তসলিমার লেখা নিয়ে সাবিনার জবাব

image-126823-1570739303জুমবাংলা ডেস্ক : ফেসবুকে নিজের মত প্রকাশের দায়ে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নির্যাতনে নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী নিহত আবরার ফাহাদকে নিয়ে বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের একটি স্ট্যাটাস নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা চলছে। মতপ্রকাশের পক্ষে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর এই লেখিকার ফেসবুকে পোস্ট বক্তব্যে অনেকের মধ্যেই তৈরি হয়েছে বিস্ময়।কেউ কেউ দ্বিধায় প্রশ্ন তুলেছেন, তসলিমা নাসরিনের আইডি হ্যাক হয়নি তো..?

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সকালে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট দেন দেশ থেকে নির্বাসিত হয়ে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করা বিতর্কিত এই লেখিকা। এতে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন-

‘আরবাব ফাহাদের গুণের বর্ণনা করতে গিয়ে আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, পাড়া পড়শি, চেনা পরিচিত সবাই বলছেন আরবাব মেধাবী ছিল এবং আরবাব ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তো। মেধাবী হওয়াটা নিশ্চয়ই গুণ কিন্তু ২১ বছর বয়সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়াটা তো গুণ নয়, বরং দোষ।

বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে ব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তি, বিবর্তনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই! সাত আকাশের ওপর এক সর্বশক্তিমান বসে আছে, সে ছ’দিনে আসমান জমিন বানিয়েছে, আদম হাওয়াকেও মাটি দিয়ে বানিয়েছে, কথা শোনেনি বলে জমিনে ফেলে দিয়েছে, কেউ একজন ডানাওয়ালা ঘোড়ায় চড়ে তাকে এবং তার বানানো স্বর্গ নরক দেখে এসেছে — এসব আজগুবি অবিজ্ঞান আর হাস্যকর গাল গপ্প কোনও বুদ্ধিমান কেউ বিশ্বাস করতে পারে? আরবাব পড়তো হয়তো বিজ্ঞানের বই, পরীক্ষা পাশের জন্য পড়তো। তার বিজ্ঞান মনস্কতা ছিল না। নিজস্ব চিন্তার শক্তি ছিল না। একে আমি পড়ুয়া বলতে পারি, মেধাবী বলবো না। আরবাব ছিল নিব্রাস ইসলামদের মতো। একবিংশ শতাব্দির আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, কিন্তু মাথায় চোদ্দশ বছর আগের অবিজ্ঞান আর অনাধুনিকতা।

আরবাব অফিসিয়ালি শিবির না করলেও শিবিরের মতো চাল চলন আর চিন্তা ভাবনা বানিয়েছিল। তাতে কী! শিবিরদেরও বাঁচার অধিকার আছে। তাকে যারা পিটিয়েছিল, আমার বিশ্বাস, মেরে ফেলার উদ্দেশে পেটায়নি। কিন্তু মাথায় আঘাত লেগেছে, মরে গেছে। যারা পিটিয়েছিল, তাদের শাস্তি অবশ্যই হতে হবে। এর মধ্যেই কয়েকটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

তসলিমা নাসরিন এই স্ট্যাটাস পোষ্টের পর পরই তার বক্তব্য ঘিরে তৈরি হয় ব্যাপক সমালোচনা। তোপের মুখে পড়েন এই লেখিকা।

তসলিমা নাসরিনের প্রোফাইল হ্যাক হয়নি তো? এই সন্দেহ জানিয়ে কানাডার টরোন্টো প্রবাসী সাবিনা শারমিনফেসবুকে স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘কয়েক বছর আগে কোলকাতার একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নারীবাদের কান্ডারী শ্রদ্ধেয় তসলিমা নাসরীনকে লক্ষ্য করে জুতা এবং চেয়ার নিক্ষেপ করা হয়েছিলো।এই ভিডিও আমরা সকলেই দেখেছি। চেয়ার নিক্ষেপের সে ঘটনায় এমনও হওয়া মোটেও অসম্ভব ছিলোনা যে চেয়ারটি তার গায়ে না পরে এক্কেবারে মাথায় আঘাত করে তার জীবনে বড় একটি ক্ষতি হয়ে গিয়েছিলো,এবং তাতে তার জীবন চলে গিয়েছিলো, তখন সেই ঘটনাটি যদি ঠিক কেউ তার মতো করে আবরার প্রসঙ্গে বলেন তাহলে কেমন লাগবে চলুন একটু দেখি।

তাকে ( তসলিমা নাসরীন) যারা জুতা দিয়ে পিটিয়েছিল,আমার বিশ্বাস,মেরে ফেলার উদ্দেশে পেটায়নি। কিন্তু চেয়ার দিয়ে মাথায় আঘাত লাগায় বেচারী মরে গেছে। যারা পিটিয়েছিল,তাদের শাস্তি অবশ্যই হতে হবে। এর মধ্যেই কয়েকটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

হ্যাঁ,এই কথাটিই হুবহু তসলিমা নাসরীন লিখেছেন আবরারকে উদ্দেশ্য করে !

তাকে যারা পিটিয়েছিল,আমার বিশ্বাস, মেরে ফেলার উদ্দেশে পেটায়নি। কিন্তু মাথায় আঘাত লেগেছে, মরে গেছে। যারা পিটিয়েছিল, তাদের শাস্তি অবশ্যই হতে হবে।এর মধ্যেই কয়েকটাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তসলিমা নাসরীন,আমাদের কাছে আপনি শুধু পড়ুয়া বা লেখুয়া নন। আপনি আমাদের মেধাবী লেখক। আপনার কাছে আমাদের সকলের অনেক প্রত্যাশা। তাই সকল সময় আপনার দীর্ঘায় কামনা করি। বাংলাদেশের নিপীড়িত শোষিত মানুষের আপনাকে ভীষণ প্রয়োজন।যে কোন দুঃসময়ে আমরা আপনার দিকেই তাকিয়ে থাকি আপনি কি বলেন। সদ্য পিটিয়ে মেরে ফেলা আবরার প্রসঙ্গে কিভাবে এমন নির্দয় কথা বললেন ভাবতে অবাক লাগছে। আপনার প্রোফাইল হ্যাক হয়নিতো ?

এমন অপ্রিয় কথা বলার জন্য আমি দুঃখিত।’

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *