ড. প্রদীপ মাহবুব: ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা থাকলে তিনি দেশে ফিরে রাজনীতি করুন। হিরো আলম যদি নির্বাচন করতে পারেন তাহলে উনার ভয়টা কিসের? উনার রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকা অন্যায়ের না। কিন্তু দেশের রাজনীতিতে অবদান না থাকা সত্বেও শুধুমাত্র আমেরিকার দালালীর মাধ্যমে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন এ কেমন কথা? তিনি দেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে নিশ্চুপ থাকেন৷ তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকেন। তিনি ২০১৪ সালের ৫ মে হেফাজতের তান্ডবের সময় নিশ্চুপ থাকেন। তিনি ৭৫ এর ১৫ আগস্ট আর ২০০৪ এর ২১ শে আগস্ট নিয়ে নিশ্চুপ থাকেন। তিনি ১৯৯১ সাল প্রলয়ংকরী বন্যার সময় নিশ্চুপ থাকেন। তিনি ১৯৯৮ সালের বন্যার সময় নিশ্চুপ থাকেন। তিনি সিডোর-আইলার সময় নিশ্চুপ থাকেন। তিনি করোনার সময় নিশ্চুপ থাকেন। তিনি শুধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সরব থাকেন।
তিনি আইন লংঘন করে শতাধিক মানুষের পেটে লাত্থি দিয়েছেন। বিধিবহির্ভূতভাবে এমডির পদে আঁকড়ে ধরে ছিলেন। তিনি কর ফাঁকি দিয়েছেন। তিনি পারলে হাতে ধরে আমেরিকাকে চট্রগ্রামের বন্দর লিখে দিয়ে আসেন। তিনি সুযোগে পেছনের দরজা দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের জন্য নাগরিক শক্তি নামের দল গঠন করেন। কিন্তু পরে হাওয়া বদল বুঝতে পেরে রাজনীতির মাঠ থেকে পালিয়ে গেছেন।
তিনি এমডির পদে না থাকতে পেরে পদ্মাসেতুর অর্থ বন্ধ করিয়েছেন। তিনি নিজের দেশে কাউকে এক টাকা ফ্রি না দিলেও হিলারির নির্বাচনে শতকোটি টাকা উপহার দিয়েছেন। দেশের মানুষ বন্যা-ঘুর্নিঝড়-সাইক্লোনে না খেয়ে মরলেও কিস্তি না দিতে পারার অপরাধে হাতে হাতকড়া পরিয়েছেন।
বলে থাকেন, গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানা ৮৪ লক্ষ গ্রাহকের। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো এই ৮৪ লক্ষ গ্রাহকের মধ্যে ৮৪ জনও উনার মতো আরাম আয়েশে জীবন যাপন করেন না৷ ভোগ বিলাস করেন না। দেশ বিদেশে ঘুরে বেড়ান না৷
মাইক্রো ক্রেডিট এর পর সামাজিক ব্যবসার নামে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। উনার উদ্ভাবিত ব্যবসার ধারণ অন্যান্য দেশে মার খেলেও আমাদের দেশে ভালোই চলেছে। নারীর ক্ষমতায়ন কতোটুকু হয়েছে সেটা একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যায়৷ আমাদের দেশে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা লোন নিয়ে কেউ বাড়িতে দালান তুলেননি৷ বরং কিস্তি পরিশোধ না করার অপরাধে বাড়ির টিন খুলে নিয়ে চলে গেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে কেউ কেউ গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছেন৷ আবার কেউ কেউ কিডনি বিক্রি করে দেনা শোধ করেছেন। বহু মানুষ পরিবার পরিজন ছেড়ে গ্রাম থেকে শহরে পালিয়ে গেছেন। এগুলো গল্প নয় সত্য। ক্ষমতায়নের নামে নব্য দাস প্রথা চালু করেছেন তিনি৷ এতোকিছুর পরেও উড়ে এসে জুড়ে বসবেন ক্ষমতার মসনদে৷ তিনি নোবেল জিতেছেন। এটা নিশ্চিতভাবে উনার যোগ্যতাতেই জিতেছেন।
কিন্তু নোবেল জেতা আর রাজনীতি করা এক ব্যাপার নয়৷ যদি তাই হতো তাহলে তিনি দেশের বিপদে পাশে দাঁড়াতেন। এগুলো না করে বিদেশে বিদেশে ঘুরে তিনি নিজের পাল্লা ভারী করেছেন। সম্পর্ক গড়েছেন। সে সম্পর্কের জোরে তিনি এখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নে দেখেন৷ আমেরিকা যেহেতু অনেককিছু নির্ধারণ করে সেহেতু তিনি ভাগ্যক্রমে ক্ষমতার মসনদে বসতেই পারেন। তবে ইতিহাস যেমন মীরজাফর, খোন্দকার মোস্তাক আর জিয়াউর রহমানদের ক্ষমা করে না, ঠিক আমেরিকার দালালী করে আফগানিস্তানের মতো কারজাই সরকার হলেও ভবিষ্যতে এমনিভাবেই পরিচিতি পাবেন।
তিনি রাজনীতি করতেই পারেন৷ এটা উনার অধিকার৷ যদি তাই করেন তাহলে উনাকে সঠিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনীতি করতে হবে। মোড়লদের জোরে ক্ষমতায় এসে তিনি আরাম আয়েশে দেশকে পশ্চিমা বিশ্ব বানাবেন ব্যাপারটি তেমন নাও ঘটতে পারে।
অনেকেই বলবেন উনার অনেক ফ্যান ফলোয়ার আছেন। জন সমর্থন আছে। যদি থেকেই থাকে তাহলে তিনি রাজনীতিতে আসুন৷ দল গঠন করুন। মাঠে নামুন৷ ক্ষেতে খামারে দৌড়ান। কিছুদিন দৌড়ালে বুঝবেন যে রাজনীতি কি জিনিস! ফ্যান ফলোয়ার হিরো আলমেরও আছে। আবার কিছু ফ্যান ফলোয়ার জুনায়েদ সাকিরও আছে৷
রাজনীতিতে উনাকে স্বাগতম। কিন্তু তার আগে পরিষ্কার করবেন কী দেশের দুর্যোগ উনি কোথায় থাকেন? অশান্তির সময় শান্তির পায়রা সম্ভবত নীল আকাশে উড়ে বেড়ান।
ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস আদালতের রায়ে হেরে কর পরিশোধ করেছেন। এতে স্পষ্টত বোঝা যায় যে তিনি অন্যায় করেছেন। এখন অনেকেই বলবেন দেশে আর কেই অন্যায় করে না? উত্তর হচ্ছে, অন্যের অন্যায় করা উনার অন্যায় কর এক ব্যাপার নয়। তিনি নিজের স্বার্থের জন্য দেশের যতো বড় ক্ষতি তিনি করতে চেয়েছিলেন তার জবাবদিহিতা তিনি নিশ্চয়ই দিবেন। কেননা তিনি আইনের ঊর্ধ্বে নন।
আমি যেকোনও ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে। দেশে যারা অন্যায় করছেন তাদের প্রত্যেকের বিচার হউক। আর যাদের বিচার হচ্ছে না বিধায় উনাকে আইনের আওতায় আনা যাবে না এমন যুক্তিও সমর্থন করি না৷
লেখক: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী গবেষক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।