স্পোর্টস ডেস্ক: নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে অবশেষে গতকাল পর্দা নেমেছে টোকিও অলিম্পিক গেমসের। গেমসটি সফল কিনা ব্যর্থ তার পর্যালোচনা হয়ত বেশ কিছুদিন ধরেই চলবে। কিন্তু প্রথমবারের মত দর্শকবিহীন আয়োজনে গেমসের আকর্ষন যে অনেকাংশেই কমেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু তারপরেও শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যেই সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়াযজ্ঞ আয়োজন করতে পেরেই তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন আয়োজকরা।
এবারের গেমসে বরাবরের মত বেশ কিছু বড় তারকা অংশগ্রহণ করলেও এই তালিকা থেকে অনেকেই আবার আগেভাগেই নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। অংশ নেয়া তারকাদের মধ্যে সবাই সফল হতে পারেননি। বিশেষ করে টেনিসে শীর্ষ খেলোয়াড়দের ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মত।
টোকিও গেমসে শীর্ষ তারকাদের ব্যর্থতার তালিকা :
নোভাক জকোভিচ :
অস্ট্রেলিয়ান ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন ও উইম্বলডনের শিরোপা ঝুলিতে পড়ে অনেকটাই ফেবারিট হিসেবে টোকিও গেসমে কোর্টে নেমেছিলেন বিশ্বের শীর্ষ তারকা নোভাক জকোভিচ। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে তার সামনে গোল্ডেন স্ল্যাম জয়েরও একটা সম্ভাবনা তৈরী হয়েছিল। একই বছর চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম ও অলিম্পিকের স্বর্ণ জয় করলে গোল্ডেন স্ল্যাম জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করা যায়। চার বছর অন্তর এই সুযোগ আসাটা একজন খেলোয়াড়ের জন্য মোটেই সহজ বিষয় নয়। কিন্তু সেমিফাইনালে জার্মানীর আলেক্সান্দার জেভরেভের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নিতে হয় সার্বিয়ান তারকাকে। স্প্যানিশ পাবলো কারেনো বুস্তার কাছে পরাজিত হয়ে শেষ পর্যন্ত ব্রোঞ্জ পদকও পাওয়া হয়নি জকোর। মিক্সড ডাবলসের সেমিফাইনালেও পরাজিত হয়ে হতাশ হতে হয়েছে। এরপর কাঁধের ইনজুরির কারনে তৃতীয় স্থান নির্ধারনী ম্যাচ থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়ায় খালি হাতেই ফিরতে হয় জকোভিচকে।
কোহেই উচিমুরা :
জাপানীজ জিমন্যাস্ট উচিমুরা অলিম্পিক ক্যারিয়ারের রুপকথার গল্পের পরিসমাপ্তি ঘটাতেই এবারের গেমসে অংশ নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম দিনেই হরাইজোন্টাল বার থেকে পিছলে পড়ে ফাইনালে খেলতে ব্যর্থ হন। ৩২ বছর বয়সী এই অভিজ্ঞ জিমন্যাস্ট ২০১২ সালের লন্ডন ও ২০১৬ সালে রিও গেমসে অল-এ্যারাউন্ড শিরোপা জয় করেছিলেন। কিন্তু এবার প্রথম দিনেই তাকে ব্যর্থকার দায়ভার মাথায় নিয়ে বিদায় নিতে হয়েছে। স্বাগতিক হিসেবে উচিমুরার উপর পুরোপুরি ভরসা ছিল আয়োজকদের। যদিও অলিম্পিকের পরে নয় আগামী অক্টোবরে জাপানে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের পর অবসরের ইঙ্গিত দিয়েছেন উচিমুরা।
নোয়া লাইলেস :
