তাকী জোবায়ের: বহুল আকাঙ্ক্ষিত ডিজিটাল ব্যাংকের খসড়া গাইডলাইন অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ।
আজ (১৪ জুন) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় এই অনুমোদন দেওয়া হয়।
ডিজিটাল ব্যাংকের মূলধন হবে ১২৫ কোটি টাকা। ব্যাংকের স্পন্সর ডিরেক্টর হতে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ধারণ করতে হবে। আর অনুমোদনের ৫ বছরের মধ্যে আইপিও’র মাধ্যমে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বর্তমান ঋণ খেলাপী কোন প্রতিষ্ঠান, কোম্পানী, ব্যাক্তি বা তার পরিবারের কোন সদস্য স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আবেদন করার যোগ্য হবেন না।
প্রচলিত ব্যাংকের মতো ডিজিটাল ব্যাংকগুলো সরাসরি কাউন্টারে গ্রাহকদের কোন সেবা প্রদান করতে পারবে না এবং এই ব্যাংকের কোন শাখা, উপশাখা, উইন্ডো, এজেন্ট বা নিজস্ব কোন এটিএম/সিডিএম/সিআরএম থাকতে পারবে না।
ডিজিটাল ব্যাংকগুলো প্রচলিত ব্যাংকের মতো জামানত রেখে ঋণ প্রদান করতে পারবে। তবে বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণ এবং মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে মেয়াদী ঋণ প্রদান করতে পারবে না।
আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমকে আরও সমৃদ্ধ করতে অনলাইন প্রযুক্তি নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অন্যান্য অগ্রসরমান প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে ডিজিটাল ব্যাংকগুলোকে।
খসড়া গাইডলাইনে বলা হয়েছে, ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৩১ এর আওতায় প্রতিটি ডিজিটাল ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংক হতে লাইসেন্স গ্রহণ করতে হবে এবং পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সিস্টেম রেগুলেশন, ২০১৪ এর বিধানাবলী অনুসরণ করতে হবে।
ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এর ধারা ১৩ এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ন্যূনতম ১২৫ (একশত পঁচিশ) কোটি টাকা অথবা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত পরিমাণ আদায়কৃত মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। এই ন্যূনতম আদায়কৃত মূলধন কেবলমাত্র সাধারণ শেয়ার দ্বারা সৃষ্ট হবে।
প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের প্রাথমিক ন্যূনতম আদায়কৃত মূলধন আবেদনকারী/উদ্যোক্তা/স্পন্সরগণ সরবরাহ করবেন। প্রত্যেক স্পন্সরের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের পরিমাণ হবে ৫০ (পঞ্চাশ) লক্ষ টাকা। ব্যাংক কোম্পানী আইন, ১৯৯১ এ নির্ধারিত সর্বোচ্চ শেয়ারধারণের পরিমাণ, সরকারের সাথে পরামর্শক্রমে, প্রয়োজনে শিথিল করা যেতে পারে বলে খসড়ায় বলা হয়েছে।
দৈনন্দিন লেনদেনের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য গ্রাহক অবহিত করুক বা না করুক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি নির্ভর একটি স্বয়ংক্রিয় বিবাদ মীমাংসা ব্যবস্থা (Dispute Resolution System) সর্বদা সক্রিয় রাখতে হবে।
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অস্থাবর সম্পত্তি জামানত রেজিস্ট্রিতে অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি গ্রাহকের সহায়ক জামানত হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে।
খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত ডিজিটাল ব্যাংকের শক্তিশালী, পরিশীলিত, পরিচালনাযোগ্য আইসিটি অবকাঠামো এবং অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম থাকতে হবে। এ ব্যবস্থায় কমপক্ষে টিয়ার থ্রি ডেটা সেন্টার (ডিসি) এবং ভিন্ন সিসমিক জোনে ডিজাস্টার রিকভারি সাইট (ডিআরএস) থাকতে হবে।
লেনদেনের জন্য কোন প্রকার স্পর্শযোগ্য ইনস্ট্রুমেন্ট ইস্যু করতে পারবে না। বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণ এবং মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পে মেয়াদী ঋণ ব্যতীত অন্যান্য খাতে অর্থায়ন বা ঋণ প্রদান করতে পারবে।
গ্রাহকের ঋণ-ঝুঁকি বিশ্লেষণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে প্রদত্ত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভিত্তিক বিকল্প ঋণ স্কোরিং (Alternative Credit Scoring) গাইডলাইন্স অনুসরণ করতে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংকের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) পরিমাণ স্পন্সরগণের সরবরাহকৃত প্রাথমিক মূলধনের তুলনায় কম হবে না।
ডিজিটাল ব্যাংকের উদ্যোক্তাগণের শেয়ার ব্যাংক ব্যবসায় আরম্ভের পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতীত হস্তান্তর করতে পারবেন না। ব্যাংক ব্যবসায় আরম্ভের তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোক্তাগণের শেয়ার হস্তান্তরের অনুমোদন প্রদান করবে না।
একই পরিবার থেকে ব্যাংক-কোম্পানী আইন, ১৯৯১ অনুযায়ী নির্দেশিত তিন জনের অধিক পরিচালক থাকতে পারবে না। পর্ষদে কমপক্ষে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ সদস্য প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, উদীয়মান প্রযুক্তি, সাইবার আইন ও রেগুলেশন বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে এবং অবশিষ্ট সদস্যগণ ব্যাংকিং, ই-কমার্স এবং ব্যাংকিং আইন ও রেগুলেশন ইত্যাদি বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন হতে হবে।
ডিজিটাল ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) প্রযুক্তিভিত্তিক ব্যাংকিং, ব্যাংকিং রেগুলেশন ও নির্দেশনা, ইত্যাদি বিষয়ে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতাসহ ব্যাংকিং পেশায় কমপক্ষে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সিইও নিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সময়ে সময়ে জারিকৃত রেগুলেশন ও নির্দেশনা পরিপালন করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে এই খসড়া নীতিমালায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।