জুমবাংলা ডেস্ক : নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর মাদ্রাসাছাত্র ইয়াছিন আরাফাত অপু। অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেনি বেশী দূর। এরপর চাকরি নেন একটি সেলুনে। সেখান থেকে কয়েকজন বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারে মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস টিকটক ও লাইকি সম্পর্কে। এরপর টিকটক ও লাইকিতে নানা ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে অল্প দিনেই অর্জন করেন জনপ্রিয়তা। গড়ে তোলেন অনুসারীদের বিরাট বাহিনী। এরপরের গল্পটা সবারই জানা।
ঢাকার উত্তরায় ৬ নম্বর সেক্টরের একটি এলাকায় এক ব্যক্তিকে মারধরের ঘটনায় টিকটকার অপুকে (অপু ভাই) কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। এরপর ১৮ আগস্ট ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালতে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেন। কারাগার থেকে বের হয়েই শুক্রবার (২১ আগস্ট) তার নতুন ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রচার করেন অপু।
ভিডিওতে অপু ভাই বলেন, এটা আমার অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ‘অপু ভাই’। আর একটা কথা হলো, আমার আগে একটি চ্যানেল ছিল, ওটা নষ্ট হয়ে গেছে। কপালে ছিল না ওটা, সে কারণে নষ্ট হয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, আপনাদের মধ্যে আমার আসার উদ্দেশ্য হলো যে আমার একটা দুর্ঘটনা হয়েছে সবাই জানেন। আমার যদি ভুল হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে প্লিজ মাফ করবেন। ভুল হলে আমাকে কমেন্ট বক্সে জানাবেন। প্লিজ, গালাগাল করবেন না। আপনি গালাগাল করলে অন্যজন সাহস পাবে, এরপর আরো অনেকে গালাগাল করবে। এভাবে সমস্যা হয়। তাই একটা কথা… আমাকে একটু মাফ করে, ভুল চোখে না দেখে, যদি বলেন ‘তোমার ভুল হয়েছে, তুমি এ কাজ আর করবে না’, তাহলে আমি এ কাজ আর করব না। তবে গালাগালটা করবেন না। একটা কথা হলো কী, মানুষের লাইফে দুর্ঘটনা আসবেই।
অপু বলেন, ‘আমার লাইফে একটা অ্যাক্সিডেন্ট (দুর্ঘটনা) এসেছে। মানুষের জীবনে দুঃখ আসার সময় কাউকে বলে আসে না। এটা একটা দুর্ঘটনা। আমার লাইফেও একটা এসেছে। অ্যাক্সিডেন্টটা হয়েছে আমার কোনো ভুলের কারণে। ভুলটা যদি আপনারা আগে থেকে বলতেন, তাহলে আমি কখনোই করতাম না।’
এছাড়া অপু বলেন, ‘আর যে দুর্ঘটনা হয়েছে, এটা নিয়ে আমাকে অনেকে অনেক কিছু করল। বলল যে আমি কিশোর গ্যাং, এটা-সেটা আরো কত কী। আসলে আমি ঢাকাতে এসেছি নতুন। নতুন বলতে ২২-২৩ দিন হয়েছে। বাইশ-তেইশ দিনে আমার একটা কিশোর গ্যাং হয়ে যাবে? এটা তো মগের মুল্লুক নয়। গ্যাং হবে, এটা তো কোনো কথা হতে পারে না। আমি তো ওই এলাকা চিনিও না, আর ওই এলাকার মানুষ আমাকে চিনেও না। এটাই বলতে পারেন, আমি তো লাইকি ভিডিও করি, ইউটিউব ভিডিও করি, টিকটক ভিডিও করি, ওই হিসেবে আমার নাম জানে অপু, এটুকুই। আসলে কিছু থার্ডক্লাস মানুষ আছে, যারা ‘আল্ডায়’ (খোঁচায়)।’
অপু আরো বলেন, ‘আমি আপনাদের শিক্ষা দিতে আসিনি, আপনাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে এসেছি। আমি আপনাদের সন্তানের মতো, ছোট ভাইয়ের মতো।’