২০০ মিটাওে ২০১৯ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের স্বর্ণের সাথে আরো একটি কৃতিত্ব যোগ করার লক্ষ্য নিয়েই জাপানে খেলতে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের স্প্রিন্টার নোয়া লাইলেস। জ্যামাইকান গতিমানব উইসাইন বোল্ট পরবর্তী যুগে যুক্তরাষ্ট্রকে ট্র্যাক এন্ড ফিল্ডে আধিপত্য উপহার দেয়াই তার মূল লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ২৪ বছর বয়সী ফ্লোরিডার এই স্প্রিান্টার ২০০ মিটারে তার সেরাটা দিতে পারেননি। কোনমতে সেমিফাইনালে বিদায়ের শঙ্কা থেকে বেঁচে গেলেও ফাইনালে কানাডার আন্দ্রে ডি গ্রাসের কাছে পরাস্ত হতে হয় তাকে।
ট্রেভন ব্রোমেল :
লাইলেসের সতীর্থ ব্রোমেল ১০০ মিটারে ফেবারিট হিসেবেই ট্র্যাকে নেমেছিলেন। চলতি বছর জুলাইয়ে ফ্লোরিডায় বিশ্ব সেরা টাইমিং ৯.৭৭ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ২৬ বছর বয়সী এই স্প্রিন্টার টোকিওতে এসে ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ন করেছেণ। প্রথম হিটেই ১০.০৫ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন। এরপর সেমিফাইনালে ১০.০০ সেকেন্ড সময় নেয়ায় প্রতিযোগিতায় থেকেই ছিটকে পড়েন।
নাওমি ওসাকা :
মানসিক অবসাদগ্রস্থতা কাটিয়ে কোর্টে ফিরলেও জাপানীজ এই শীর্ষ টেনিস তারকতা নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। করোনা মহামারীতে এক বছর গেমস পিছিয়ে যাওয়ায় এখানে খেলা নিয়েই তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত অংশ নিলেও তৃতীয় রাউন্ডে রৌপ্য পদক জয়ী চেক প্রজাতন্ত্রের মার্কেটা ভোনড্রুসোভার কাছে সরাসরি সেটে পরাজিত হয়ে বিদায় নেন। অলিম্পিকের জাপানের হয়ে টেনিসে প্রথম স্বর্ণ পদক জয়ের চাপটা আর শেষ পর্যন্ত নিতে পারেননি অভিষিক্ত ওসাকা।
কেনটো মোমোটা :
ব্যাডমিন্টন তারকা মোমোটাকে নিয়ে স্বাগতিদের প্রত্যাশার পারদটা উর্ধ্বমূখী ছিল। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ২৬ বছর বয়সী এই শাটলার ২০১৯ সালে রেকর্ড ১১ বারের বিশ্ব শিরোপা জয় করার পর শীর্ষ বাছাই হিসেবেই টোকিওতে খেলতে নেমেছিলেন। কিন্তু প্রথম রাউন্ডেই অবাছাই এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে পরাজিত হয়ে গেমস থেকে বিদায় নিতে হয়। পরাজয়ের পর তিনি স্বীকার করেছেন অলিম্পিকের প্রত্যাশার চাপটা তিনি নিতে পারেননি।
যুক্তরাষ্ট্রের নারী ফুটবল দল :
বিশ্বকাপ জয়ী যুক্তরাষ্ট্রের নারী দলের সামনে সুযোগ ছিল অলিম্পিকে স্বর্ণ জয় করে ডাবল শিরোপা দখলের। সে লক্ষ্যে ২০১৬ রিও গেমসে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় নেয়া মার্কিনীরা ফেবারিট হিসেবেই মাঠে নেমেছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই সুইডেনের কাছে ৩-০ গোলে পরাজিত হয়ে ৪৪ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড থেকে বেরিয়ে আসা তারা। তারকা খেলোয়াড় মেগান র্যাপিনো, কার্লি লয়েড ও এ্যালেক্স মরগানরা এরপর আর কিছুই করে দেখাতে পারেনি।
সেমিফাইনালে কানাডার কাছে ২০ বছর পর পরাজয়ের হতাশায় ডুবেছে র্যাপিনোর দল। এরপর অবশ্য অস্ট্রেলিয়াকে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে ব্রোঞ্জ পদক নিয়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সূত্র: বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।