আন্তর্জাতিক ডেস্ক : টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে পুলিশ বেষ্টনীর মধ্যে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতেই গুলিতে খুন হয়েছেন ভারতের সাবেক এমপি আতিক আহমেদ ও তার ভাই আশরাফ আহমেদ।
বিবিসি জানায়, অপহরণের একটি মামলায় আতিক দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। হত্যা এবং হামলার একটি মামলায় গ্রেপ্তারের পর তাকে শনিবার রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ।
তখনই নাটকীয়ভাবে পুলিশের সামনে খুন করা হয় আতিক ও তার ভাইকে। মেডিকেল কলেজের কাছে দাঁড়িয়ে আতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন, সে সময় খুব কাছ থেকে পিস্তল বের করে তার মাথায় গুলি করা হয়। গুলিতে ঝাঁঝরা করা হয় তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভাইকেও।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গুলি করার পরপরই সাংবাদিকের ছদ্মবেশে থাকা তিনজন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাদের পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ঝাঁসিতে গত বৃহস্পতিবারই গুলি করে খুন করা হয়েছিল আতিকের ছেলে আসাদ আহমেদকে। তার একদিন পরই গুলিতে খুন হলেন আতিক।
সাংবাদিকের ভিড়ে আততায়ী লুকিয়ে থাকার বিষয়টি কেউ টের পায়নি বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে একজন পুলিশ ও একজন সাংবাদিক আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার আহমেদাবাদের জেল থেকে উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল আতিককে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, তাকে এনকাউন্টারে মেরে ফেলা হতে পারে। সেকারণে পুলিশের কাছে নিরাপত্তাও দাবি করেছিলেন।
গ্যাংস্টার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া আতিক আহমেদ সমাজবাদী পার্টির একজন বিধায়ক ছিলেন। পাঁচবারের বিধায়ক আতিক ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে এমপিও হয়েছিলেন।
অপহরণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর ২০১৯ সালে তার জেল হয়। অন্ততপক্ষে ১০০টি অপরাধমূলক মামলায় তার নাম জড়িয়েছিল। বহুজন সমাজ পার্টির বিধায়ক রাজু পাল খুন হন ২০০৫ সালে। সেই খুনে অভিযুক্ত ছিলেন আতিক। এর পাশাপাশি রাজুর আইনজীবী উমেশ পালকে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে খুনের ঘটনায়ও অভিযুক্ত ছিলেন তিনি।
দীর্ঘদিন গুজরাটের সবরমতী কেন্দ্রীয় জেলে বন্দি থাকলেও, গত ২৬ মার্চ উত্তর প্রদেশ পুলিশ আতিক আহমেদকে প্রয়াগরাজে নিয়ে যায় ২০০৬ সালের উমেশ পাল অপহরণ মামলায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য। ২৮ মার্চ আদালত আতিক ও তার দুই সহকারীকে অপহরণ মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল।
গত মাসে আতিক পুলিশের কাছ থেকে তার প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগে পিটিশন দিলেও সুপ্রিম কোর্ট এর শুনানি করতে অস্বীকৃতি জানায়।
উত্তর প্রদেশের ক্ষমতায় রয়েছে ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। বিরোধী দলগুলো সরকারের সমালোচনা করে বলেছে, নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতির কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে।
গত ছয় বছরে উত্তর প্রদেশে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত ১৮০ জনেরও বেশি মানুষ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। বিরোধীরা বলছে, গোটা রাজ্য জুড়ে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছে, পুলিশ বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে: উত্তর প্রদেশ সরকার অবশ্য এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।