ঐতিহাসিকভাবেই ঢাকা মশার জন্য বিখ্যাত ছিল। মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে মুঘলরা বাংলার রাজধানী ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
ইংরেজ শাসনামলে ঢাকায় তাদের যে ক্যান্টনমেন্টে ছিল (পুরানা পল্টন এলাকায়; পল্টন মানে সেনা ইউনিট) সেটি মূলত ব্যবহৃত হতো বেয়ারা সৈনিকদের টাইট দেওয়ার জন্য পানিশমেন্ট পোস্টিং হিসেবে। সমগ্র ভারতবর্ষে যত বেয়াড়া সৈনিক, তাদেরকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়া হতো, মশার কামড় খেয়ে, ম্যালেরিয়া বাঁধিয়ে তারা সোজা হয়ে যেত।
কালক্রমে ব্রিটিশরা চলে গেল, পাকিস্তান তৈরি হল, ঢাকা হল পূর্ব বাংলার রাজধানী। নতুন দেশের নতুন রাজধানীতে লোকজন বসতবাড়ি করতে শুরু করল, ভারত থেকে লাখে লাখে মুসলমান এসে ঢাকাতেই উঠলো। কিন্তু মশার যন্ত্রণা কমলো না।
সেই সময় পূর্ব পাকিস্তানের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেলেন ফেনীর সন্তান হাবিবুল্লাহ বাহার চৌধুরী। কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সাবেক অধিনায়ক এই মানুষটি কথা কম বলতেন, কাজ বেশি করতেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২০,০০০ মশার ঔষধ ছিটানোর মেশিন আনালেন (ব্রাশের তৈরি এই মশার ঔষধ ছেটানোর লম্বা টিউব আকৃতির যন্ত্রগুলো আমি ১৯৮০-৯০ সাল পর্যন্ত ঢাকা শহরে দেখেছি)। রাস্তার পাশে গভীর ড্রেন খনন করালেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিক করলেন, শহরের সবগুলো পুকুর খাল ডোবা পরিষ্কার করালেন, ইস্পাহানীর সহায়তায় মশার ওষুধ ছিটানোর উপযোগী দুটো বিমান পর্যন্ত ক্রয় করালেন। পঞ্চাশ দশকে মাত্র দুই বছরের মধ্যে উনি ঢাকার মশাকে এমন মাইর দিলেন যে, উনার মৃত্যুর আরো ১০ বছর পর ১৯৭৫/৭৬ সালেও ঢাকা শহরের মানুষ মশারি না টানিয়ে ঘুমাতে পারতো।
আফসোস! বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কিন্তু হাবিবুল্লাহ বাহার এর মত আরেকজন মানুষ জন্ম নেয়নি।
(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেওয়া)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।