কিশোর গ্যাং প্রসঙ্গে অপু আরো বলেন, “কী করব ভাই, এটা আমার কপালের দোষ। আর কিশোর গ্যাং যে বলে আসলে হুদা (মিথ্যা)। কারণ, আমি এগুলো করতে পারব না। আমরা ক্যামেরার ভেতরে থাকি, বাইরে নয়। আমার চুলও তো ছোট করে ফেলেছি। এখন আর ‘আই আই’ (চুলে হাত দিয়ে অপুর বিশেষ একটি ভঙ্গি) এটা হবে না। যদি এটা করতে চাই, তাহলে হাতটা ওপরে থাকে আর চুলটা নিচে থাকে, তাহলে সুন্দর হয় না। চুল তো ছোট করে ফেলেছি, এখন থেকে ভালো ভালো ভিডিও করব। আর যদি ভিডিওতে কোনো ভুল হয়ে থাকে, প্লিজ হাতজোড় করে বলছি কমেন্ট বক্সে বলেন, তারপরও গালাগাল করবেন না।’
নিজের বাবার পরিচয় প্রসঙ্গে অপু বলেন, “ইদানীং মানুষ আমাকে অনেক ভুল ভাবছে একটা কারণ নিয়ে। কারণটা হলো সবাই বলছে, আমি মিথ্যা কথা বলছি। সবাই বলছে, আমার বাবা আছে, কিন্তু আমি স্বীকার করেছি আমার বাবা নেই। আসলে একটা কথা হলো, আমার যখন দেড় বা দুই বছর বয়স ছিল, তখন আমার মায়ের কাছ থেকে বাবার ব্যাপারে শুনেছি। আমার মাকে যখন বললাম, আমার বাবা কোথায়? ‘তখন মা বলল, ‘তোমার বাবা নেই।’ তখন আমি বললাম, সে কি মারা গেছে? তখন সে (মা) বলল, ‘না।’ একটা কথা হলো, আমার মা আমাকে ছোট থেকে বড় করেছে। আমি আমার বাবাকে চিনিও না, জানিও না, উনি কে। আমি ওই হিসেবে বলেছি যে আমার বাবা নেই।”
অপু বলেন, ‘আমি যদি বলি, আমার বাবা আছে, তাহলে দশজনে বলবে, তোমার বাবাকে সামনে আনো। তখন আমি কী উত্তরটা দেব? তার জন্যই আমি বলছি যে আমার কোনো বাবা নেই। ইদানীং আমি শুনছি, আমার বাবা সেজে কেউ একজন সবাইকে বলছেন, উনি আমাকে লালনপালন করেছেন, উনি নাকি আমার বাবা! এটা হলো একটা গুজব। এগুলোতে কেউ কিছু মনে করবে না। এটা সত্য নয়। আমার বাবা নেই। বাবাকে আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি। কী বলব… সবাই তো বুঝতে পারছেন সমস্যাটা কোথায়। বাবা না থেকেই… ঠিক আছে বাবা আছেন, তিনি পাশে থাকেন না, কোনো খোঁজখবর রাখেন না।’
অপু আরো বলেন, “আমার এখন ২০ বছর বয়স। এই বিশ বছরে আমার বাবাকে একনজর দেখিনি। আমি যখন একটা সমস্যায় পড়েছি, তখন (কেউ একজন) বলছেন যে আমার বাবা আছে। হ্যাঁ, আমার বাবা আছে, (কিন্তু) আমার সামনে তো আসেননি। কই, আমি তো একটা জায়গায় ছিলাম, একটা বন্দিখানায় ছিলাম। আমাকে তো (তিনি) দেখেননি। আমাকে গিয়ে বলেননি, ‘ধরো এক হাজার টাকা নাও। আমি তোমার বাবা, তুমি নিয়ে গিয়ে খরচ করো।’ কই, এমন তো বলেননি। তাহলে উনি কেমন বাবা আমার?”
অপু বলেন, ‘আর কী বলব, এটা আমার কপালের দোষ। আর কিশোর গ্যাঙের কথা বলছেন, এটা সত্য নয়। আমি ঢাকায় এসেছি নতুন, এটা সবাই জানে। তাহলে কি একটা মানুষের একটা তাড়াতাড়ি গ্যাং হবে, মারামারি করবে? ক্যামেরার ভেতরে যেমন আমার হাতকড়া লাগানো, বাইরেও একই হাতকড়া লাগানো। কারণ, আমাদের সবাই মোটামুটি চিনে। কেউ খারাপভাবে দেখে, কেউ ভালোভাবে দেখে। খারাপভাবে যারা দেখে, তাদের একটা কথা বলি, কোনো ভুল থাকলে আমাদের বলবেন। আমরা ওই কাজ আর জীবনেও করব না। আর যদি না বলেন, তাহলে আমরা শিক্ষা নিতে পারব না। আপনারা তো আমাদের শিক্ষা দেবেন। আমি আপনাদের ছেলের মতো, ভাইয়ের মতো।
সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে অপু বলেন, ‘আমি নোয়াখালীতে এসেছি এখন, আমি একটু অসুস্থ। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।