
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অযোধ্যায় যাদের হাতে ভেঙেছে ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ, তাদেরই বুলডোজারে ভাঙা হলো ৩০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী রাম জন্মভূমি মন্দির। অথচ বাবরি মসজিদ ভাঙা হয়েছিল রামজন্মভূমি মন্দির নির্মাণের কথা বলেই। সেই রামমন্দিরের ভিত্তি পূজার মাস পেরোনোর আগেই ধুলায় মিশিয়ে দেয়া হলো হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির মেলবন্ধনে তিন শ’ বছর আগে নির্মিত আর এক রাম জন্মভূমি মন্দির।
অযোধ্যায় বিতর্কিত স্থানে আদালতের অনুমোদনে যে বিশাল রাম মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে, সেখানে যাতায়াতের পরিসর বাড়ানোর জন্যই নাকি ভেঙে ফেলা হলো ৩০০ বছরের প্রাচীন রামমন্দিরটি। যদিও ওই মন্দিরটিই এতকাল পূণ্যার্থীদের কাছে চিহ্নিত ছিল রাম জন্মভূমি মন্দির হিসেবেই। যে মন্দিরের জন্য জমি দিয়েছিলেন এক মুসলিম জমিদার।
অযোধ্যায় যদিও এমন অনেক প্রাচীন মন্দির রয়েছে যেগুলোতে অর্থ জমি দান করে সাহায্য করেছিলেন মুসলিম নবাব কিংবা জমিদাররা।
মাসখানেক আগে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের ভূমি পূজা অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার ঠিক আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হনুমানগড়ি মন্দিরে পূজা দিতে গিয়েছিলেন। সেই হনুমানগড়ি মন্দিরটিও একটি সম্প্রীতির ধারাবাহিকতার নিদর্শন। কারণ মন্দিরটি নির্মাণের জন্য জমি ও অর্থ সাহায্য করেছিলেন মুসলিম নবাব। এছাড়াও রয়েছে রামগুলেলা, রানোপলি, নানকশাহী মন্দির, আচারি মন্দির। অযোধ্যা-ফৈজাবাদের সম্প্রীতির সমন্বয়ের এই ছবি এখনো কিছুটা অবশিষ্ট রয়েছে।ক্রমশ তার চিহ্নগুলো ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। রাম জন্মভূমি মন্দির ভাঙা হলো এবার ধুলিস্যাত হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে অধিগৃহীত পরিসরে থাকা আরো অনেক প্রাচীন মন্দির ও স্থাপত্য। বিশাল রামমন্দির নির্মাণের জন্যই এই সব শতাধিক প্রাচীন ঐতিহ্যশালী স্থাপত্যগুলো ধুলিস্যাৎ করা হবে। এর অনেকগুলোই হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
১৩০ বছর আগে ১৮৭০ সালে অউধ সরকার প্রকাশ করে ‘দ্য হিস্টোরিক্যাল স্কেচ অফ তহবিল ফৈজাবাদ’ নামে একটি রিপোর্ট। ব্রিটিশ অফিসার পি কর্নেগি ১৮৬৭-৬৮ সালে রিপোর্টটি তৈরি করেন। সেই রিপোর্টে বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানের উল্লেখ রয়েছে যার শুরুতে রয়েছেন রাম জন্মস্থান মন্দিরের নাম। সেখানে উল্লেখ আছে বহু বছর ধরেই ধর্মপ্রাণ মানুষদের কাছে গুরুত্বের দিক থেকে অগ্রাধিকার পেত এই জন্মস্থান মন্দিরটি। কর্নেগি লিখেছেন, এই শতাধী প্রাচীন মন্দিরটি নির্মাণ করে ছিলেন মহন্ত রামদাস। যে এক একর জমির উপর মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল সেই জমি দিয়ে ছিলেন তৎকালীনি ফৈজাবাদের জমিদার মীর মাসুম আলি।
দু’দিন আগে অযোধ্যার রামকোর্টে যে জন্মভূমি মন্দিরটি ধুলিসাৎ করা হলো– এই মন্দির কেবল মানুষের বিশ্বাসের নয়– অযোধ্যার ক্ষমতার অন্যতম কেন্দ্রও ছিল। অযোধ্যার বিভিন্ন মঠ মন্দিরের মহন্তরা এই মন্দিরে এসেই নাম নথিভুক্ত করতেন মহন্ত হিসেবে। অর্থাৎ এখান থেকেই মহন্ত পদের শিলমোহর দেয়া হতো।
বছর পাঁচেক আগে গিয়ে দেখেছি যেখানে ধ্বংসপ্রাপ্ত বাবরি মসজন্সক্রিত, ঠিক তার পাশেই ছিল রাম জন্মভূমি মন্দির। মাঝখানে কেবল একটি রাস্তা ছিল যা হনুমানগড়ি থেকে দুয়ারিকুঁয়া পর্যন্ত যেত। রাস্তার দু’ধারে দু’টি সৌধ একটি হিন্দুদের উপাসনাস্থল অন্যটি মুসলিমদের প্রার্থনাস্থল। তখন অযোধ্যায় সমম্বয়ের সংস্কৃতি ছিল মুসলিম নবাব কিংবা জমিদারদের কল্যাণে। হিন্দুত্ববাদীদের কবলে পড়ে এখন সেই প্রাচীন স্থাপত্যগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের ঐতিহ্যও ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে। সূত্র : পূবের কলম
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।