রিফাত তাবাসসুম, ইউএনবি: প্রাকৃতিক পরিবেশে শেষ কবে নিজের পরিবারের সাথে ভালো কিছু সময় কাটিয়েছিলেন? মনে করতে পারেন কি? অবকাশ না নিয়ে দীর্ঘসময় কাজের জন্য ব্যস্ততা জীবনকে একঘেয়ে করে তোলে। যদিও চাকুরি ক্ষেত্রে নানা বিধি নিষেধ, বাচ্চাদের পড়াশোনা বা বাজেটের কারণে গ্রামাঞ্চলে বা বিদেশে দীর্ঘ ছুটি কাটানো সবসময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। নাগরিক জীবনের এমন সব সমস্যার সমাধানে ঢাকার আশপাশে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু রিসোর্ট।
চলুন জেনে নেয়া যাক ঢাকার নিকটবর্তী কয়েকটি রিসোর্ট সম্পর্কে, যেখানে সাপ্তাহিক ছুটি বা অন্য সময়ে একদিনের মধ্যেই ঘুরে আসতে পারেন পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে।
জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট:
প্রকৃতির কাছাকাছি পুরো দিন কাটানোর পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী রান্নাও উপভোগ করা গেলে সেটি আশীর্বাদই বটে। অনন্য এই অভিজ্ঞতা পেতে ঘুরে আসতে পারেন গাজীপুরের টঙ্গীর পূবাইলে অবস্থিত জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট থেকে। এটি ‘পাইলট বাড়ি’ নামেও পরিচিত।
স্থানীয় প্রাকৃতিক পরিবেশ পরিবর্তন না করেই ৯০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয় জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্ট। এই রিসোর্টের ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে বাঁশ এবং পাটের কাঠির মতো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে। খোলা আকাশের নিচে বিস্তৃত এই জায়গায় খেলা ও দৌড়াদৌড়ি উপভোগ করতে পারে শিশুরা। প্রকৃতিক পরিবেশে বিশাল পকুরের পাশে বসে বরশি দিয়ে মাছ ধরে সময় কাটাতে পছন্দ করবেন আপনিও। চাঁদনি রাতে চমৎকার রিসোর্টটি আপনাকে দিতে পারে নির্জন অবিস্মরণীয় কিছু মুহূর্ত।
জল ও জঙ্গলের কাব্যের বিশেষত্ব: এই রিসোর্ট তাদের অতিথিদের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন রান্না ও শীতরে পিঠার দিয়ে আনন্দিত করে। এছাড়া সকাল, দুপুর এবং রাতের খাবারের জন্য তাদের রয়েছে বিশেষ মেনু। জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে ঘুরতে এসে শহুরে পরিবেশে বেড়ে ওঠা আপনার শিশুকে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন গ্রামীণ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সব খাবারের সাথে।
এই রিসোর্টটি সাধারণত ‘ডে আউট প্যাকেজ অফার’ করে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির জন্য এখানে সকাল ও দুপুরের খাবারের খরচ পড়বে ২০০০ টাকা। শিশু, গাড়ির চালক বা ব্যক্তিগত সহকারীর জন্য খরচ পড়বে জনপ্রতি ১০০০ টাকা। তবে সাপ্তাহিক ছুটিতে জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে ঘুরতে যাওয়ার আগে বুকিং দিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
যেভাবে যাবেন জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে: রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নরসিংদি বা কালিগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসে উঠতে পারেন। বাস থেকে নামতে হবে পূবাইল কলেজ গেটে। ভাড়া পড়বে ৮০ টাকার মতো। এখান থেকে রিসোর্টের দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার। কলেজ গেট থেকে সিএনজিতে করে যেতে পারবেন জল ও জঙ্গলের কাব্য রিসোর্টে। এছাড়া নিজস্ব বা ভাড়া করা গাড়িতেও যেতে পারবেন এই রিসোর্টে।
নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট:
প্রকৃতির নিপুণ ছোঁয়ায় তৈরি করা হয়েছে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে অবস্থিত জনপ্রিয় রিসোর্ট নক্ষত্রবাড়ি। প্রকৃতিকে একদম কাছ থেকে উপলব্ধি করতে ঘুরে আসতে পারেন দেশের বিশিষ্ট অভিনেতা, চিত্র পরিচালক এবং স্থপতি তৌকির আহমেদ ও তার সহধর্মিণী জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিপাশা হায়াতের স্বপ্নের প্রকল্প নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টটি থেকে।
যান্ত্রিক ঢাকা শহরের কোলাহল থেকে দূরে এই রিসোর্টটি আপনার রংহীন জীবনে দিতে পারে প্রশান্তি ভরা এক বিরতি। শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী বাজার থেকে একটু দূরে চিনাশুখানিয়া গ্রামে গড়ে ওঠা এই রিসোর্টে ঢুকেই দেখতে পাবেন নান্দনিক একটি হোটেল। যেখানে পাওয়া যাবে প্রায় সব ধরনের খাবার। এছাড়া রয়েছে তিনতলা একটি কনফারেন্স সেন্টার ও রেস্তোরাঁ। যার সামনেই রয়েছে একটি সুইমিংপুল। থাকার জন্য আবাসিক হলের পাশাপাশি রয়েছে বাঁশ এবং প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি করা ১১টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কটেজ।পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে আনন্দ উপভোগ করার জন্য আরো নানা সুযোগ সুবিধা।
