হাবিপ্রবি প্রতিনিধি: শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর শুক্রবার (২ অক্টোবর) থেকে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) ছাত্র ও শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) দ্বিতীয় তলায় রুপালী ব্যাংক স্থানান্তরের বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে নিজেদের অভিমত প্রকাশের পাশাপাশি বিকল্প ব্যবস্থা না করেই টিএসসিতে ব্যাংক স্থাপন করে জায়গা সংকুচিত না করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেন।
এ ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার (৩ অক্টোবর) হাবিপ্রবির ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা রুপালী ব্যাংক যাতে টিএসসিতে স্থানান্তর করা না হয় সেজন্য মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক গতকাল রবিবার সকাল ১২টায় হাবিপ্রবির ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন হাবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. খালেদ হোসেইন, সহকারী প্রক্টর মোঃ শিহাবুল আওয়ালসহ হাবিপ্রবির ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ব্যাংক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রবিবার থেকে ব্যাংকের স্বাভাবিক কার্যক্রম টিএসসির দোতলায় শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আলোচনা সভা শেষে জানা যায়, প্রশাসনের পক্ষ থেকে টিএসসি দ্বিতীয় তলার বিকল্প হিসেবে বেশকিছু প্রস্তাব দেয়া হয় শিক্ষার্থীদের। এরমধ্যে রয়েছে ক্যাফেটেরিয়ার দ্বিতীয় তালায় অবস্থিত আইকিউএসি শাখার অফিস আগামী বছরের জুনের মধ্যে স্থানান্তর করে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে, পাশাপাশি নতুন একাডেমিক ভবনের নিচতলায় ‘শিক্ষার্থী কর্নার’ করে দেওয়া হবে সেইসাথে, প্রয়োজনে টিএসসি সম্প্রসারণ করে দেয়া হবে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও প্রশাসনকে পাল্টা দাবির কথা জানানো হয় উক্ত মিটিংয়ে।
এ বিষয়ে মারুফ হাসান বলেন, গতকাল রবিবার দুপুর ১২টায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাডভাইজার প্যানেল ও প্রক্টরিয়াল বডির সাথে টিএসসিতে ব্যাংক স্থানান্তরের বিষয়টি নিয়ে একটি আলোচনা সভায় বসি। এ সময় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের তিনটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে আমরা প্রশাসনকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়ে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করি। তন্মধ্যে প্রথমত, রুপালী ব্যাংক হাবিপ্রবি শাখাকে শিক্ষার্থীদের পরিবহন সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ১টি বড় বাস ও ১টি মাইক্রো দিতে হবে পাশাপাশি টিএসসির ৪র্থ ও ৫ম তলাকে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করে দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে টিএসসিতে লিফটের ব্যবস্থা করে দিতে হবে যা অতিদ্রুত সময়ের মাঝেই। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুষ্টু পরিবেশ বজায় রাখারও দাবি রাখা হয় উক্ত মিটিংয়ে।
মারুফ হাসান আরও জানান, তবে এখনও সেই আলোচনা সভা কিছুটা অমিমাংসিত রয়েছে। আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে আবারও এই বিষয়ে আলোচনায় বসবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যদি আমাদের দাবিগুলো মেনে নেয় তবে আমরা অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো। কিন্তু আমাদের দাবির বিপরীতে এবং শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ততে না আসলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা কঠোর আন্দোলনের ডাক দিবো। এছাড়া প্রশাসন যেহেতু আগের কথা রাখেনি কিংবা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে তাই এবার আমরা আমাদের দাবিগুলো এবং প্রশাসনের প্রস্তাবনার ব্যাপারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় ও রেজিস্ট্রার মহোদয়ের স্বাক্ষর সম্বলিত, একটি লিখিত গ্যাজেট আকারে চেয়েছি।
এদিকে রুপালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর এর ক্যাম্পাসে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড এর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্পোরেট শাখাটি অবস্থিত। যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরন পূর্বক শাখাটি হাবিপ্রবির প্রকৌশল ভবনের নিচতলা হতে টিএসসির ২য় তলায় স্থানান্তরের কাজ বেশ কিছুদিন হতে চলমান রয়েছে। সর্বশেষ গত ০১.১০.২০২০ ইং তারিখে পুরোনো ভবনে ব্যাংকিং কার্য সম্পাদন হয় এবং ০২.১০.২০২০ ইং তারিখ শুক্রবার সকাল হতে ব্যাংক শাখার আসবাবপত্র, কম্পিউটার সামগ্রী সহ নেটওয়ার্কিং এর টাওয়ার নতুন ভবনে (টিএসসি ২য় তলায়) স্থানান্তরের কাজ শুর হয়। ঐদিন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র শাখা স্থানান্তর কার্য বন্ধ রাখতে বলেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে গত ০৩.১০.২০২০ ইং শনিবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়াল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত মিটিং এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় রূপালী ব্যাংক এর হাবিপ্রবি কর্পোরেট শাখা ০৪.১০.২০২০ ইং রবিবার হতে টিএসসি’র ২য় তলায় ব্যাংকিং কার্যক্রম শুর করবে। সেই প্রেক্ষিতে, রবিবার সকাল হতে শাখা নতুন ভবনে (টিএসসিতে) স্থানান্তরের কাজ শুরু হয়ে চলমান রয়েছে এবং অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটে নাই।
অন্যদিকে এ বিষয়ে সার্বিক পরিস্থিতি জানতে হাবিপ্রবির ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমরান পারভেজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জুমবাংলাকে বলেন, শিক্ষার্থীদের আমরা তিনটি প্রস্তাব দিয়েছি পক্ষান্তরে তারাও আমাদের ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কিছু দাবি দাওয়া পেশ করেছে। আমরা এ বিষয়ে মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে যতটুকু দাবি বাস্তবায়ন করা যায় তা পরে নোটিশ আকারে জানিয়ে দিবো এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।