জুমবাংলা ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে ট্রলারে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন ভোলার চরফ্যাশন উপকূলের প্রায় ৫০ হাজার জেলে। কিন্তু জেলেদের জন্য নেই কোনো নিরাপত্তা সরঞ্জাম। ফলে সমুদ্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছরই বাড়ছে প্রাণহানির ঘটনা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলেদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। তবে মৎস্য বিভাগের দাবি, নিরাপত্তার জন্য জেলে ও ট্রলার মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে।
চরফ্যাশনের সামরাজ ও পশিচমের নজির মাঝির ঘাটের শত শত ট্রলার নিম্নচাপের প্রভাবে কিছুটা শিথিল হওয়া মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীসহ গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু এসব ট্রলারে নেই জেলেদের নিরাপত্তার জন্য কোনো ধরনের সরঞ্জাম। গভীর সাগরে মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করেন জেলেরা। তাই জীবিকার তাগিদে ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে গভীর সাগরে ট্রলারে মাছ শিকারে যান তারা।
চরফ্যাশন উপজেলার ফিশিং বোট শ্রমিক উপদেষ্টা নুর হোসেন মাঝি বলেন, ‘এখানে যে জেলেরা সমুদ্রে বোটগুলো নিয়ে যায়। যাবার পথে তাদের সঙ্গে নিরাপত্তার সরঞ্জাম আছে কি না সেগুলা তদারকি করা মৎস্য অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্ব। আর যেসব ট্রালার মালিক এই নিরাপত্তা সরঞ্জামগুলো দেবে না, তারা যেন মৎস্য শিকার করতে না পারে।’
মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তার দাবি, জেলেদের প্রশিক্ষণ, লাইফ জ্যাকেট, বয়াসহ অন্যান্য জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য মালিকদের বাধ্য করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা।
চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, ‘জেলেরা সাগরে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার অভাবে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এমনকি ডাকাতের সশস্ত্র হামলায় রক্তাক্ত জখম হয়। ক্ষতস্থানে সেলাই বা ব্যান্ডেজ এবং রক্তক্ষরণ বন্ধে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রত্যেক ট্রলারের জেলে কিংবা মাঝিকে স্বাস্থ্য বিভাগের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এটা বাস্তবায়ন হলে বহু জেলের অকাল মৃত্যু ঠেকানো যাবে।’
চরফ্যাশন সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, ‘জেলেদের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের মধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত জ্বালানি, বিকল্প নৌযান, ভাসমান জ্যাকেট বা স্যুট, টর্চ লাইট, ছুরি, হেলমেট, গ্লাভস, মুখোশ, কম্পাস, হুইসেল, কাইয়াক লাইট ও অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র। এছাড়া প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবার সরঞ্জাম (ফার্স্ট এইড কিট), ন্যূনতম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। যদি জেলেরাই বলে যে আমরা এগুলো ছাড়া সাগরে যাব না, তাহলে তো পাঠাতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আমি বলবো জেলেরাও সচেতন না। তবে আমরা বিভিন্ন ভাবে বোট মালিকদের সচেতন করতে চেষ্টা করি।’
গত ০৩ অগাস্ট ৩২ মাঝিমাল্লা নিয়ে সাগরে মাছ ধরা অবস্থায় চরফ্যাশনের পাঁচটি ট্রলার নদীতে প্রবল বাতাস ও তীব্র ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায়। ঢেউয়ের তোড়ে জেলেদের নিয়ে ট্রলারগুলো ডুবে যাওয়ায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে ২৫ জুন সামরাজ মাছ ঘাটের ট্রলার নিয়ে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায় ১৩ জেলে। একদিন পর অর্থাৎ ২৬ জুন সাগর উত্তাল থাকায় ট্রলারটি ডুবে যায়। এতে ১৩ জেলে নিখোঁজ হন। চার দিন পর (৩০ জুন) বঙ্গোপসাগর সাগর মোহনা থেকে মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাদের সবার বাড়ি চরফ্যাশন উপজেলার পূর্বমাদ্রাজ এলাকায়। এখন নিখোঁজ রয়েছেন দুই জেলে। যাদের সন্ধান আজও মেলেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।