জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল এলাকায় তিন বছর সাত মাস বয়সী ছেলে শিশু মাহিমকে হত্যার অভিযোগে বাবাসহ দুজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই পাষণ্ড বাবা জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করিয়ে মাহিমকে হত্যা করেছেন স্বীকার করে নেন।
বুধবার (১ জুলাই) বিকেলে কারওয়ান বাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি মো. কাইমুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইল এলাকা থেকে মঙ্গলবার রাতে শিশু মাহিমের বাবা জুলহাস (৩১) এবং প্রতিবেশী জুয়েলকে (২০) আটক করা হয়েছে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে শিশু মাহিমকে অপহরণ করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তার বাবাই তাকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবদে জানিয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, গত সোমবার (২৯ জুন) র্যাব-১০ এ হাজির হয়ে নিহত শিশু মাহিমের বাবা মো. জুলহাস (৩১) অভিযোগ দাখিল করেন যে, তার ছেলে মাহিমকে গত ২৭ জুন থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাকে কেউ হয়তোবা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। অপহরণের বিষয়ে ভুক্তভোগীর বাবা যাত্রাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছেন। এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল মঙ্গলবার র্যাব-১০ এর কোম্পানি কমান্ডার উপ-পরিচালক আলী রেজা রাব্বী ও স্কোয়াড কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল ডিএমপি ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানাধীন মাতুয়াইল মৃধাবাড়ি রাজমহল হোটেলের সামনে থেকে অপহরণের সঙ্গে জড়িত মো. জুয়েল ব্যাপারীকে (২০) গ্রেপ্তার করে।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক কাইমুজ্জামান খান জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুয়েল নিহত মাহিমকে অপহরণের কথা স্বীকার করেন। এবং এই অপহরণের সঙ্গে মাহিমের বাবা জুলহাস ওরফে ফারুকেরও সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানায়৷ এ কথা জানার পরই র্যাব জুলহাসকে মাতুয়াইল দরবার শরীফ মোড় এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে।পরবর্তীতে নিহত ওই শিশুর বাবা জুলহাস এবং অপর অপহরণকারী জুয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অপহরণ করে জুসের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করিয়ে মাহিমকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেন।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি জানান, নিহত মাহিমের বাবা জুলহাস আগে থেকেই যৌতুকের টাকা দাবিসহ বিদেশ যাওয়ার জন্য চার লাখ টাকা দাবি করে তার শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু টাকা না পেয়ে বিভিন্ন সময় স্ত্রীকে নির্যাতন করে আসছিল। পারিবারিক কলহ এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা না পেয়ে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে নিজ সন্তানকে হত্যার জন্য প্রতিবেশী জুয়েলকে নিয়ে পরিকল্পনা করে।
পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক, গত ২৬ জুন জুয়েল ঘুমের ওষুধ (৮টি ট্যাবলেট) ক্রয় করে জুলহাসকে দেয়। ২৭ জুন আনুমানিক সাড়ে ১২টায় জুয়েল মাহিমকে তার বাসার সামনে থেকে ফুসলিয়ে তার বাবার কাছে পূর্ব নির্ধারিত স্থান মাতুয়াইল বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে যায়। এরপর জুলহাস এবং জুয়েল ভিকটিমকে মাতুয়াইল বাসস্ট্যান্ড থেকে নিয়ে দেইল্লা, ডেমরা নির্জন এলাকায় নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে জুসের সঙ্গে ৮টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পান করায়। এরপর তারা মাহিমের মৃত্যু নিশ্চিত হলে ওইদিন সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী থানাধীন মাতুয়াইল, মৃধাবাড়ী ময়লার ডিপো সংলগ্ন গ্রিন মডেল টাউন এলাকায় কাশবনের ভেতর বালু চাপা দিয়ে রেখে নিজ বাড়িতে চলে যায়।
র্যাব-১০ এর আভিযানিক দল হত্যাকারীদের সঙ্গে নিয়ে তাদের দেখানো জায়গা থেকে শিশু মাহিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধারের পর মৃতদেহ যাত্রাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে র্যাব।
এই ঘটনায় যাত্রাবাড়ি থানায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।