জুমবাংলা ডেস্ক : আয়-ব্যয়ে সমন্বয় না থাকায় ঢাকা ছাড়ছেন হাজারো মধ্যবিত্ত। চোখ ধাঁধানো ফ্লাইওভার-মেট্রোরেলে মানুষের তুষ্টি নেই। মধ্যবিত্তদের বড় অংশ ক্রমান্বয়ে নিম্নবিত্ত কাতারে যাচ্ছে।আরামবাগ, মালিবাগ মোড়, শান্তিনগর, আজিমপুর মোড়, সিদ্ধেশ্বরী মোড়, রামপুরা, কমলাপুরসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার মোড়ে মোড়ে ঝুলছে অসংখ্য টু-লেট। একটি দেয়ালে ২শ’ থেকে ৩শ’ পর্যন্ত টু-লেট সাঁটানো হয়েছে। ঢাকার এতগুলো বাড়ি, ফ্ল্যাট ফাঁকা! রহস্য কি?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সত্যিই বাসা-বাড়ি ফ্ল্যাটগুলো ফাঁকা। নতুন ভাড়াটের প্রত্যাশায় টু-লেট ঝোলানো হয়েছে। করোনার কারণে চাকরি হারিয়ে এবং ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত বছর যারা গ্রামে ফিরে গেছেন; তাদের অর্ধেক ঢাকায় ফিরে আসেননি। আবার যারা এসেছেন তারা আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সমন্বয় করতে না পেরে কেউ ফিরে গেছেন; কেউ আগের চেয়ে নি¤œমানের বাসায় কম টাকার ভাড়ায় উঠেছেন। এছাড়াও লেখাপড়া শেষ করে যে লাখ লাখ চাকরি প্রত্যাশী মেসে থেকে টিউশনি করতেন; তাদের বড় অংশ টিউশনি হারিয়ে মেস ছেড়েছেন। তারা গ্রামে থেকে ঢাকায় এসে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন। ফলে মেস বাড়ি হিসেবে ব্যবহৃত অনেক রুম খালি পড়ে রয়েছে। রাজধানীর চোখ ধাঁধানো ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এবং নতুন নতুন উচ্চ দালানকোঠা তাদের ভাগ্য ফেরাতে পারেনি। বরং অর্থনৈতিক সঙ্কটে মধ্যবিত্তদের মধ্যে অনেকেই জীবনযাপনের ধারা পাল্টিয়েছেন।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মধ্যবিত্তদের অবস্থা শোচনীয়। কারো আয় বন্ধ হয়েছে, কারো কমেছে। প্রতিটি পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়ের সঙ্গে আয়ের সমন্বয় করতে পারছেন না। ফলে মানুষ ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) একটি সমীক্ষা থেকে জানা যায়, গত ২৫ বছরে রাজধানীতে বাড়িভাড়া বেড়েছে প্রায় ৪শ’ শতাংশ। একই সময়ে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে ২শ’ শতাংশ। এতে নিত্যপণ্যের দামের তুলনায় বাড়িভাড়া বৃদ্ধির হার প্রায় দ্বিগুণ। অন্য এক জরিপ থেকে জানা যায়, ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ, ৫৭ ভাগ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক, ১২ ভাগ আয়ের প্রায় ৭৫ শতাংশ টাকা ব্যয় করেন বাড়িভাড়া খাতে। এছাড়া ৪ ভাগ ভাড়াটিয়া এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। বাড়িভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিটি পণ্যের মূল্য লাগামহীন। বিশেষ করে তেলের মূল্য বৃদ্ধি করায় গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসসহ প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। অথচ বেশির ভাগ কর্মজীবীর আয় কমে গেছে।
১৪৬৩.৬০ বর্গকিলোমিটারের এই রাজধানী শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন প্রায় দুই কোটি মানুষ। নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন ঢাকায় আসা-যাওয়া করেন লাখ লাখ মানুষ। ঢাকা সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সারাদেশের মানুষ রাজধানীমুখী। ফলে ঢাকায় বাসাভাড়া বেশি। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির দাম বেশি। কর্মজীবীসহ সব শ্রেণির মানুষকে উচ্চ ভাড়ায়, বলতে গেলে বেতনের বা আয়ের সিংহভাগ টাকা দিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতে হয়। বাসাভাড়ার খরচ মানুষকে অর্থনৈতিক নির্যাতনের মুখে ফেলছে প্রতিনিয়ত। তারপরও মানুষ ঢাকায় থিতু হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু বর্তমান সময়ে চিত্র অনেকটাই বদলে গেছে। রাজধানী ঢাকার এখন প্রায় সব এলাকার বাসায় বাসায় ঝুলছে ‘টু-লেট’। রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঘুরে জানা গেছে, বিগত কিছুদিন ধরে নতুন করে আশানুরূপ ভাড়াটিয়া পাচ্ছেন না বাসার মালিকরা। ফলে অনেক বাসা ফাঁকা রয়ে গেছে। বাড়ির মালিকরা বলছেন, বিল্ডিং নির্মাণ করতে ব্যয় বেড়েছে। হোল্ডিং ট্যাক্স বেড়েছে। অথচ ভাড়াটিয়ার অভাবে বিল্ডিংয়ের একাধিক ফ্ল্যাট খালি পড়ে রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।