জুমবাংলা ডেস্ক : বয়সের ভারে ন্যুব্জ আবু আলী মোল্লা। এক সময় দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হয়েছেন অসুস্থ। এখন কাজ-কর্ম করতে পারেন না। দেখলেই বোঝা যায় রোগ-শোকে ক্লান্ত তিনি।
তবে এই ক্লান্তির ছাপ আরও বহু গুণ বেড়ে গেছে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা সমাজসেবা অফিসে ধরণা দিতে দিতে।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের বোয়াইলমারী পশ্চিমপাড়া গ্রামের এই বৃদ্ধ অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জীবনে একটু সচ্ছলতার আশায় কয়েক বছর ধরেই স্থানীয় ইউপি সদস্যর কাছে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ধরণা দিয়েছেন।
কিন্তু আশ্বাস ছাড়া কিছুই মেলেনি। আবু আলী মোল্লার অভিযোগ ‘স্থানীয় ইউপি সদস্য ভাতার কার্ড করে দেয়ার জন্য তার কাছে ৫ হাজার টাকা চেয়েছেন’।
জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রে আবু আলী মোল্লার জন্ম তারিখ লেখা রয়েছে ১৯৪৭ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর। সে হিসাবে তার বয়স এখন ৭৩ বছর। সহায়-সম্বল বলতে বাড়ির ভিটে টুকু এবং মাঠে অল্প পরিমাণ ফসলি জমি। স্ত্রী কিডনী রোগে আক্রান্ত। তিন ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন অনেক আগেই। বড় ছেলে আলাদা বসবাস করেন।
দিনমজুর ছোট দুই ছেলের কাছে থাকেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। মাঝে মধ্যে টাকা জোগাড় করতে পারলে তবেই স্ত্রীকে ওষুধ খাওয়াতে পারেন আবু আলী মোল্লা।
তার এমন করুণ অবস্থার কারণে বারবার স্থানীয় ইউপি সদস্য রেজাউল করিমের কাছে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু ইউপি সদস্যের চাহিদা মাফিক টাকা দিতে না পারায় ভাগ্যে জোটেনি ভাতার কার্ড। নাম নেই তালিকায়।
উপায়ান্তর না পেয়ে পর পর ৪বার উপজেলা সমাজসেবা অফিসে গিয়েও সমাজসেবা কর্মকর্তার দেখা পাননি। দিশেহারা আবু আলী মোল্লা এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন একটি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য।
আবু আলী মোল্লা বলেন, মেম্বারের কাছে ভাতার কার্ডের কথা বললে তিনি আইডি কার্ড জমা নেন। এরপর তিনি ৫ হাজার টাকা চেয়েছিলেন। টাকা দিতে পারলে কী আমি ভাতার কার্ড চাইতাম? এখন অভাবের কারণে স্ত্রীকে ওষুধ খাওয়াতে পারছি না। একটা কার্ডের জন্য উপজেলায় সমাজসেবা অফিসেও গিয়েছি ৪বার। কিন্তু কর্মকর্তার দেখা পাইনি। তাহলে কী আমার ভাতার কার্ড হবে না?
ইউপি সদস্য রেজাউল করিম বলেন, আবু আলী মোল্লা আমার আত্মীয় হন। কখনোই তার কাছে টাকা চাইনি। তবে এবার তালিকায় নাম দিয়ে চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছি। আশা করছি আগামী অর্থবছরে তিনি (আবু আলী মোল্লা) বয়স্ক ভাতার কার্ড পাবেন।
তাহলে এতদিন তালিকায় নাম দিলেন না কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, সীমিত আকারে কার্ড বরাদ্দ পাওয়ায় এতদিন দেয়া সম্ভব হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বলেন, ওনার নাম চেয়ারম্যানদের তালিকায় আসা উচিত ছিল। একজন বৃদ্ধ মানুষের আমার অফিসে আসার কথাই না। এটা একটা দুঃখজনক ব্যাপার। আমি হয়তো সেই সময়গুলোতে মিটিংয়ে ছিলাম। তবে যেহেতু জানলাম সেহেতু তার ভাতার কার্ড করে দেয়ার ব্যবস্থা করব।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সরকার মোহাম্মদ রায়হান বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ভাতা কার্যক্রম করা সম্ভব হয়নি। তাই জরুরিভিত্তিতে চেয়ারম্যানদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছিল। তারা তালিকা দিয়েছেন। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
তবে ভাতার কার্ডের জন্য ইউপি সদস্য টাকা চেয়ে থাকলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর সমাজসেবা কর্মকর্তার অবহেলার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আমি ওই বৃদ্ধর কাছে শুনে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। সূত্র : যুগান্তর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।