ইফতেখারুল অনুপম, বাসস : টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুর উপজেলার খামারপাড়া গ্রামের ‘জয়বাংলা পাঠাগার’ প্রত্যন্ত অঞ্চলের পাঠকদের জ্ঞানচর্চার সুযোগ সৃষ্টি করেছে দিয়েছে। গ্রামের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, যুবকসহ বয়স্ক ব্যক্তিরাও বই, পত্রিকা পড়তে নিয়মিত আসছেন এই পাঠাগারে। হাতের কাছে বই পড়ার এই সুযোগ পেয়ে এলাকার মানুষ বেশ খুশি।
খামারপাড়া গ্রামের কৃতী সন্তান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিজ্ঞানী একুশে পদকপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুন নবী এবং তার স্ত্রী জিনাত নবী এই পাঠাগারটি স্থাপন করেছেন। গত ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পাঠাগারটি উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পর থেকেই পাঠাগারটিতে বিভিন্ন বয়সের পাঠকের সমাগম হচ্ছে। প্রত্যন্ত গ্রামে বই পড়ার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় শুধু এই গ্রাম নয়, আশপাশের গ্রাম থেকেও মানুষ এখানে আসছেন বই ও পত্রিকা পড়তে।
নূরুন নবী চার দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুন নবী মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছেন। নিপুণ সমর কৌশলের জন্য তাঁকে মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর ‘দ্য ব্রেইন’ বলা হতো। তিনি বিগত ২০২০ সালে একুশে পদক পান।
সরেজমিনে দেখা যায়, কয়েকজন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী বই পড়ছেন, বই দেখছেন। বয়স্ক কয়েকজন পত্রিকা পড়ছেন। ভূঞাপুর ইব্রাহিম খাঁ কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল বাকি বলেন, তার বাড়ি পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ি গ্রামে। বই পড়ার ইচ্ছে থাকলেও গ্রামে বই পেতেন না। জয় বাংলা পাঠাগার চালু হওয়ায় এখন নিয়মিত বই পড়তে পারছেন। খামারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মীম আক্তার বলেন, এই পাঠাগার চালু হওয়ার পর নিয়মিত বই বাড়িতে নিয়ে পড়তে পারছেন। একই স্কুলের ছাত্র মোহাম্মদ লিমন জানান, এই পাঠাগারে মুক্তিযুদ্ধের অনেক বই রয়েছে। যা পড়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা ইতিহাস জানতে পারছেন। পাঠাগারে বসে পত্রিকা পড়ছিলেন খামারপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আবুল কালাম। তিনি বলেন, অবসর পেলে এখানে এসে পত্রিকা পড়েন। বইও পড়েন মাঝে-মধ্যে। গ্রামের মধ্যে জ্ঞানচর্চার সুন্দর একটি জায়গা হয়েছে। এলাকার অনেক ছেলে-মেয়ে পাঠাগারমুখী হচ্ছে। তারা বই পড়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারছে। বালুবাড়ী গ্রামের ব্যবসায়ী আশিক মাহমুদ বলেন, পাঠাগারের পরিবেশ ভালো লাগে। তাই তিনি মাঝে-মধ্যেই বই পড়তে আসেন।
এই পাঠাগারের পরিচালক ও নূরুন নবীর ভাতিজা মিজানুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকলেও তার চাচা নূরুন নবীর ইচ্ছে ছিল এলাকায় কিছু করার। বিগত ২০২০ সালে একুশে পদক গ্রহণ করতে ঢাকা এসে তার স্বজনদের তিনি পাঠাগার স্থাপনের কথা জানান। পরে তার অর্থায়নে পৈতৃক জমিতে একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে গত ১৬ ডিসেম্বর এই পাঠাগারটি উদ্বোধন করা হয়। পাঠাগার ভবনের দ্বিতীয় তলা নির্মাণ হওয়ার পর সেখানে সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এ পাঠাগারকে শিক্ষা ও সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বলেন, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পাঠাগারটির কার্যক্রম চলে। বর্তমানে এখানে প্রায় ১ হাজার বই রয়েছে। এছাড়া বেশ কয়েকটি দৈনিক পত্রিকাও রাখা হয়। পাঠকেরা এখানে বসে বই পড়তে পারেন। আবার চাইলে এক সপ্তাহের জন্য বাড়িতে নিয়েও বই পড়ার সুযোগ রয়েছে।
গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের সংগঠক আবদুল সাত্তার খান বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে নূরুন নবী স্যার ও তার স্ত্রী গ্রামে জয়বাংলা পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেছেন। যা এ অঞ্চলে আলোড়ন জাগিয়েছে। তাদের মতো সফল মানুষেরা নিজ নিজ গ্রামে এ ধরনের উদ্যোগ নিলে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে সহায়ক হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।