প্রথমবারের তুলনায় দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে কেন মারাত্মক পরিণতি হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়, তা ওপরের আলোচনা থেকে বোঝা গেছে নিশ্চয়ই। গত কয়েক বছরে প্রায় সবাই (বিশেষ করে ঢাকায়) অন্তত একবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, অনেকেরই তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তাই এবারের সংক্রমণ বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই নম্বর সংক্রমণ। এটিও ডেঙ্গুর এবারকার মাত্রাতিরিক্ত তীব্রতার একটা কারণ হতে পারে।
তবে এমনও তো হয় যে কারও প্রথমবার সংক্রমণেই রক্তক্ষরণ শুরু হলো কিংবা রক্তনালি থেকে পানি হারিয়ে শকে চলে গেলেন। কেউ আবার দ্বিতীয়বার ভিন্ন সেরোটাইপে আক্রান্ত হওয়ার পরও দিব্যি হেঁটেচলে বেড়াচ্ছেন। এ রকম পার্থক্যের কারণগুলো এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে জিনগত পার্থক্য এর জন্য দায়ী হতে পারে বলে গবেষণায় বলছে। তা ছাড়া সেরোটাইপ ভেদে রোগের লক্ষণের তীব্রতার পার্থক্য দেখা যায়।
সেরোটাইপ পরীক্ষার জন্য আরএনএ-ভিত্তিক পিসিআর করতে হয়, যা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল এবং বাংলাদেশের দু-চারটি বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোথাও হয় না। তা ছাড়া তেমন কোনো লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ করে ডেঙ্গুরোগীর হৃৎপেশি আক্রান্ত হওয়ার (myocarditis) মতো অদ্ভুত ব্যাপারগুলোর পেছনে কী কারণ রয়েছে, তা নিয়ে বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে।
ব্যাকটেরিয়ার জন্য যেমন আছে বহুসংখ্যক অ্যান্টিবায়োটিক, তেমনি ভাইরাসজনিত অসুখের সুনির্দিষ্ট ওষুধ খুব কমই আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টিকাই ভাইরাসের বিরুদ্ধে একমাত্র ভরসা। টিকা সাধারণত কাজ করে সুরক্ষাব্যবস্থাকে এমনভাবে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমে, যাতে ওই বিশেষ জীবাণুর সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে সংযুক্ত হতে পারে, এমন অ্যান্টিবডি তৈরি হয়।
কিংবা টিকা হিসেবে অনেক সময় সরাসরি সেই অ্যান্টিবডি অণুগুলো শরীরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ডেঙ্গুর টিকা তৈরির ক্ষেত্রে একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সব কটি সেরোটাইপের অ্যান্টিবডি যদি একই সঙ্গে কার্যকর করা না যায়, তাহলে এডিইর কারণে রোগীর রোগ প্রতিরোধের বদলে উল্টো বেশি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
এ জন্য ডেঙ্গাভেক্সিয়া নামে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও এফডিএ অনুমোদিত একটিই টিকা বাজারে আছে, যেটি একই সঙ্গে চারটি সেরোটাইপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। এটি ৯ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যাদের আগে একবার ডেঙ্গু হয়েছে। দুঃখের বিষয়, এ টিকা মাত্র ২০টি দেশে পাওয়া যায়, যে তালিকায় বাংলাদেশ নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।