জুমবাংলা ডেস্ক: আজকে বাঙালি মিষ্টির সুলুকসন্ধানের প্রচষ্টা করা যাক। বৈদিক যুগ থেকেই বাঙালির রান্নাঘরে দুধ আর দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার ঢুকে পড়েছিল। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের বিধান ছিল, দুধ কেটে গেলে তা পরিত্যাজ্য। তাহলে কী প্রাচীনকালে মিষ্টি ছিল না? অবশ্যই ছিল, আর তা তৈরি হত দুধের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে, তা থেকে ক্ষীর বানিয়ে।
যেমন আজও উত্তর ভারতে বা পশ্চিম ভারতে করা হয়ে থাকে। চিনির জোগান কোনো দিনই কম ছিল না এই জনপদে। এখানে চিনির উৎপাদন আর ব্যবহার এতটাই বেশি ছিল, চিনের ইতিহাস বলে: হিউ-য়েন-সাং এ দেশে আসার আগেই, চিনের সম্রাট তাই-হুং অনেক লোক পাঠিয়েছিলেন ‘ল্যু’ (ভারতবর্ষে) আর বিশেষ করে ‘মো-কি-তো’ (বাংলায়), চিনি তৈরির কৌশল জানার জন্য।
দ্বাদশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত আমরা সাহিত্যে সন্দেশের উল্লেখ অনেক বার পাই, কিন্তু তা তৈরি হত ক্ষীর আর খোয়াক্ষীর থেকে। আমাদের বাংলার নিজস্ব ছানার সন্দেশ সেই সময় আসেনি। এই ছানার সন্দেশ তৈরির ব্যাপারে পর্তুগিজদের অবদান অপরিসীম।
সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে বাংলায় ব্যবসা করতে এসে গঙ্গার আশেপাশে থেকে যাওয়া পর্তুগিজ বণিক আর তাদের বংশধরদের সংখ্যা প্রায় বিশ হাজার ছুঁয়ে যায়। এদের অনেকেই রন্ধনশিল্পে মধ্যম পাণ্ডব ছিলেন। নিজের দেশের রান্নার কৌশল এ দেশের খাবারের ওপর প্রয়োগ করে অসাধারণ কিছু পদ বানিয়ে গিয়েছেন তারা।
এ ভাবেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে ক্রমে তৈরি হয় ছানার সন্দেশ। ফরাসি পরিব্রাজক ফ্রাসোয়া বার্নিয়ের এ দেশে সপ্তদশ শতাব্দীতে ছিলেন। তিনি ফেরত গিয়ে ভ্রমণপঞ্জিতে লেখেন, বাংলাদেশে যে সব জায়গায় পর্তুগিজরা বাস করে, সেগুলো মিষ্টির জন্য বিখ্যাত হয়ে পড়েছে; পর্তুগিজদের মিষ্টি তৈরির স্বভাবনৈপুণ্যের ফলে এই সব জায়গায় মিষ্টির ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে।
বাঙালি মহলে ছানার তৈরি মিষ্টি জনপ্রিয়তা পায় ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। ইংরেজ শাসকদের কাছে তখন কলকাতার স্থান লন্ডনের পরেই ব্যবসায় আর দালালিতে বাঙালিরা বেজায় ফুলছে। শিক্ষিত বাঙালিরা বিভিন্ন রাজকার্যে যোগ দিচ্ছেন আর শহরে সচ্ছল শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বলে এক শ্রেণি জন্ম নিচ্ছে। সেই শ্রেণি এই নতুন পাওয়া ছানার সন্দেশে মজল, এবং বাঙালির চিরকালের স্বভাব আতিথেয়তার সঙ্গে এই খাদ্যটিকে মেশাল। বাঙালি সংস্কৃতির এক অপরিহার্য অঙ্গ হিসেবে সন্দেশ যোগ দিল তখন থেকেই।
সূত্র: আনন্দবাজার
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।