দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে আজ থেকে প্রায় ৪ মাস আগে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত করোনার পরিস্থিতি পাল্টে গেছে একেবারেই। এখন দেশে করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি। যার ফলে দেশে এখন বিরাজ করছে করোনার আতঙ্ক। তবে এবার যেন আরো বেশি ভয়ের কারন হয়ে দাড়িয়েছে এই করোনা ভাইরাস। বিশেষ করে আগামী জুলাই মাসে এই করোনার পরিস্থিতি আরো বেশি ভয়ানক হবে বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলতি জুলাই মাসটি বাংলাদেশের জন্য একটা টাইমবোম।
কারণ এ মাসেই দেশে করোনা সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছার আভাস দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা। প্রাণঘাতি ভাইরাসটির জীবনচক্র অনুযায়ী, সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছার পর কিছুদিন সংক্রমণ স্থিতিশীল থাকে। এরপরই কমতে থাকে। তবে স্থিতিশীল সময়টায় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে না চললে পরিস্থিতি উল্টেও যেতে পারে। ইরানের ক্ষেত্রে যেটি হয়েছে।
করোনার প্রকোপ স্থিতিশীল হয়ে আসার পর ভাইরাসটি সংক্রমণ ক্ষমতা হারিয়েছে ধরে নিয়ে ইরানের মানুষেরা নিয়ন্ত্রিত জীবন থেকে বেরিয়ে আসে। এতে দেশটিতে দ্বিতীয়বারের মতো করোনা সংক্রমণ প্রবল হয়ে ওঠে। বাংলাদেশ বর্তমানে পার করছে সেই স্থিতিশীল সময়টা। এটাকে টাইমবোমের সঙ্গেই তুলনা করা যায়। কারণ বোমাটি হাতে নিয়ে নির্ধারিত একটা সময় পর্যন্ত স্থীর বসে থাকতে হবে, ওই সময়টা পার হওয়ার পর বোমাটি বিস্ফোরিত হওয়ার শক্তি হারাবে।
আর নির্ধারিত সময়ের আগে যদি এটা হাত ফসকে পড়ে যায় তো সবশেষ। করোনার সংক্রমণ রোধে পুরো জুলাই মাসটা টান টান সতর্কতা বজায়ের পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা। এই সময়টায় স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী সতর্কতা মেনে চলার উপরেই নির্ভর করছে কোভিট-১৯ এর সংক্রমণ বাড়া বা কমা। স্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সতর্কতায় গুরুত্ব না দিলেই দেশ নিশ্চিত মুখোমুখি হবে ভয়াবহ করোনা বিস্ফোরণের।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর জন্য জুলাই মাসটি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ভাইরাসটি ধরণ-গতিপ্রকৃতি ও জিনোম বিশ্লেষণ করে ধারণা করা হচ্ছে এ অঞ্চলে ্জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে মাসের শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাবে সংক্রমণ। এ সময়টায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কঠোর করা হলে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই করোনার প্রকোপ কমতে থাকবে।
করোনা মোকাবিলায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা দলের বিশেষ সদস্য ডা, ডেভিড ন্যাবারো এ পূর্বভাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, জুলাইয়ের শেষের দিকে হবে সর্বোচ্চ সংক্রমণ। এরপরই দক্ষিণ এশিয়াতে ধীরে ধীরে করোনার দাপট কমে আসবে। আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
শনিবার জেনেভায় এক বিবৃতি জিনোম বিশেষজ্ঞ ডা, ডেভিড ন্যাবারো এসব কথা বলেন। তার এই বিবৃতিতে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার বিশেষ কারণ আছে। আগস্টের শেষে বা সেপ্টেম্বরের শুরুতে করোনা নিয়ন্ত্রণের তিনি কঠোর সতর্কতার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এ শর্তটি পালন করা নিয়ে সংশয় ও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
জুলাই মাসের শেষেই বাংলাদেশে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। একদিকে মানুষজনের বাড়ি যাওয়া, অন্যদিকে কোরবানির পশু কেনা, পশু জ’/বা’/ই, মাংশ বিতরণ ও ব্যবস্থাপনার কারণে সতর্কতার পদক্ষেপ বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। উল্টো বরং সংক্রমণ এসময় আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞা
