে বলা হয় তিন কার্যদিবসের মধ্যে সনদ জমা দিতে। কিন্তু আজ শনিবার পর্যন্ত সনদ জমা না দেওয়া আগামীকাল ফের নোটিশ দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা প্রায় ২০ বছর ধরে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের জাল সনদপত্র দিয়ে চাকরি নিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন। নিয়মিত তুলছেন সরকারি বেতনভাতা। প্রতিষ্ঠান থেকেও নিচ্ছেন বেসরকারি বেতনভাতা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি না মেনে এসব শিক্ষক নামসর্বস্ব অস্তিত্বহীন কম্পিউটার সেন্টার থেকে সনদপত্র সংগ্রহ করে চাকরিতে নিয়োগ পান। বিভিন্ন সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মহাপরিচালকের নিরীক্ষা শাখা থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর অডিট হয়েছে। অভিযুক্তরা বিভিন্ন ফাঁক ফোকর দিয়ে রয়ে গেছেন বহালতবিয়তে।
জানতে চাইলে শ্রীপুর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আলতাফ হোসেন জাল সনদের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি ২০০০ সালে ঢাকার ইব্রাহিমপুরে অবস্থিত বগুড়া নটট্রামসের একটি আঞ্চলিক শাখা থেকে সনদ অর্জন করেন। তিনি বিধি মোতাবেক চাকরি লাভ করেন। তাকে হয়রানি করতে এমন অভিযোগ করা হয়েছে।
শ্রীপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক মো. দেলোয়ার হোসেন ২০০১ সালে একটি নামসর্বস্ব সেলফ্ রিলায়েন্ট এডুকেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন থেকে সনদপত্র অর্জন করে চাকরি লাভ করেন। ওই সনদে প্রায় ১০ বছর চাকরি করছেন। সনদটি কাম্য যোগ্য না থাকায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চাকরিরত অবস্থায় প্রশিক্ষণ করেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন জাল সনদের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, তিনি বৈধ সনদপত্র অর্জন করে চাকরি করছেন।
পটকা দাখিল মাদ্রাসার আইসিটি শিক্ষক মো. সোহরাব হোসেন বলেন, ২০০১ সালে ঢাকার কচুখেতের স্টুডেন্ট কম্পিউটার সেন্টার থেকে সনদপত্র অর্জন করেন। পরবর্তীতে ওই সনদের যোগ্যতায় ২০০২ সালে চাকরি লাভ করে এমপিওভুক্ত হন।
নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখনকার সময়ে এ সনদপত্র বিধি মোতাবেক ছিল।
একই মাদ্রাসার ভকেশনাল শাখার আইসিটি শিক্ষক মকবুল হোসেন বলেন, ‘নটট্রামসের একটি শাখা থেকে সনদপত্র অর্জন করে ২০০৪ সালে চাকরি লাভ করে এমপিওভুক্ত হই।’ তার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই শাখার হয়তো এখন অস্তিত্ব নেই।
একই মাদ্রাসার অপর শিক্ষক ট্রেড ইনস্ট্রাক্টর কম্পিউটার নাঈম মেহেদী বলেন, ‘এ্যাপটেক নামক একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০০২ সালে সনদপত্র অর্জন করি। ২০০৪ সালে চাকরি লাভ করে এমপিওভুক্ত হই। বিধি মোতাবেক আমার নিয়োগ হয়েছে।’
অপর ট্রেড শিক্ষক শিরিনা জানান, ‘ময়মনসিংহের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে সনদপত্র অর্জন করে বিধি মোতাবেক ২০০৩ সালে চাকরি লাভ করি। ২০০৪ সালে আমি এমপিওভুক্ত হই।’
অভিযোগ রয়েছে একই মাদ্রাসার অপর ট্রেড শিক্ষক খাদিজা জাল সনদে চাকরি করছেন। তাঁর বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেনি।
পটকা দাখিল মাদ্রাসার সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযুক্ত পাঁচজন শিক্ষক আমার দায়িত্ব লাভের আগে নিয়োগ হয়েছে। কীভাবে তাদের নিয়োগ হয়েছে বিষয়টি জানা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি তদন্ত করছেন।’
শ্রীপুর ইউএনও সজীব আহমেদ বলেন, ‘জাল সনদে সাত শিক্ষকের শিক্ষকতার বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্ত হচ্ছে। অভিযুক্ত শিক্ষকগণকে তাদের সনদ জামা দিতে নোটিশ দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কেউ জমা দেয়নি। দ্বিতীয়বার নোটিশ করা হবে। তাতেও যদি অভিযুক্ত শিক্ষকরা সনদপত্র জমা না দেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।