জুমবাংলা ডেস্ক: ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাবেয়া জেগে উঠেছে, মাকে চিনতে পেরে কোলে উঠতে চেয়েছে সে। তবে তার বোন রোকেয়া এখনও অচেতন।
শনিবার তিন বছর বয়সী এই দুই বোনের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে সিএমএইচে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান চিকিৎসকরা।
গত ২ আগস্ট টানা ৩৩ ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে এই দুই বোনের জোড়া মাথা আলাদা করেন বাংলাদেশ ও হাঙ্গেরির একদল চিকিৎসক।
পাবনার চাটমোহরে রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে জন্ম নেয় বিরল দুই মানব সন্তান বিগত ১৬ জুলাই ২০১৬ সালে। যাদেরকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় Craniopagus twinsz কনজয়েন্ট টুইন অথবা মাথা জোড়া লাগানো জমজ বাচ্চা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বিকলতা। ২.৫ মিলিয়ন জীবিত জমজ বাচ্চাদের মধ্যে মাত্র একটি মাথা জোড়া লাগানো বাচ্চা জন্ম নেয়। প্রায় ৪০% মাথা জোড়া লাগানো শিশু মৃত অবস্থায় জন্ম নেয় এবং আরো এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। তবে শতকরা ২৫ ভাগ শিশু বেঁচে থাকে জমজ মাথা নিয়ে যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করবার সুযোগ থাকে। এটি একটি বিরল ধরনের অপারেশন। সারা বিশ্বেই খুব অল্প পরিমাণে হয়েছে। সাফল্যের হারও খুব বেশী নয়।
পাবনার একটি ক্লিনিকে শিক্ষক দম্পতির জন্ম নেয়া এই দুই শিশু এবং তার পিতা মাতাকে জন্মের পরই পেতে হয়েছিল সমাজের কুসংস্কারচ্ছন্নতার পরিচয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে তারা পত্র লিখেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের নিয়ে আসা হয়। এখানে সহৃদয়তার সাথে সমস্ত কর্মকান্ডে যোগ দেন ডাঃ হাবিব ই মিল্লাত এবং ডাঃ সামন্তলাল সেন সমন্বয়কের ভুমিকা পালন করেন। হাংগেরীর একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল এর ডাঃ গ্রেগ পাটাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে হাংগেরী জনগনের পক্ষ থেকে এদের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জটিল এই শল্য চিকিৎসা করা সম্ভব বলে মত দেন।
এই শল্য চিকিৎসাটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং এ বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে হাংগেরীতে ৪৮টি ছোট বড় সার্জারী সম্পন্ন হবার পর ২২ জুলাই তারিখে রাবেয়া এবং রোকেয়ার অস্ত্রপচারের সবচাইতে জটিল অংশ “জমজ মস্তিষ্ক’ আলাদাকরণের কাজটি সম্পন্নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় হাংগেরী থেকে তাদেরকে ঢাকা সিএমএইচ এ নিয়ে আসা হয়। সেনাপ্রধান সমস্ত সহযোগিতার জন্য ডিজিএমএস কে বিস্তারিত নির্দেশনা দেন।
বিগত ১ আগষ্ট পৃথকীকরণের জটিল অপারেশনটি শুরু হয়ে ৩৩ ঘন্টা ব্যাপী চলে এবং ২ আগষ্ট তা শেষ হয়। এই অস্ত্রপচারে হাংগেরী বিশেষজ্ঞদের সাথে সিএমএইচ এর নিউরো এ্যানেসথেসিওলজিস্টদের তত্ত্বাবধানে নিউরো ও প্লাষ্টিক সার্জনগণ সহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের প্রায় শতাধিক সার্জন ও এ্যানেসথেসিওলজিস্ট এই জটিল অপারেশনে কোন না কোনভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।
বর্তমানে তারা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকার পোষ্ট এ্যানেসথেটিক কেয়ার ইউনিট বা (PACU) তে অবস্থান করছে এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং শিশু হাসপাতালের নিউরো ইনটেনসিভিস্টদের তত্ত্বাবধানের রয়েছে। আজকে তাদের পৃথকীকরণের ৮ম দিন অতিবাহিত হচ্ছে।
এ ধরনের অপারেশন অত্যন্ত জটিল, সাফল্যের হারও খুব বেশী নয়। অপারেশনের পর এখানে তারা কিছু ঝুঁকি সত্ত্বেও স্থিতিশীল রয়েছে। কিন্তু মনে রাখা দরকার এধরনের অস্ত্রপচারে অপারেশনের পরবর্তী ঝুঁকি এবং জটিলতা অত্যন্ত বেশী।
উল্লেখ করা প্রয়োজন রাবেয়া রোকেয়ার আরও একটি অপারেশন (ক্রেনিও প্লাষ্টি) নির্ধারিত রয়েছে ২/৩ মাস পর। আমরা মনে করি, এধরনের চিকিৎসা সহায়তা প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও হাংগেরীর জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক আরও জোড়দার হবে। যে অন্ধকার অমানিসার মধ্যে রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতি পড়েছিলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় হাংগেরির একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল এর সহায়তায় তারা অপার সম্ভাবনা দেখতে পারছে।
সংবাদ সম্মেলনে ডাঃ হাবিব ই মিল্লাত এমপি, সামরিক চিকিৎসা সার্ভিস মহাপরিদপ্তর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ ফসিউর রহমান, সিএমএইচ ঢাকা’র কমান্ড্যান্ট ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তৌফিকুল হাসান সিদ্দিকী, শেখ হাসিনা বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক সামন্তলাল সেন, একশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল এর ডাঃ গ্রেগ পাটাকি (প্লাস্টিক সার্জন), ডাঃ এন্ড্র চোকে (নিউরো সার্জন); ডাঃ মার্সেল (পেডিয়াট্রিকস ইনটেন্সিভিস্ট) এবং রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা ও মা।
তাঁরা এ সংবাদ সম্মেলনে রাবেয়া – রোকেয়ার সফল অপারেশন সম্পর্কে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য প্রদান করেন এবং বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন।
সংবাদ সংম্মেলনে অন্যানের মাঝে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকার প্লাস্টিক নিউরো সার্জন এবং নিউরো এ্যানেসথেসিয়া এবং পেডিয়াট্রিক চিকিৎসক ও ইনটেনসিভিস্ট বৃন্দ। আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেখ হাসিনা বার্ণ ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট, শিশু হাসপাতাল এর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বৃন্দ এবং দেশী-বিদেশী প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার বিপুল সংখ্যক সাংবাদিকগণ। সূত্র: আইএসপিআর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।