আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোট। এরই মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে কমলা হ্যারিসের একদফা টিভি বিতর্ক হয়ে গেছে। দুজনই এখন পুরোদমে বিভিন্ন রাজ্যে প্রচারে ব্যস্ত। এমন পরিস্থিতিতে এক সমীক্ষায় এক হাজার ভোটারের সঙ্গে কথা বলে এনবিসি টিভি জানিয়েছে, ৪৮ শতাংশ মানুষ হ্যারিসকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাইছেন। পক্ষান্তরে ৪০ শতাংশ চাইছেন ট্রাম্পকে। গত জুলাইয়ে কমলা হ্যারিসকে চাইছিলেন ৩২ শতাংশ মানুষ। এবং ট্রাম্পকে ৩৮ শতাংশ। এনবিসি জানিয়েছে, জুলাই ও সেপ্টেম্বরের পরিস্থিতির মধ্যে বিশাল পার্থক্য দেখা দিয়েছে। এনবিসি নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, ১৩ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর এই সমীক্ষা করা হয়েছে।
এতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, মোটে তিন শতাংশ পয়েন্ট। এনবিসির মতো সিবিএসের জনমত সমীক্ষায়ও হ্যারিস ট্রাম্পের থেকে এগিয়ে আছেন। সেখানে হ্যারিস ৫২ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৮ শতাংশ ভোট পাবেন বলে জনমত পাওয়া গেছে। সিবিএসের দাবি, তাদের সমীক্ষায় ভুল হওয়ার সম্ভাবনা হলো দুই শতাংশ পয়েন্ট।
অর্থাৎ ট্রাম্প বা হ্যারিস দুই শতাংশ ভোট কমবেশি পেতে পারেন। সেপ্টেম্বরের ১৮ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে সিবিএসের চালানো জরিপে ৩১২৯ জন নিবন্ধিত ভোটার অংশ নেন। এর আগে আগস্টে করা জরিপে দুই প্রার্থীর জনসমর্থন ৫০-৫০ শতাংশ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু দুই প্রার্থীর ১০ সেপ্টেম্বরের বিতর্কের পর থেকেই হ্যারিসের জনসমর্থন বাড়তে শুরু করে বলে জরিপে ধারণা পাওয়া গেছে।
এসব ফলাফল সাম্প্রতিক অন্যান্য জাতীয় জরিপগুলোর সঙ্গেও ব্যাপকভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ- যেগুলোর মধ্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও জরিপ সংস্থা ইপসোসের যৌথ জরিপও আছে। সব জরিপেই আভাস পাওয়া গেছে, ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
তারপরও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ বহুল পরিচিত। নভেম্বরে নির্বাচনের আগের মাসটিতে সাধারণত কোনো প্রার্থীর অনাকাক্সিক্ষত এমন কোনো বিষয় প্রকাশ পায়, যা অন্য প্রার্থীর জয়ে অভাবিত ভূমিকা রাখে। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগেও জনমত জরিপে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন থেকে বেশ পিছিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। ভোটও পেয়েছিলেন প্রায় ৩০ লাখ কম। তবে শেষ পর্যন্ত ইলেক্টোরাল ভোটের হিসাব-নিকাশে জয়ী হন ট্রাম্প।
জরিপের উল্টো যে চিত্র ভোটে দেখা যেতে পারে, তা হলো- জরিপের বাইরে থাকা অনেক শে^তাঙ্গ ও কম শিক্ষিত ভোটারের সমর্থনে জয়ের মুকুট পরবেন ট্রাম্প। যে কোনো নির্বাচনে ভোটারদের বড় একটি অংশ শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেয়। এই ভোটারও ট্রাম্পের জয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন।
দোদুল্যমান রাজ্যগুলো ট্রাম্পের জন্য আরেক সুযোগ হতে পারে। জরিপে কমলা হ্যারিস এগিয়ে থাকলেও অনেক রাজ্যে ট্রাম্প সামান্য ব্যবধানে পিছিয়ে রয়েছেন। যদি শেষ মুহূর্তে ভোটাররা মত বদলে ফেলেন তবে ইলেক্টোরাল ভোটের মারপ্যাঁচে ওয়াশিংটনের মসনদে আবার বসতে পারেন ট্রাম্প।
৭৮ বছর বয়সি ট্রাম্প এই নিয়ে পরপর তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়ছেন। তিনি একবার জিতেছেন, গতবার বাইডেনের কাছে হেরেছেন। তারপর তিনি হারের জন্য জালিয়াতির অভিযোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে মামলাও চলছে এবং এবার প্রেসিডেন্ট না হতে পারলে আর নির্বাচনে লড়বেন না বলেও ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে ৫৯ বছর বয়সি হ্যারিস এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট। হ্যারিস জিতলে আমেরিকার ২৪৮ বছরের ইতিহাসে তিনিই হবেন প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তার সম্পর্কে এনবিসিকে কুক পলিটিক্যাল রিপোর্টের সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যামি ওয়ালটার বলেছেন, হ্যারিস লড়াইয়ের চরিত্রটা বদলে দিতে পেরেছেন। আগে লড়াইটা ছিল, বাইডেনের কাজের ওপর ভোট। এখন তা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ট্রাম্পের ওপর গণভোট।
এমনকি ট্রাম্পের নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির শতাধিক সাবেক আইনপ্রণেতাও তার বিরুদ্ধে গিয়েছেন। ওই ১১১ জন সাবেক আইনপ্রণেতা তাদের দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবর্তে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। সেখানে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ট্রাম্পের যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তারা। কমলা হ্যারিসের নির্বাচনি প্রচারণা দফতর চিঠিটি প্রকাশ করেছে। সেখানে স্বাক্ষর রয়েছে এই ১১১ জন সাবেক কংগ্রেসম্যানের। ওই এমপিরাও চিঠিটির বিষয়বস্তু এবং নিজেদের নাম স্বাক্ষরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা বিশ্বাস করি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিকে অবশ্যই একজন নীতিবান, গম্ভীর এবং অবিচল নেতা হতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যেসব গুণাবলী এবং সক্ষমতা প্রয়োজন, সেসব কমলা হ্যারিসের রয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেই।
অন্যদিকে প্রথম বিতর্কে নিজের অবস্থান শক্ত করা হ্যারিস ফের বিতর্কের মুখোমুখি হতে আহ্বানও জানিয়েছেন ট্রাম্পকে। যদিও ট্রাম্প আর বিতর্কে বসতে রাজি নন। প্রচারে হ্যারিস ট্রাম্প উভয়ই উভয়কে কথার আক্রমণ করে যাচ্ছেন সমানতালে। বোঝাই যাচ্ছে দুজনই মরিয়া হোয়াইট হাউসের দখল পেতে। ট্রাম্প শেষ চেষ্টা হিসেবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য যা করা লাগে করবেন। অপরদিকে হুট করেই বাইডেনের পরিবর্তে লড়াইয়ের ময়দানে উপনীত হওয়া কমলা হ্যারিস দিনকে দিন জনসমর্থন অর্জন করছেন বলেই দেখানো হচ্ছে মার্কিন মিডিয়াগুলোয়। তার প্রতি এই জনসমর্থন সংক্রান্ত সমীক্ষা আদতে ঠিক কি না তা বোঝা যাবে নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।