জসিম উদ্দিন ইতি, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর এখন গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এলাকার অনেক কৃষক বিমানবন্দরের রানওয়েকে ধান শুকানোর কাজেও ব্যবহার করছে। অথচ বিমানবন্দরটি চালু থাকলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতের ব্যবসায়ীরাও এটির সুবিধা ভোগ করতে পারতো।
জেলার শিবগঞ্জ এলাকার মাদারগঞ্জে ১৯৪০ সালে ৫৫০ একর জমিতে বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সরকারি ও সামরিক কাজে ব্যবহার করতে এটি প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলায় বিমানবন্দরের রানওয়েটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৭ সালে বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য সংস্কার করা হয়।
ফ্লাইট চালুর কিছুদিন যেতে না যেতেই লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে ১৯৭৯ সালের দিকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।। যাত্রী কম হওয়ার অভিযোগে বন্ধ করা বিমানবন্দরটি এক বছর পরেই ১৯৮০ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর উদ্যোগ নেয়ার কথা বলা হলেও ৪১ বছরে সেটি আর চালু হয়নি।
স্থানীয়রা মতে, আগামীর সমৃদ্ধ ঠাকুরগাঁও জেলার অন্যতম সারথি হতে পারে বিমানবন্দরটি। ঠাকুরগাঁও জেলায় শিল্প-কারখানা নির্মাণ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে বিমানবন্দরটি রাখতে পারে বড় ভূমিকা।
সরজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর এলাকার অনেক জমি চাষাবাদের আওতায় আনা হয়েছে। গোচারণ ভূমিতেও পরিণত করা হয়েছে অনেকটা অংশ। আর রানওয়েটি স্থানীয়রা ফসল মাড়াই ও ধান শুকানোর কাজে।
২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকা বিমানবন্দরটির অবকাঠামো ফেব্রুয়ারিতে পরিদর্শন করেছিলেন সরকারের সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
ওই সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকার মানুষ সঙ্গে থাকলে বিমানবন্দরটি এক বছরের মধ্যে চালু করা অসম্ভব কিছু নয়।
ছয় মাসের মধ্যে কারিগরি ত্রুটিগুলো মেরামতের কথাও জানিয়েছিলেন তিনি।
সেই আশ্বাসের পাঁচ বছর পার হলেও বিমানবন্দরটি চালুর বিষয়টি একটুও এগোয়নি বলে জানালেন ঠাকুরগাঁও জেলার সমাজকর্মী মাহাবুব আলম রুবেল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আলী নোমান আব্দুল্লাহ বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে। দেশ-বিদেশের অনেক দর্শনার্থী যোগাযোগব্যবস্থার ভালো মাধ্যম না পাওয়ায় বেশি সময় ব্যয় করে এত দূরে আসতে চান না। বিমানবন্দরটি চালু হলে অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থী ঠাকুরগাঁও জেলার এসব দর্শনীয় জায়গায় খুব কম সময়ে যেতে পারবে। বলা যেতে পারে, শুধু পরিত্যক্ত বিমানবন্দর চালু হচ্ছে না বলে ঠাকুরগাঁও জেলার সঙ্গে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও খুব বেশি সংযুক্ত হতে পারছেন না দেশ-বিদেশের পর্যটকরা।’
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক মতিউর মিঠু বলেন, ‘বিমানবন্দরটি ফের চালু করতে সর্বোচ্চ ১০০ কোটি টাকা লাগবে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জাতীয় বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এ বাজেট থেকে মাত্র ১০০ কোটি টাকা একটি জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১২০ জন যাত্রী দুটি ফ্লাইটে যাতায়াত করলে সরকার এটিকে লাভজনক অবস্থানে নিয়ে যেতে পারবে। ধীরে ধীরে যাত্রী আরও বাড়বে। দুই জেলায় এ পরিমাণ যাত্রী পাওয়া এখন অসম্ভব কিছু নয়।
‘এছাড়া বিমানবন্দরটি চালু হলে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের বাণিজ্যিক সম্পর্কও মজবুত হবে। অঞ্চলটি অর্থনৈতিকভাবে খুব অল্প সময়ে সফলতা লাভ করবে,’ যোগ করেন তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী জানান, বিমানবন্দরটি চালু করার জন্য তিনি সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন। সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সভা ও সমাবেশে এ অঞ্চলের মানুষের সুবিধার কথা বিবেচনা করে বিমানবন্দরটি চালুর দাবিও তুলেছেন।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঠাকুরগাঁও জেলার বিমানবন্দরটি ঐতিহ্যবাহী। এটি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা বাসীর দাবি রয়েছে। এ বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করা হচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।