ডারপা (DARPA—Defense Advanced Research Projects Agency) যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটা সংস্থা, যাদের কাজ হলো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ব্রেকথ্রু প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করা। সহজ কথায়, ডারপা এমন সব গবেষণা ফান্ড করে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই গবেষণাগুলোর অনেকগুলোর মধ্যেই সাইফাই একটা ভাব থাকে। উচ্চাভিলাষী এই প্রজেক্টগুলোর বেশির ভাগই সফলতার মুখ দেখে না। কিন্তু যেগুলো দেখে, সেগুলো প্রায়ই বদলে দেয় পুরো দুনিয়াকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ইন্টারনেটের কথা। এটা ডারপার এক প্রজেক্টেরই আবিষ্কার।
ডারপা ২০১৬ সালের নভেম্বরে ইনসেক্ট অ্যালাইস নামের একটি প্রকল্পে ২৭ মিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ২২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। পোকাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে ২২৫ কোটি টাকা? অবাক করা ব্যাপার, তাই না? আসলে বন্ধুত্ব পাতানো এখানে মুখ্য বিষয় না। তিন প্রজাতির পোকা লিফহপার, হোয়াইটফ্লাই এবং এফিডকে ব্যবহার করে ভুট্টা ও টমেটোকে জেনেটিক্যালি মডিফাইড করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এই প্রকল্পে।
এখন একটু কারিগরি কথা বলতে হবে। জিন প্রকৌশল করার একটি জনপ্রিয় উপায় হচ্ছে ভাইরাসকে ব্যবহার করে নির্দিষ্ট জিন ঢুকিয়ে দেওয়া কোষের মধ্যে। এই বিশেষ ভাইরাসগুলোকে বলা হয় ইঞ্জিনিয়ারড ভাইরাল ভেক্টর। ভাইরাসের একটা বৈশিষ্ট্য হলো তারা তাদের আক্রান্ত কোষগুলোর জিনোমে নিজের জিনোমটা ঢুকিয়ে দিতে পারে। ভাইরাসকে বলতে পারেন প্রাকৃতিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার।
ডারপার প্রজেক্টের পোকাগুলো ফসলের খেতে বসবাস করে। এদের মাধ্যমে প্রাকৃতিকভাবেই সাধারণত অনেক রকমের ভাইরাস ছড়িয়ে থাকে ভুট্টাখেতে। ভাইরাসরা সাধারণত পোকাগুলোর ক্ষতি করে না, অনেক সময় ফসলেরও তেমন ক্ষতি করে না। রোগ তৈরি করে এমন ভাইরাসও আছে, তবে সংখ্যা অনেক কম। প্রকৃতির বেশির ভাগ ভাইরাসই নেহাত নিরীহভাবে বংশবৃদ্ধি করে ও জীবনধারণ করে।
প্রকল্পটি সফল করতে হলে এমন ভাইরাল ভেক্টর বানাতে হবে যারা এই পোকাগুলোর মাধ্যমে ভুট্টা ও টমেটোগাছে ছড়াতে পারে। আর ভাইরাল ভেক্টরগুলোকে গাছগুলোর জিনোমে পরিবর্তন আনতে সক্ষম হতে হবে। আমরা আমাদের পছন্দমতো জিন তাহলে এই পোকা ও ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারবে ফসলগুলোর মধ্যে।
এই প্রকল্পের সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার এখানেই। সাধারণত জিন প্রকৌশলের কাজ করা হয় ল্যাবরেটরিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের মধ্যে। ভাইরাল ভেক্টর প্রবেশ করানোর কাজ করে থাকে কোনো মানুষ। তাই জেনেটিক্যালি মডিফাইড উদ্ভিদ বিপুল সংখ্যায় তৈরি করতে লাগে যথেষ্ট সময় ও পরিশ্রম। ধরুন, যুক্তরাষ্ট্রের সব জায়গায় তাপমাত্রা বেড়ে গেল, প্রাকৃতিক কোনো ভুট্টার জাত টিকতে পারছে না আর। শুধু জেনেটিক্যালি মডিফাইড ভুট্টা টিকছে। বর্তমান প্রযুক্তিতে মার্কিন চাষিদের তখন নতুন করে এই জিএম জাতের ভুট্টার বীজ কিনতে ও চাষ করতে হবে।
কিন্তু ইনসেক্ট অ্যালাইস প্রজেক্ট সফল হলে ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। তখন মার্কিন সরকার তাপসহিষ্ণু জিন আছে এমন একটা ভাইরাল ভেক্টর তৈরি করবে। এরপর এই বিশেষ ভাইরাল ভেক্টর বহনকারী পোকাদের বিভিন্ন জায়গায় ছেড়ে দিলেই হলো। তারা আপনাআপনিই চারপাশের সব ভুট্টাগাছে তাপসহিষ্ণু জিন প্রবেশ করিয়ে দেবে। ফলে ভুট্টাচাষিরা ফলনজনিত কোনো ক্ষতির মুখোমুখি হবেন না। আর এই জেনেটিক পরিবর্তনটাও এমনভাবে করা হবে যে পরের প্রজন্মে তা যাবে না। সুতরাং চাষিরা সাধারণত যে জাত চাষ করেন, সেই জাতেরই বীজ পাবে পরের মৌসুমে।
এই প্রযুক্তি হাতে থাকলে খরা, বন্যা, অতিরিক্ত শীতল বা উষ্ম আবহাওয়ায়ও দেশব্যাপী ফসলের ফলন মার খাবে না। এটা হবে খাদ্যনিরাপত্তায় বিরাট এক অগ্রগতি। খাদ্যনিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ডারপার ভাষ্যমতে, তারা এই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই প্রজেক্টটি ফান্ড করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।