জুমবাংলা ডেস্ক: মাছের আঁশ সাধারণত উচ্ছিষ্ট বা বর্জ্য হিসেবে বিবেচনা করে ফেলে দেওয়া হয়। সেই আঁশ এখন দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে শুরু করেছে, যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবছর ২০০ কোটি টাকার বেশি মাছের আঁশ রপ্তানি করা হচ্ছে। দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিবেদক সজীব আহমেদ-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেড় দশক আগে মাছের আঁশ রপ্তানি শুরু হয়।
এখন শুধু চীনেই প্রতিবছর প্রায় তিন হাজার টন আঁশ রপ্তানি করা হচ্ছে। চীন আবার মাছের আঁশ জাপান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে রপ্তানি করে। মাছের আঁশ থেকে কোলাজেন ও জেলাটিন পাওয়া যায়, যা ওষুধ, প্রসাধনসামগ্রী ও সম্পূরক খাবার তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
মাছের আঁশ বিদেশে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হওয়ায় অনেক উদ্যোক্তাই এখন মাছের আঁশ সংগ্রহ ব্যবসা শুরু করেছেন। দেশে কয়েক হাজার মানুষ আঁশ সংগ্রহের কাজে যুক্ত। ফলে দেশের প্রায় প্রতিটি বাজারে মাছ কাটার পর আঁশ সংগ্রহ করার প্রবণতাও বেড়েছে।
গত রবিবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাছ কাটার পেশায় নিয়োজিতদের মধ্যে সবাই মাছ কাটার পর আঁশ সংগ্রহ করে রাখছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, পরে আঁশগুলো ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন তাঁরা। সাধারণত মাসের শুরুর দিকে তাঁরা ৬০ টাকা কেজি দরে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। কেউ কেউ মাস শেষে ৮০ থেকে ১০০ কেজির মতো আঁশও বিক্রি করছেন। এতেই মাস শেষে অনেকের বাড়তি আয় হয় পাঁচ-ছয় হাজার টাকা।
কারওয়ান বাজারে মাছ কাটার কাজ করেন আবু সালেক। তাঁর স্ত্রীও একই কাজ করেন। সালেক বলেন, ‘সাত বছর ধরে এখানে মাছ কাটছি। আগে মাছের আঁশের কোনো দাম ছিল না। মাছ কাটার পর এগুলো জমিয়ে ফেলে দিতাম। তবে কয়েক বছর ধরে আঁশ জমিয়ে শুকিয়ে রাখি। আগে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এখন ৬০ থেকে ৬৫ টাকা করে পাচ্ছি। ’ তিনি বলেন, ‘স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে মাছ কেটে আমি দিনে এক হাজার টাকা পাই। পাশাপাশি দিনে চার-পাঁচ কেজি করে মাছের আঁশও জমাতে পারছি। এতে মাস শেষে বাড়তি টাকা পাচ্ছি। ’
কারওয়ান বাজারে রেললাইনের পাশের বাজারে মাছ কাটা শেষে আঁশ পরিষ্কার করছিলেন অনু দাস। স্বামীসহ তিনি মাছ কাটার কাজ করেন। এক বছর ধরে এই কাজ করছেন তাঁরা।
অনু দাস বলেন, ‘গত মাসে আমরা দুজনে ৮০ কেজির মতো মাছের আঁশ বিক্রি করেছি। আর দিনে মাছ কেটে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মতো আয় করতে পারি। ’
২০০৬ সাল থেকে মাছের আঁশ নিয়ে পাইকারি ব্যবসা করছেন সোহেল রানা। তিনি প্রায় সারা দেশ থেকে আঁশ সংগ্রহ করেন। এরপর রপ্তানির জন্য পৌঁছে দেন চট্টগ্রাম বন্দরে। জানতে চাইলে সোহেল রানা বলেন, ‘আমি দেশের আট বিভাগ থেকেই মাছের আঁশ সংগ্রহ করি। প্রতিটি জেলায় আমার প্রতিনিধি আছেন। মাসে ১০ থেকে ১৭ টন পর্যন্ত মাছের আঁশ সংগ্রহ করে কেজিতে পাঁচ-ছয় টাকা লাভে রপ্তানির জন্য দিয়ে থাকি। ’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর দেশে মাছের চাহিদা ৩৮ লাখ টন। এসব মাছের অন্তত ৪০ শতাংশের বহিরাবরণই আবৃত থাকে রুপালি আঁশে। কাটার সময় এই আঁশ ছাড়ানো হয়। পুরো দেশের হিসাব ধরলে খুব কম ক্রেতাই বাজার থেকে মাছ কেটে বাসায় নেয়। তাই মাছের আঁশের পুরো অর্থমূল্য পাওয়া যায় না।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশি মাছের আঁশের বেশ চাহিদা রয়েছে বিশ্ববাজারে। আমাদের দেশে আঁশের প্রক্রিয়াজাতকারী কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। চীন আমাদের রপ্তানি করা আঁশ প্রক্রিয়াজাত করে জাপানসহ বিভিন্ন দেশে পাঠাচ্ছে। ’
আঁশ রপ্তানিতে সম্ভাবনা
দেশে আঁশ প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা গেলে রপ্তানি ব্যাপক হারে বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন তাদের সমীক্ষায় দেখিয়েছে, বর্তমানে রপ্তানিকারক কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন বিভিন্ন বাজার থেকে প্রায় ১০ টন করে মাছের আঁশ সংগ্রহ করে থাকে। এতে প্রতি মাসে প্রায় ৩০০ টন মাছের আঁশ রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা হয়। তবে স্থানীয় বাজারে পাওয়া মাছের আঁশ সম্পূর্ণরূপে রপ্তানি উপযোগী করা গেলে এর পরিমাণ মাসে দাঁড়াতে পারে ৭৫০ টনে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।