জুমবাংলা ডেস্ক : ঢাকা জেলার ঐতিহ্যবাহী ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি স্কুল ও কলেজের কথাই বলা যাক। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শতবর্ষী এই প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখা শুরু হয় ২০১৩ সালে। এখন প্রতিষ্ঠানটির স্কুলে শিক্ষার্থীরসংখ্যা এক হাজার ৭০০, কারিগরি শাখায় ১৮০ ও কলেজে ৮০০, মোট দুই হাজার ৬০০ জন।
স্কুলশিক্ষক আছেন ৪৩ জন, কারিগরি শিক্ষক সাতজন ও কলেজের শিক্ষক ১৪ জন। ২১ বিঘা জমিতে ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি স্কুল ও কলেজ অবস্থিত। পূর্ব-পশ্চিমে ইউ আকৃতি প্রতিষ্ঠানটির পশ্চিমে শিক্ষকদের অফিস কক্ষ। উত্তরে স্কুল এবং দক্ষিণে স্কুল ও কলেজের ভবন রয়েছে। স্থান সংকুলান হয় না বলে স্কুলের ক্লাস চলে দুই শিফটে।
সম্প্রতি সরকারি অর্থায়নে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে একটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। মার্চ মাসে এর উদ্বোধন হয়। তবে গত ছয় মাস ধরে কোনো শিক্ষার্থী সেখানে যাচ্ছে না। আগ্রহ নেই শিক্ষকদেরও। এই অবস্থার কারণ পাশের ডেইরি ফার্ম। ফার্ম থেকে আসা দুর্গন্ধে ভবনটিতে পাঠদান অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খামারের প্রতিষ্ঠাতা প্রভাবশালী হওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছেন না স্থানীয় এমপি-মেয়র। ফলে সাড়ে তিন কোটি টাকার ওই ভবন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে স্থানটিতে চারতলা ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে তার পেছনে স্কুলের জমিতে বিশাল একটি গরুর খামার রয়েছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ধামরাই ডেইরি ফার্ম’। ফার্মটির উত্তর ও পূর্ব পাশে আবাসিক এলাকা,পশ্চিমে পৌরসভার কার্যালয়, দক্ষিণে হার্ডিঞ্জ স্কুল ও কলেজের নবনির্মিত ভবন। এই ভবনের সামনে স্কুলের পুকুরে ফার্মের গোচনা ও বর্জ্য নিষ্কাশন করা হয়। এতে ভবনটিতে তীব্র দুর্গন্ধ আসে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ, এলাকাবাসী ও শিক্ষকরা জানান, এই ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা পাঠানটোলা মহল্লার হাসিবুর রহমান কাশেম একসময় হার্ডিঞ্জ স্কুল ও কলেজে তিনবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২৪ অক্টোবর ১৯৯৮ থেকে ২ নভেম্বর ২০০১, এরপর ১ ডিসেম্বর ২০০৭ থেকে ৯ নভেম্বর ২০১৫ এবং সর্বশেষ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ থেকে ৩০ জুন ২০১৮ পর্যন্ত। প্রথমবার সভাপতি হওয়ার পর তিনি স্কুলের প্রায় ১০ বিঘা জমি ভাড়া নিয়ে ‘ধামরাই ডেইরি ফার্ম’ নামে গরুর খামার করেন। খামারে গাভী, ষাঁড়, বকনাসহ প্রায় ২০০ গবাদি পশু আছে। এখন তিনি প্রতিমাসে হার্ডিঞ্জ স্কুল ও কলেজকে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া দেন।
যে পুকুরটিতে এখন খামারের বর্জ্য ফেলা হয় তাতে একসময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাঁতার প্রতিযোগিতা হতো। পুকুরের পানি এত খারাপ হয়েছে যে, মাঠে খেলাধুলার সময় পুকুরে ফুটবল গেলে কেউ আনতে যেতে চায় না।
পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, পূর্ব পাশের জানালা খুলতে পারি না। খুললেই ফার্মের উৎকট গন্ধ আসে। বসে কাজ করার পরিবেশ থাকে না। এই খামার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ফার্মটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ আশ]পাশের বাসিন্দাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে ও স্থানীয় বাসিন্দাদের বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু হাসিবুর রহমান কাশেম প্রভাবশালী হওয়ায় ফার্মটি অপসারণের প্রস্তাব দেওয়ার সাধ্য কারো নেই। এমনকি স্থানীয় এমপি বেনজীর আহমদ ও পৌর মেয়র গোলাম কবিরও কিছু বলেন না।
আরমান, শহিদুল, লিটন, সিনথিয়া, রাইছাসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী জানায়, ডেইরি ফার্মের গন্ধে নতুন ভবনে ক্লাস করা যায় না। ফার্মটি সরানো একান্ত দরকার। ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি স্কুল ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানপ্রধান নূরুল হক ডেইরি ফার্মটির অপসারণের বিষয়ে মন্তব্য করেননি। তবে তিনি বলেন, দুই মাস আগে নতুন ভবনে শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতে উদ্যোগ নিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন।
ফার্মটির বিষয়ে পৌর মেয়র গোলাম কবিরের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ আলীও মুখ খোলেননি। ফার্মের পাশে বসবাসকারী আবদুল করিম, জহিরুল ইসলামসহ কয়েকজন ভাড়াটিয়া জানান ফার্মের জন্য এখানে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
ধামরাই হার্ডিঞ্জ সরকারি স্কুল ও কলেজের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, ফার্মটি অপসারণের বিষয়ে স্থানীয় এমপি ও পৌর মেয়রসহ প্রতিষ্ঠান প্রধানের উপস্থিতিতে সভা করেছি। কিন্তু ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা হাসিবুর রহমান কাসেম সাহেব প্রভাবশালী হওয়াতে তার সম্পর্কে কেউ কিছু বলতে চান না। ফার্মের কারণে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে তাই প্রতিষ্ঠাতার উচিত হবে ফার্মটি দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া। ফার্মের ম্যানেজার আমিনুল হাসান গার্নেলের সাথে কথা বলেছি। তিনি মালিকের সাথে কথা বলে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
হাসিবুর রহমান কাশেমের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।