রাশিয়ার সঙ্গে তেল বাণিজ্যের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশে ভারতের ওপর শুল্কের বিশাল বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমনকি, শুল্কের এই বিশাল বোঝা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য এখনও চাপ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও ভারতের মতোই তেল ও জ্বালানির স্বার্থে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়াতে যাচ্ছে পাকিস্তান।
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে এসসিও সম্মেলনের ফাঁকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। বৈঠকে দুই নেতাই দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, জ্বালানি, অবকাঠামো ও আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারের অঙ্গীকার করেছেন। একইসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তারা।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বাণিজ্য, জ্বালানি ও অবকাঠামোসহ নানা খাতে সহযোগিতা জোরদারের অঙ্গীকার করেছেন দুই নেতা।
সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের বাণিজ্য কমেছে উল্লেখ করে পুতিন বলেন, আমাদের দেখতে হবে কেন বাণিজ্য হ্রাস পেয়েছে এবং তা বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
একইসঙ্গে পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যার জন্য শোক প্রকাশ করে পুতিন আশা প্রকাশ করেন, শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বে দেশটি দ্রুত দুর্যোগ কাটিয়ে উঠবে।
জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছর পাকিস্তান রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানি করায় বাণিজ্যে নতুন গতি এসেছে। এসময় তিনি বেলারুশ, রাশিয়া, কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, আফগানিস্তান হয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত বাণিজ্য করিডরের গুরুত্বও তুলে ধরেন।
গত বছর আস্তানায় বৈঠকের পর থেকে কৃষি, লোহা-ইস্পাত, জ্বালানি ও পরিবহন খাতে দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি চুক্তি হয়েছে। জুলাইয়ে করাচির পাকিস্তান স্টিল মিলস পুনরুজ্জীবিত ও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেয় ইসলামাবাদ ও মস্কো।
এছাড়া পুতিনের আমন্ত্রণে মস্কো সফরের আগ্রহও প্রকাশ করেন শেহবাজ শরিফ। তিনি বলেন, অনেক বছর হয়ে গেছে, আমি রাশিয়া যাইনি। ফিরে গিয়ে পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে করতে চাই।
এসময় ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ককে সম্মান করে পাকিস্তান, তবে ইসলামাবাদও মস্কোর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়তে চায়।
এদিকে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, জ্বালানি তেল আমদানি ও বহুমুখী অংশীদারিত্বের প্রয়োজনেই রাশিয়ার দিকে ঝুঁকছে পাকিস্তান।
রাশিয়ার জন্যও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করা মানে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পাশাপাশি নিজেদের নতুন কৌশলগত অবস্থান তৈরি করা, যা বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য।
পাকিস্তানকে ‘ঐতিহ্যবাহী অংশীদার’ আখ্যা দিয়ে জাতিসংঘ ও পার্লামেন্টারি কূটনীতিতেও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার কথা বলেন পুতিন।
‘মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করেছে একদল, চব্বিশ দিয়ে আখের গোছাতে চায় আরেকদল’
বৈঠকে দুই নেতাই সম্মত হন, বৈশ্বিক সংকট ও নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জ্বালানি, অবকাঠামো, কৃষি ও পরিবহন খাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে উদ্যোগ বাড়ানো হবে। আর শেহবাজ শরিফও বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের এই অংশীদারিত্ব আঞ্চলিক অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।