জিমন্যাস্টিক্স এবং যোগব্যায়াম উভয়ই শারীরিক সুস্থতার কৌশল যা আজকাল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আগে মানুষ শারীরিক সুস্থতা বা স্বাস্থ্যকর জীবন সম্পর্কে ততটা সচেতন ছিল না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ শারীরিক সুস্থতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে থাকে এবং এও বুঝতে পারে যে শারীরিক সুস্থতা কেবল বাহ্যিক চেহারার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, এটি স্বাস্থ্যকর জীবনের সঙ্গেও যুক্ত।
এবার আলোচনার মূল বিন্দুতে আসা যাক, চূড়ান্ত বিতর্কটি হলো জিমন্যাস্টিক্স এবং যোগ সম্পর্কে। আমরা যোগকে একটি শিল্পরূপ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি এবং কিছু নিবন্ধ অনুসারে, এটি ৫০০০ বছর আগে প্রাচীন ভারতে উদ্ভাবিত হয়েছিল। বিতর্কের বিষয় যে, সনাতন বা বৌদ্ধ, প্রথম কারা এই ধরনের যোগব্যাআমের উদ্ভাবন করেছিলেন। যোগ ব্যায়ামের সুবিধাগুলি পর্যালোচনা করে ২০১৯ সালে ইউনেস্কো যোগকে অদম্য বিশ্ব হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছিল।
জিম সম্পর্কে আলোচনাইয় প্রথমেই বলা যায়, একজন ব্যক্তিকে ফিট রাখার জন্য বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ধরনের জিম সরঞ্জাম এবং প্রযুক্তি পাওয়া যায়। যোগ একটি প্রাচীন শিল্প যেখানে জিম একটি নতুন প্রজন্মের উদ্ভাবন। আজকাল মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন এসেছে। পুরুষ এবং মহিলা উভয়ের রূপচর্চার পণ্যের বিপণন এবং বিক্রয় গ্রাফের বৈচিত্র্য দেখে বোঝা যায়, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে বর্তমানে সবাই নিজেকে নিয়ে সচেতন।
যখন আমরা নিজেদের আকর্ষণীয় দেখানোর কথা কল্পনা করি, তখন আমাদের মাথায় প্রথম যে জিনিসটি আসে সেটা হলো ফিট থাকা বা একটি সুস্থ এবং সুঠাম দেহের অধিকারী হওয়া। জিমন্যাস্টিক্স এমন একটি কৌশল যা একজন ব্যক্তিকে তার ওজন ব্যবস্থাপনা বা তার পছন্দসই আকৃতি অনুযায়ী তার শরীর গড়ে তুলতে অনেকাংশেই সহায়তা করে। একজন জিমন্যাস্ট শারীরিকভাবে খুব শক্তিশালী হতে পারে যেখানে একজন যোগী খুবই নমনীয়। জিমন্যাস্টিক্স মানুষকে স্বাস্থ্যকর ডায়েট চার্টে আবদ্ধ করে যেখানে যোগব্যায়াম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো ডায়েট ছাড়াই মানসিক শান্তির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। যোগের মূল ধারণাটি আকর্ষণীয় থাকা নয়, এটি সুস্থ এবং রোগমুক্ত জীবনযাপন নিয়ে বেশি মনোযোগী।
শুধু এটা বললে ভুল হবে যে, যোগব্যায়ামই হলো একমাত্র পদ্ধতি যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে, যদিও যারা নিয়মিত জিম চালিয়ে যান তাদেরও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বেশ সক্রিয়। জিমন্যাস্টরা উচ্চমাত্রায় শর্করা বা কিছু খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন তবে যোগ বিশ্বাস করে যে মানুষের মন হলো প্রধান শক্তি, যা শরীরের প্রতিটি অঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। যোগব্যায়ামের বিশ্বাস অনুযায়ী, কেউ যদি ওজন বৃদ্ধির মানসিকতা নিয়ে যেকোনো খাদ্য গ্রহণ করে, তবে তার ওজন বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে এই বৃদ্ধি খাবারেরদোষে মোটেই নয়। ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ এইখানে দুশ্চিন্তার সঙ্গে খাদ্য গ্রহণ এবং খাবারের পর অনানন্দ প্রকাশ করা।
যোগ একটি শিল্প যা মানুষকে তাদের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং শারীরিক শক্তির সঙ্গে মানসিক শক্তি অর্জন করতে শেখায়, যেখানে জিম সম্পূর্ণরূপে শারীরিক শক্তির ওপর ভিত্তি করে। যদিও মানুষ ব্যায়ামের পরে সতেজ বোধ করে, তবুও মনের শান্তি জিমে প্রযোজ্য ধারণা নয়। আমরা বেশ কয়েকবার দুইজন জিমন্যাস্টিক মানুষের মধ্যে লড়াই উপভোগ করেছি কিন্তু দুইজন যোগীর মধ্যে লড়াইয়ের উদাহরণ রয়েছে খুবই বিরল। সহজ যুক্তি হলো, যোগব্যায়াম বিভিন্ন শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন এবং আসনের মাধ্যমে মানুষের মানসিক দুর্বলতা যেমন উদ্বেগ, আগ্রাসন, রাগের সমস্যা, ঔদ্ধত্য এবং ঈর্ষার ওপর কাজ করে যেখানে জিম মূলত শরীরের সুস্থতার উপর কাজ করে।
এই সব আলোচনা অনুসারে, আমরা এই উপসংহারে পৌঁছতে পারি যে, শারীরিক শক্তির জন্য, জিম এবং ব্যায়াম সহায়ক তবে শান্তিপূর্ণ মন এবং নমনীয় শারীরিক সুস্থতার সঙ্গে যোগব্যায়াম পছন্দের শিল্প রূপ হতে পারে। এই দুটি ফর্মই সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং প্রকৃতপক্ষে, এই ফর্মগুলির যেকোনো একটিতে জড়িত হওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়। আমরা দেখতে পাই যে ডাক্তাররা এখন সুস্থ থাকার জন্য এবং ব্যথা বা ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়ামের পরামর্শ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত গরম ও আর্দ্র গ্রীষ্মের মুখোমুখি হচ্ছি এবং একই সঙ্গে আমাদের খাদ্যাভ্যাসও ততটা উন্নত নয়। সুতরাং, সুস্থ থাকার জন্য, আমাদের অবশ্যই যে কোনো ধরনের শারীরিক ব্যায়ামের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে এবং সুস্থ রাখবে। আপনি পুরো জীবনে অনেক সম্পদ অর্জন করলেও চূড়ান্ত সম্পদ হলো আপনার স্বাস্থ্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।