বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : একসময় প্লুটোকে বলা হতো নবম গ্রহ। এক যুগ আগে, বিজ্ঞানীরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্লুটোর গ্রহের খেতাব কেড়ে নিয়েছেন। কারণ একটা গ্রহ হতে গেলে আকার-আকৃতি বা ভরে ন্যূনতম যতটু হওয়া প্রয়োজন, প্লুটো তার ধারেকাছেও নেই। প্লুটোকে এখন বলা হয় বামন গ্রহ।
কিন্তু নবম গ্রহ ছাড়া সৌরজগৎ অসম্পূর্ণ। এমনটাই মনে করতেন জ্যোতির্বিদরা। কিন্তু নতুন একটা গবেষণা বাতিল করছে নবম গ্রহের ধারণা এবং বিলীন হচ্ছে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্বও।
নতুন এই গবেষণাটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজের পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক ক্যাথরিন ব্রাউন ও কেস ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হর্ষ মাথুর।
তাঁরা সৌরজগতের শেষ প্রান্তের ওপর মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন, তারপর নতুন এই উপসংহারে পৌঁছেছেন। তাঁরা এ জন্য নিউটনীয় বলবিদ্যাকে সংশোধন করার কথাও বলছেন। এ বিষয়ক তাঁদের নতুন তত্ত্বের নাম দিয়েছেন মডিফায়েড নিউটনিয়ান মেকানিকস বা মন্ড (MOND)। তাঁদের এই তত্ত্ব সঠিক হলে জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান থেকে বাতিল হয়েছে বহুল আলোচিত ডার্ক ম্যাটার তত্ত্ব।
ডার্ক ম্যাটার তত্ত্ব দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞানীদের কাছে প্রহেলিকা হয়ে আছে। গোটা মহাবিশ্বের মোট যত বস্তু আছে, তার ৮৫ শতাংশই ডার্ক ম্যাটার। মাত্র ১৫ শতাংশ দৃশ্যমান বস্তু। অর্থাৎ মহাকাশে যত গ্যালাক্সি, গ্রহ, নক্ষত্র, ধুলাবালি দেখি, তা মহাবিশ্বের মোট পদার্থের মাত্র ১৫ শতাংশ।
জ্যোতিঃপদার্থবিদরা মনে করেন, প্রতিটি গ্যালাক্সিতেই আছে ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব।
যদি ডার্ক ম্যাটার না থাকত, আমাদের গ্যালাক্সি তার নক্ষত্র-গ্রহ-উপগ্রহ-গ্রহাণু নিয়ে যে বেগে ঘোরে, সেটা ভয়ংকর বিপর্যয় ডেকে আনত। কারণ ঘোরার বেগ এত বেশি যে, এর প্রভাবে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো ছিটকে মহাবিশ্বে হারিয়ে যেত। ডার্ক ম্যাটারের মহাকর্ষীয় টান এদেরকে একত্রে ধরে রাখে। অর্থাৎ গ্যালাক্সিতে গ্রহ-নক্ষত্রদের আটকে রাখার জন্য ডার্ক ম্যাটার আঠার মতো কাজ করে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন- দুমড়েমুচড়ে গেছে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি, কারণ জানালেন বিজ্ঞানীরা।
মন্ড বা সংশোধিত এই নিউটনীয় তত্ত্ব দিয়ে ডার্ক ম্যাটার ছাড়াই গ্যালাক্সিতে গ্রহ-নক্ষত্রগুলো একত্রে থাকে, ছুটে গিয়ে মহাবিশ্বে হারিয়ে যায় না, তার ব্যাখ্যা দিতে পারে। অর্থাৎ মন্ড থিওরি বাতিল করে দেয় ডার্ক ম্যাটারের অস্তিত্ব। যদি নিউটন-আইনস্টাইনের প্রতিষ্ঠিত ক্ল্যাসিক মহাকর্ষ পুরোপুরি ঠিক হয়, তাহলে মহাবিশ্বে-গ্যালাক্সিতে অবশ্যই ডার্ক ম্যাটারের উপস্থিতি থাকতে হবে। পরিবর্তে ক্যাথরিন ও হর্ষ বলছেন, গ্রেট রোটেশেনাল ভ্যালোসিটির কথা। মন্ড তত্ত্ব এই বেগের অধীনে গ্যালাক্সির ঘূর্ণন ব্যাখ্যা করতে পারে বেশ ভালোভাবেই।
কিন্তু সৌরজগতে সূর্যের চারপাশে গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর ঘূর্ণন কি ব্যাখ্যা করতে পারে এই তত্ত্ব?
হর্ষ মাথুর বলছেন, ‘মন্ড গ্যালাটিক স্কেলে বস্তুদের গতি ও ঘূর্ণনের ব্যাখ্যা বেশ ভালোভাবেই করতে পারে, আমরা আশা করিনি আউটার সোলার সিস্টেম বা সৌরজগতে বইরের নাক্ষত্রিক সিস্টেমেও এটা কাজ করবে।’
মজার ব্যাপার হলো, এই মন্ড তত্ত্বকে যদি ঠিকভাবে কাজ করতে হয়, নবম গ্রহ বা প্লানেট নাইনকেও তাহলে বাতিল করতে হবে। কুইপার বেল্টে যে অসামঞ্জস্যতা, সেটাকে মন্ড দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় কি না, সেটা খতিয়ে দেখেছিলেন হর্ষ ও ক্যাথেরিন। তাঁরা দেখেন, মন্ড তত্ত্ব এই ব্যাপারটিকে ভালোভাবেই ব্যাখ্যা করতে পারে। তবে ক্যাথরিন এখনই মন্ডকে শতভাগ নিঁখুত তত্ত্ব বলতে রাজি নন। তিনি মনে করেন, প্রচলিত অন্য তত্ত্বগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সত্যি বলে প্রমাণিত হতে পারে।
সূত্র : স্পেস ডট কম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।