জুমবাংলা ডেস্ক : যশোরে করোনাকালীন বিশেষ প্রণোদনা পেয়েছেন তিন হাজার কৃষক। তাদেরকে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে প্রায় কোটি টাকা। পারিবারিক সবজি ও পুষ্টি বাগান প্রকল্প করার জন্য সরকার কৃষকের এ প্রণোদনা দিয়েছে। যাতে করোনা দুর্যোগে ঘরবন্দি কৃষক পারিবারিক খেতে উৎপাদিত সবজি খেয়ে সুন্দরভাবে দিন কাটাতে পারে। তাদেরকে পরিবার নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে না হয়।
সূত্র জানায়, করোনা সারাবিশ্বে মাহামারি রূপ নিয়েছে। এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে পৃথিবীতে ৬ লক্ষাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলাদেশও একই পরিস্থিতির শিকার। দেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের হার। সরকার এ ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। গরীব মানুষের জন্য সরকারি অনুদান, বিভিন্ন সেক্টরে প্রণোদনা, স্বল্প সূদে ঋণদানসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি উত্তরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে কৃষক বাঁচাতে সরকার চলতি বছরে পারিবারিক সবজি ও পুষ্টি বাগান প্রকল্প চালু করেছে। করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের উন্নয়নে সরকার এ প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। যাতে দেশের কোন কৃষক পরিবারের সদস্য খাবার নিয়ে সমস্যায় না পড়ে। পারিবারিক খেতে উৎপাদিত সবজি দিয়েই তারা দৈনন্দিন খাবারের চাহিদা মেটাতে পারে। বাজারে গিয়ে তাদের সবজি কেনার প্রয়োজন হবে না। গ্রামীণ পরিবেশে খেত অথবা বাড়ির আশেপাশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে পতিত না থাকে, সে লক্ষ্যেই বিশেষ এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের সুবিধাভোগী কৃষকের বাড়ির আঙ্গিণায় এক শতক জমিতে সবজি বাগান করতে হবে।
যশোর কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, পারিবারিক সবজি ও পুষ্টি বাগান প্রকল্পের আওতায় যশোর জেলার দুই হাজার ৯১২টি কৃষক পরিবার সুবিধা ভোগ করছে। কর্মসূচির আওতায় প্রতিটি ইউনিয়নের ৩২টি কৃষক পরিবার এ পুষ্টি বাগান করবেন। এ হিসেবে ৮টি উপজেলার ৯১টি ইউনিয়নে কৃষকের বাড়িতে দুই হাজার ৯১২টি সবজি বাগান গড়ে উঠবে। সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে বাড়ির আঙ্গিণায় সবজি ও পুষ্টি বাগান করা হবে ৪৮০টি। শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে সবজি বাগান হবে ৩৫২টি, ঝিকরগাছা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বাগান হবে ৩৫২টি, চৌগাছা উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নে বাগান হবে ৩৫২টি, অভয়নগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে বাগান হবে ২৫৬টি, বাঘারপাড়ায় ৯টি ইউনিয়নে বাগান হবে ২৮৮টি, মণিরামপুরে ১৭টি ইউনিয়নে বাগান হবে ৫৪৪টি ও কেশবপুরের পুরনো ৯টি ইউনিয়নে বাগান হবে ২৮৮টি। এরমধ্যে কেশবপুর উপজেলার নতুন দুটি ইউনিয়ন তালিকায় না থাকায় কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছে। একইসাথে আটটি উপজেলা এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে এ বাগান করার জন্য প্রতিটি কৃষককে প্রদান করা হয়েছে এক হাজার ৯৩৫ টাকা হারে। এছাড়া বাকি সাতশ’ টাকার সবজি বীজ, চারা ও সার প্রদান করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি কৃষকের মোট দুই হাজার ৬৩৫ টাকা হারে আট উপজেলার ৯১টি ইউনিয়নে দুই হাজার ৯১২ জন কৃষক পেয়েছেন ৭৬ লাখ ৭৩ হাজার ১২০ টাকা। এরমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক হাজার ৯৩৫ টাকা হারে কৃষকরা পেয়েছেন ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার ৭২০ টাকা। এছাড়া বাকি ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৪শ’ টাকার সবজি বীজ, চারা ও সার বাবদ তালিকাভুক্ত কৃষকের মাঝে প্রদান করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ডক্টর আকতারুজ্জামান বলেন, সরকারের এ প্রকল্পটি জেলার কৃষি কর্মকর্তারা গুরুত্ব দিয়ে গ্রহণ করেছিলেন। এ কারণে তারা সুবিধাভোগী কৃষকের বাগান করা নিয়ে সার্বক্ষনিক তদারকি করেছেন। এ প্রকল্পে যশোর সদর ও মণিরামপুর উপজেলা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সেখানে ৩২টি ইউনিয়নে কৃষকের বাড়ির আঙ্গিণায় সুন্দর সবজি বাগান গড়ে উঠেছে। যা থেকে তারা ইতিমধ্যে সুবিধা ভোগ করতে শুরু করেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, বাড়ির আঙ্গিণায় এক শতক জমিতে বাগান করা হলে তার থেকে প্রতিদিন এক কেজি সবজি তোলা সম্ভব হবে। সরকার কৃষকের চার সদস্যের একটি পরিবারের কথা চিন্তা করে এ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ হিসেবে একজন মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রয়োজন হয় ২৭০ গ্রাম সবজির। যা পারিবারিক সবজি বাগান থেকে সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের কারণে করোনাকালে ঘরবন্দি কৃষককে বাড়তি টাকা খরচ করে বাজারে গিয়ে সবজি কিনতে হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।