জুমবাংলা ডেস্ক : প্রেমের ফাঁদে ফেলে রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলামের বিরুদ্ধে নবম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে বরখাস্ত করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সুমাইয়া পারভীন মেঘলা (২৭) নামে এক নারীর বাড়িতে আশ্রয় নেয় নির্যাতিতা। সেখানে সে আবারও গণধর্ষণের শিকার হয়। পুলিশ গণধর্ষণের সহযোগিতার অভিযোগে দুই নারীকে গ্রেফতার করেছে।
এ নিয়ে হারাগাছ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন)। ওই ছাত্রী এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, হারাগাছ এলাকায় দীর্ঘদিন চাকরি করেন মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম। সেই সুবাদে একটি মামলার সূত্র ধরে হারাগাছ থানার ময়নাকুঠি কচুটারি গ্রামের নবম শ্রেণিতে পড়া এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন ওই পুলিশ সদস্য।
প্রথম পরিচয়ের সময় তার ডাক নাম রাজু বলে জানায়। প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে গত শুক্রবার সকালে ওই ছাত্রীকে বেড়াতে নিয়ে যায় রায়হানুল। পরে পূর্বপরিচিত নগরীর বাহারকাছনা ক্যাদারেরপুল এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া সুমাইয়া পারভীন মেঘলার বাড়িতে ডেকে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করে।
পরে ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রী সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে এলে তার মা তাকে দেরি করে বাড়িতে ফেরার জন্য গালমন্দ করে তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। এ নিয়ে অভিমান করে ওই ছাত্রী রাত ৯টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পুনরায় সুমাইয়া পারভীন মেঘলার বাসায় এসে আশ্রয় চায়। সেখানে রাত্রীযাপন করে।
পরদিন শনিবার রাতে ওই বাসায় মেঘলা তার বান্ধবী সুরভী আখতার সমাপ্তির সহযোগিতায় দুজন খদ্দের ডেকে এনে টাকার বিনিময়ে ওই ছাত্রীকে তাদের হাতে তুলে দেয়। সেখানে সে গণধর্ষণের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে পরদিন রোববার ওই নির্যাতিতা ছাত্রী রায়হানুলকে খুঁজতে শহরে আসে। রায়হানুলকে না পেয়ে সে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রংপুর চিড়িয়াখানায় ঘুরতে থাকে। তাকে দেখে টহল পুলিশের সন্দেহ হলে পুলিশ ওই ছাত্রীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে তার ওপর নির্যাতনের ঘটনা পুলিশকে জানায়।
পুলিশ তাকে রোববার অনুমান রাত ১২টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করে। পরে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে থানায় মামলা রেকর্ড করেন।
পুলিশ রোববার রাত ৮টায় ভাড়াটিয়া বাসা থেকে সুমাইয়া পারভীন মেঘলাকে গ্রেফতার করে। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে গণধর্ষণে সহযোগিতা করায় সুরভী আখতার সমাপ্তিকে সোমবার দুপুরে গ্রেফতার করে। পুলিশ ওই গণধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুই যুবকের সন্ধানে অভিযান শুরু করেছে।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন আরপিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন।
এদিকে ওই ঘটনায় স্কুলছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে পুলিশ সদস্য রায়হানুলসহ আরও দুইজনের নাম উল্লেখ করে ধর্ষণ মামলা করেন। ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ভাড়াটিয়া সুমাইয়া পারভীন মেঘলার বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে মেয়ে নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই ছাত্রীর মা জানান, মামলার আসামি ধরতে গিয়ে আমার মেয়ের সঙ্গে এএসআই রায়হানুল রাজুর পরিচয় হয়েছিল। তারপর থেকেই তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আমার মেয়ের সাথে সে কথাবার্তা বলত। মাঝেমধ্যে দেখা সাক্ষাৎ করত। বিষয়টি এমন পর্যায়ে যাবে আমরা ভাবতে পারিনি।
আরএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাকে দুইজন ধর্ষণ করেছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে রায়হানুল ইসলাম রাজু নামের একজন পুলিশ সদস্যের কথা জানিয়েছে। তবে ওই রাজু ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল কিনা তা নিশ্চিত হতে রায়হানুলকেও বরখাস্ত করে পুলিশের জিম্মায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মেয়েটির পরিবার পুলিশের কাছে ধর্ষণের ব্যাপারে মামলা করেছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী উপ-পরিদর্শক রায়হানুল ইসলামসহ আরও দু’জনের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। এটি জানিয়েছেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে পুলিশ সদস্য জড়িত তাই মামলাটি অধিকতর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়। সূত্র : যুগান্তর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।