জুমবাংলা ডেস্ক : জামালপুরের সদ্য সাবেক ডিসির অফিস সহকারী সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার গ্রামের বাড়ি জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার শুকনগরী গ্রামে। তার বাবার নাম খাইরুল ইসলাম। মায়ের নাম কুমকুম বেগম। এই দম্পত্তি নিঃসন্তান হওয়ার কারণে দত্তক নেয় সাধনাকে। সাধনার মাথায় চুল নেই, যার কারণে মাথা ঢেকে রাখে হিজাবে। কোন একটা রোগের কারণে ছোট বয়সেই তার মাথার চুল ও ভ্রু উঠে যায়।
অপ্রাপ্ত বয়সেই বিয়ে হয় সাধনার। মাদারগঞ্জের জোনাইল গ্রামের জাহিদুল ইসলাম ফরহাদ তার প্রথম স্বামী। বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি করতো সে। পূর্ণ নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের আগে থেকেই সাধনা নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়। যার কারণে স্বামীর সঙ্গে তার বনিবনা ছিলনা। এর মধ্যেই ২০০৯ সালে তার স্বামী ফরহাদ আকস্মিকভাবে মারা যায়। তার মৃত্যু নিয়ে তখন নানান কানাঘুষা শুরু যায়। স্বামীর মৃত্যুর পরে সাধনা স্বপরিবারে অর্থাৎ পালিত বাবা মায়ের সঙ্গে জামালপুর শহরের বগাবাইদ বোর্ডঘর এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন। এ সময়েই তার উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা নজর কাড়ে এলাকাবাসীর।
অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে আসে। এ সময় কথা হয় ৪নং বালিজুড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সহ কয়েক জনের সাথে।
চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক ভোগলা বলেন, গত দুই দিন ধরে আমার কাছে বিভিন্ন মহল থেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে সাধনা সম্পর্কে। আমার ইউনিয়নের ভোটার তিনি নন। আমি যতটুকু জানি, ১৯৯০ সালের বন্যার সময় খাইরুল ইসলাম নামের এক লোক এই মেয়েকে নিয়ে শুকনগরী গ্রামে আসেন এবং বেশ কয়েক বছর বসবাস করেন। খাইরুলের সংসারে কোন সন্তান জন্ম না নেয়ায় এই মেয়েকে কারো কাছ থেকে দত্তক নেয়। মেয়েটার বিয়ে হয়েছিল। স্বামী মারা গেছে। একটি সন্তানও আছে তার।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, আমি লোক মাধ্যম শুনেছি স্বামী মারা যাওয়ার পরে এক যুবকের সাথে প্রেম সম্পর্কে জড়ান এবং এই ঘটনা জানাজানির পর তরা স্ব-পরিবারে জেলা শহরে চলে যান। সেখানেই বর্তমানে বসবাস করছেন।
মাদারগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, এই ঘটনার পর থেকে ফেসবুক বা বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে আমি পড়েছি বিষয়টি। আমিও জেনেছি সাধনা নামের মেয়েটি তার বাবার পালিত মেয়ে। তারা এখন জামালপুর শহরে বসবাস করছেন। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাছে কোন আদেশ নির্দেশ আসেনি। সে ক্ষেত্রে এর বেশি কিছু জানা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শুকনগরী গ্রামে এক বাসিন্দা বলেন, ৭ বছর আগে সানজিদা ইয়াসমিন সাধনার স্বামী মা’রা যান। তাদের একমাত্র সন্তান ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে। সে এখন তার খালার বাড়িতে আছেন। এই মহিলা ভালো না। অনেক ছেলে মানুষের সাথে সম্পর্ক করে। এই কারণে আমাদের গ্রাম থেকে চলে গেছে অনেক আগেই। এখন শহরে তো আর কেউ কিছু বলতে পারবে না।
সাধনা ২০১৮ সালে উন্নয়ন মেলায় হস্তশিল্পের স্টল বরাদ্ধ নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আহমেদ কবিরের সাথে দেখা করেন। তার রূপে মুগ্ধ হয়ে বিনামূল্যে স্টল বরাদ্দ দেন জেলা প্রশাসক। উন্নয়ন মেলা চলাকালীন তাদের মধ্যে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরবর্তীতে যা শারীরিক সর্ম্পকে রূপ নেয়। এমন একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তাদের। ইতোমধ্যে আহমেদ কবিরকে ওএসডিও করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ছায়া ডিসি সাধনার হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন একাধিক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। ডিসির প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্নি দপ্তরে বদলি, নিয়োগ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি বাণিজ্য করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত কাজে সাধনাকে ম্যানেজ করতো সুবিধাভোগীরা। সবার মাঝেই ছায়া ডিসি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন এই প্রভাবশালী পিয়ন।
অফিস চলাকালীন সময়ে তাদের রঙ্গলীলা অবাধ করতে সেই কামরার দরজায় বসানো হয়েছিল লাল ও সবুজ বাতি। রঙ্গলীলা চলাকালে লালবাতি জ্বলে উঠতো। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো বিশ্বস্ত পিয়ন। এই সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার জন্য প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এ সময় তার অফিসের বাইরে ফাইলপত্র নিয়ে অপেক্ষায় থাকতো কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অনেকেই। লীলা শেষে পরিপাটি হয়ে যখন চেয়ারে বসতো তখন জ্বলে উঠতো সবুজ বাতি। সবুজ বাতি জ্বলে উঠার পরেই শুরু হতো দাপ্তরিক কার্যক্রম।
সাধনা অফিস সহায়ক পদে যোগদান করার পর জেলা প্রশাসকের অফিস রুমের পাশে খাস কামরাটিতে মিনি বেড রুমে রূপান্তর করতে খাট ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সাজ্জসজ্জা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।