তাকী জোবায়ের: প্রথাগত ও প্রচলিত সকল শৃংখল ভেঙে মানুষের কাছে গিয়েছেন, বুকে টেনে সাহস যুগিয়ে ভালোবাসায় আগলে রেখেছেন। পুলিশ সম্পর্কে সাধারণের ধারনা বদলে দেয়া ‘প্রমিথিউস’ যিনি, তিনি আর কেউ নন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কমিশনার হাবিবুর রহমান।
বাংলাদেশের মানুষ যেমন পৌরাণিক ফিনিক্স পাখির মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পেয়েছেন, তেমনি ঢাকাবাসী পেলেন একজন হাবিবুর রহমানকে। তাঁকে ডিএমপি’র ৩৬তম কমিশনার নিয়োগ দেওয়ায় বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল এই মহানগরের মানুষ যেন বুকে বল পেয়েছেন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই হাবিবুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন ‘মেসেজ টু কমিশনার’ সেবা চালু করার। এর মাধ্যমে সরাসরি মেসেজ কিংবা ভয়েসের মাধ্যমে অভিযোগ দেওয়া যাবে কমিশনারের কাছে। অভিযোগ প্রাপ্তির পরপরই তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ডিএমপি। ভুক্তভোগীরা থানায় বা ডিবিতে গিয়ে কাঙিক্ষত সেবা না পেলে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
নবনিযুক্ত কমিশনার হাবিবুর রহমানের এই ঘোষণায় প্রথম দিনেই স্বস্তি ফিরেছে ঢাকার সোয়া দুই কোটি জনগোষ্ঠীর মাঝে। তারা মনে করছেন, এই সেবা চালু হলে থানা কিংবা ডিবি পুলিশ আর সহজে কাউকে হয়রানি করার সুযোগ পাবে না। পাশাপাশি অপরাধীরাও দ্রুত আইনের আওতায় চলে আসবে।
ডিএমপি’র নবনিযুক্ত কমিশনারের প্রসঙ্গ নিয়ে জুমবাংলা’র কথা হয় ঢাকার বেশ কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে। এদেরই একজন বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক মো. মঈনুদ্দীন খান।
তিনি বলেন, ‘হাবিবুর রহমানকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি। তিনি আমাদের বাংলাদেশ পুলিশের গর্ব। তাঁকে ঢাকার কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়াটা সরকারের বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপগুলোর একটি। একদিকে তিনি যেমন অসম্ভব সৎ ও দায়িত্বশীল, ঠিক তেমনি অতীব মানবিক। তিনি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় ঢাকার শান্তি-শৃংখলায় গুণগত পরিবর্তন আসবে বলে আমার বিশ্বাস।’
হাবিবুর রহমানের আরেক গুণমুগ্ধ বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সময়ে ডিএমপি‘র কমিশনার হিসেবে হাবিবুর রহমানের নিয়োগ আমাদের জন্য অনেক স্বস্তির। বাংলাদেশ পুলিশে যে কয়জন সুদক্ষ কর্মকর্তা রয়েছেন তাদের মধ্যে হাবিবুর রহমান অন্যতম। অতীতেও আমরা দেখেছি তিনি তাঁর দায়িত্বগুলো সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করেছেন। যে কারণে আমরা যারা ঢাকায় বসবাস করছি তারা ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের বিষয়ে আরও বেশি আস্থাশীল হয়েছি।’
‘মেসেজ টু কমিশনার’ সেবা চালুর প্রসঙ্গে রাজধানীর মুগদার মায়াকানন এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘থানায় গেলে অনেক সময় আমরা কাঙিক্ষত সেবা পাই; অনেক সময় পাই না। ‘মেসেজ টু কমিশনার’ সেবাটি চালু হলে পুলিশের কাছ থেকে ঢাকার বাসিন্দাদের মানসম্মত সেবা পাওয়ার সুযোগ বাড়বে। নবনিযুক্ত কমিশনার যে উদ্যোগ নিয়েছেন সেটিকে আমরা সাধুবাদ জানাই।’
যা বললেন হাবিবুর রহমান
হাবিবুর রহমান ডিএমপি কমিশনার হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলন করেন ২ অক্টোবর। সেখানে ‘মেসেজ টু কমিশনার’ সেবার পাশিপাশি আরও কিছু কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেন তিনি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ করা গুরুত্বপূর্ণ। দেশে আদালত, বিচারিক প্রক্রিয়া আছে। যেসব অপরাধী জেল থেকে বের হচ্ছে তাদের কঠোর মনিটরিং করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অপরাধী ছোট হোক বড় হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
অপরাধের ধরন উল্লেখ করে ডিএমটি কমিশনার বলেন, ট্র্যাডিশনাল ক্রাইম থেকে ডিএমপির ক্রাইমের ধরন আলাদা। নতুন ধরনের ক্রাইমের অভিযোগ আসছে ডিএমপিতে। এর বড় কারণ প্রযুক্তি। সাইবার ক্রাইম মোকাবিলায় ডিএমপি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। ডিএমপির দক্ষতা ও যোগ্যতা অনেক বেশি। তাই ঢাকাকে নিরাপদ ও অপরাধমুক্ত করতে পুলিশ সব ব্যবস্থা নেবে। ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
চন্দ্রদিঘলিয়া থেকে মিন্টো রোড
১৯৬৭ সালে গোপালগঞ্জের চন্দ্রদিঘলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতোকোত্তর ডিগ্রিধারী এই পুলিশ কর্মকতা তাঁর নিজ কর্মক্ষেত্রে সততা, সাহসিকতা ও দক্ষতার স্বীকৃতিস্বরূপ তিন বার বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও দুই বার রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) পেয়েছেন।
হাবিবুর রহমান বিসিএস ১৭তম ব্যাচের পুলিশ কর্মকর্তা। পেশাগত জীবনে তিনি ডিএমপি সদরদপ্তরের ডিসি, ঢাকা জেলার এসপি, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, ট্যুরিস্ট পুলিশের প্রধান এবং পুলিশ সদরদপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন।
পুলিশের নানা সংস্কার কাজের পাশাপাশি নেতৃত্বসুলভ আচরণের জন্য তিনি বাহিনীতে প্রসংশিত। ক্রীড়া সংগঠক ছাড়াও মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার সুখ্যাতি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি মানব সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন কমিশনার হাবিবুর রহমান।
অবহেলিত বেদে সম্প্রদায় ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসনে নিরলস খেটে যাচ্ছেন তিনি। ব্যক্তি উদ্যোগ ও উত্তরণ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অবহেলিত বেদে ও হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছেন মানবতার আলো। তাদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য বুটিক, পার্লারসহ নানা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তোলা হয়েছে। তাদের সন্তানদের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মানসম্পন্ন শিক্ষালয়।
পেশাগত কাজের বাইরে সামাজিক কার্যক্রমের পাশাপাশি লেখালেখিসহ বিভিন্ন কাজে যুক্ত এই পুলিশ কর্মকর্তা। ২০১৮ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা তুলে ধরে একটি বই সম্পাদনা করেন হাবিবুর। যার নাম দেন ‘মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ’। এছাড়া দীর্ঘ ৮ বছরের গবেষণার মাধ্যমে ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশ করেন ‘ঠার: বেদে জনগোষ্ঠীর ভাষা’ নামক একটি অমূল্য গ্রন্থ।
কর্মদক্ষতার পাশাপাশি নেতৃত্বের গুণাবলি এবং নিখাঁদ মানবিকতার কারণেই ডিএমপি’র কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেলেন অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক হাবিবুর রহমান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।