জুমবাংলা ডেস্ক: তিন দফায় বেধড়ক পিটিয়ে হত্যা করা হয় বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। টানা পাঁচ ঘন্টা তার ওপার চলে নারকীয় তাণ্ডব।
রুম নম্বর ২০১১, শেরেবাংলা হল, বুয়েট। রাত নয়টার দিকে শুরু হয় মারপিট। তিন দফা পেটানো হয়েছে আবরারকে।
রাত ৮টার দিকে আবরারকে ২০১১ নম্বর টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে হুমকি দিতে শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতারা। এ পর্যায়ে ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফেসবুক ঘেঁটে বাছ-বিচার না করেই হকি স্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। সেখানে অবস্থান করা সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিনও আরেকটি হকি স্টিক নিয়ে আবরারকে পেটানোতে অংশ নেন। ওই সময় ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন আবরারের হাত ধরে রাখেন। আর আবরারের পায়ে পেটাতে থাকেন উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল।
সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইশতিয়াক মুন্নাও নির্দয়ভাবে পেটাতে শুরু করেন আবরারকে। কেউ হকি স্টিক দিয়ে, কেউ লাঠি দিয়ে, কেউ বা কিল-ঘুষি দিয়ে ইচ্ছামতো আবরারকে পেটানোতে অংশ নেন। এভাবে ২২ জন অংশ নেন এই ভয়ংকর নির্যাতনে। আবরার একটু কাঁদতেও পারেননি। কারণ তখন তাঁর মুখ চেপে ধরা হয়েছিল। চরম এই নির্যাতনের মধ্যেও আবরার বলেছিলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমাকে মেরো না।’ আরো কিছু বলার চেষ্টা করলেও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তা আর বলতে পারেননি।
ওই অবস্থার মধ্যেই টর্চার সেলে প্রবেশ করেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ। তাঁরাও অপেক্ষা না করে নিস্তেজ প্রায় আবরারকে পেটাতে শুরু করেন। এভাবেই একপর্যায়ে মেধাবী ছাত্র আবরার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
তাঁদের গ্রেপ্তার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন ভয়ংকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।
জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত ও ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা ভিডিও ফুটেজে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৯ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
এ ঘটনায় বুয়েটের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।