এক্ষেত্রে দেশের মানুষকে কিছুটা আশার কথা শোনালেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর। তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে দেখা গেছে, সংক্রমণের হার অনেকটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। এ থেকে আমরা ধারণ করতে পারি আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ কমে আসবে।
তিনি বলেন, অফিস আদালত, দোকানপাট ও গার্মেন্টস খোলার পর সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি আমরা গভীরভাবে নজরে রেখেছি।বিভিন্ন দেশের ঝুঁকির চুড়ান্ত পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত আমরা সংগ্রহ করেছি। এগুলোর সঙ্গে আমাদের দেশের করোনা সংক্রমণের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা দেখতে পাচ্ছি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণ একটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। ভাইরাসের রিপ্রোডাকশান রেট যাকে আর-নট বলা হয়, বাংলাদেশে গত দু সপ্তাহে এই হার ১-এর নিচে নেমে এসেছে, যেটা একটা পজিটিভ সাইন।
আইইডিসিআর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, করোনা আক্রান্তের হার নির্নয় করা হয় আর-নট কাউন্টিং পদ্ধতি দিয়ে।দুইসপ্তাহ আগেও বাংলাদেশের আরনট অনুযায়ী সংক্রমণের হার ছিল এক দশমিক শূন্য পাচ। এরপর তা কমতে থাকে, একসপ্তাহ আগেই সেটি ১-এর নিচে নেমে আসে।গত একসপ্তাহ ধরে সংক্রমণের হার অনেকটা স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশে আর নট-এর হিসাব অনুযায়ী, একজন আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে যেহেতু এখন একজনের কম লোক সংক্রমিত হচ্ছে, এটাকে আশাব্যাঞ্জক মনে করি।
এএসএম আলমগীর বলেন, তথ্যউপাত্ত বিশ্লেষণ করে আমরা যেটা দেখছি, সবগুলো নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা একসাথে কার্যকর রাখলে জুলাইয়ের শেষ নাগাদ সংক্রমণ কমতে শুরু করবে। ওই সময়ই আমাদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। করোনা সংক্রমণ কমতে থাকার এই সময়ে আমরা যদি সতর্কতামূলক পদক্ষেপ কঠোরভাবে পালন করতে না পারি, তাহলে ঈদুল আযহার সময় গরুর হাট এবং ঈদে বাড়ি যাওয়া-আসার প্রবণতা বাড়লে সংক্রমণের এই স্থিতাবস্থা আবার ঊর্ধ্বগতিতে রূপ নিতে পারে। আমরা একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে পড়ে যেতে পারি। ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে যদি কোরবানি ঈদে গরুর বাজার এবং মানুষের দল বেঁধে বাড়ি যাওয়া চলে- সেটা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তখন আমরা আরেকটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যেতে পারি। আবারো রোগীর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে।
বি্শ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একমত পোষণ করে আইইডিসিআর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জানান, করোনা নিয়ন্ত্রণের পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে এখন সতর্কতামূলক পদক্ষেপগুলো কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ওপর।
চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এই করোনা ভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের সব কয়টি দেশে। আর এটি এখন শুধু মহামারি নয় একেবারে লাগামহীন মহামারিতে পরিনীত হয়েছে। যার ফলে প্রতিদিনই বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ নতুন নতুন করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের শিকার হচ্ছে। আর সেই সাথে করোনা ভাইরাসে এখন পর্যন্ত প্রাণহানী ঘটেছে পাচঁ লাখেরও বেশি। আর সেই সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে প্রতিদিনই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।