রাতে থাকার জন্য হোটেল কমপ্লেক্স, ওয়াটার বাংলো এবং ফ্যামিলি বাংলো রয়েছে নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টে। সুযোগ সুবিধা ভেদে রুমগুলোর খরচ পড়বে ৬ হাজার থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত (ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জ বাদে)। আর ডে আউট প্যাকেজের ক্ষেত্রে খরচ পড়বে জনপ্রতি ২০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
যেভাবে যাবেন নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টে: রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ রাস্তা হয়ে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের দিকে যাওয়া যেকোনো বাসে উঠে পড়ুন। নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্ট থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে রাজাবাড়ি বাসস্টপে নামতে হবে আপনাকে। সেখান থেকে টেম্পো বা সিএনজিতে করে যেতে পারবেন নক্ষত্রবাড়ি রিসোর্টে।
ছুটি রিসোর্ট:
আপনি কি গ্রামাঞ্চলে বড় হয়েছেন? যদি তাই হয় তাহলে অবশ্যই দিনের শুরুতে পাখির ডাক, গাছের পাতার ফাকে রোদের লুকোচুরি খেলা আপনাকে এখনও স্মৃতিকাতর করে তোলে। শৈশবের এসব স্মৃতি রোমন্থন করতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার নিকটবর্তী ছুটি রিসোর্ট থেকে।
প্রায় ৫০ বিঘা জমির ওপর গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ঘেঁষে গ্রামীণ আবহে অবকাশ যাপনের উপযোগী করা দৃষ্টিনন্দন এই রিসোর্টটি তৈরি করা হয়েছে ভাওয়াল রাজবাড়ী থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সুকুন্দি গ্রামে।
গ্রামীণ পরিবেশের মধ্যেও আধুনিক সব সুযোগ সুবিধাই এই রিসোর্টকে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
এখানে আপনি পাবেন ঐতিহ্যবাহী বাঁশের কটেজ, পাখির ঘর, মাছ ধরার ব্যবস্থা, ফুলের বাগান, ঔষধি গাছ, দুটি পিকনিক স্পট, খেলার মাঠ, শিশুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা, আধুনিক রেস্তোঁরা, সুইমিং পুল ও কনফারেন্স রুমসহ নানা সুবিধা।
ছুটি রিসোর্টে রয়েছে ২১টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কটেজ। সুযোগ সুবিধা ভেদে এসব কটেজের ভাড়া পড়বে ৬০০০ থেকে ১৭০০০ টাকা (ভ্যাট ও সার্ভিস চার্জ বাদে)। এছাড়া বিশেষ ডে আউট প্যাকেজের জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে ২৫৩০ টাকা।
যেভাবে যাবেন ছুটি রিসোর্টে: ছুটি রিসোর্টে যেতে হলে ঢাকা থেকে বাসে করে গিয়ে প্রথমে নামতে হবে গাজীপুরের রাজবাড়ীতে। সেখানে অবস্থিত আমতলি বাজার থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ছুটি রিসোর্টে যেতে পারবেন সিএনজি ভাড়া করে।
সারাহ রিসোর্ট:
ছুটির দিন বিলাসবহুল রিসোর্টে সকল নাগরিক সুবিধাসহ একান্ত প্রাকৃতিক পরিবেশের সান্নিধ্যে সময় কাটাতে চান? তাহলে ঘুরে আসতে পারেন সারাহ রিসোর্ট থেকে। গাজীপুরের রাজাবাড়ীতে প্রায় ২০০ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল এই রিসোর্টটি।
এই রিসোর্টে আছে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ৬টি বাংলো, ওয়াটার লজ, সুইমিং পুল, রাজা ভিউ টাওয়ার, মিনিবার, জাকোজি, জিম, মুভি থিয়েটার, বার্ড হাউজ, কিডস জোন, ইনডোর ও আউটডোর গেমসের ব্যাবস্থা, বোর্ড রাইডিং, সাইকেল রাইডিং ও মিনি চিড়িয়াখানা। চাইলে এখানে ঘুড়ি অথবা ফানুশও উড়ানো যাবে। এছাড়া জন্মদিন, বিয়ের অনুষ্ঠানসহ যেকোনো সভা-সেমিনার করার ব্যবস্থা রয়েছে সারাহ রিসোর্টে।
বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন রেসিডেনসিয়াল কিং ভিলা, প্রিমিয়াম ভিলা, সিপিরিয়র ভিলা, সুপিরিয়র ওয়াটার লজ ও ডিলাক্স ভিলাও রয়েছে এখানে থাকার জন্য। রুমের মান এবং সুবিধার ওপর নির্ভর করে এর খরচ পড়বে ১০০০০ থেকে ৭০০০০ টাকা পর্যন্ত। আর ডে লং প্যাকেজের জন্য জনপ্রতি খরচ পড়বে ৩০০০ টাকা।
যেভাবে যাবেন সারাহ রিসোর্টে: সারাহ রিসোর্টে যাওয়ার জন্য রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ময়মনসিংহ রাস্তা হয়ে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের দিকে যাওয়া যেকোনো বাসে উঠে আপনাকে প্রথমে নামতে হবে রাজাবাড়ি বাসস্টপে। সেখান থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সারাহ রিসোর্টে যেতে পারবেন সিএনজি ভাড়া করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।