জাতীয় ডেস্ক: তিনি কখনও সাংবাদিক, কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা, কখনও এমপি-মন্ত্রীর কাছের লোক। এসব ভুয়া পরিচয়কে বিশ্বাসযোগ্য করতে প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ছবিও কারসাজি করে তৈরি করেন।
আর কখনও নিজের, কখনও অন্যের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মিথ্যা মামলা করেন তিনি। অর্থের বিনিময়ে মামলা করাই তার মূল পেশা।
দেশের বিভিন্ন আদালত ও থানায় তিনি শতাধিক ভুয়া মামলা করেছেন। অভিনব এই প্রতারকের নাম আজিজুল হক পাটোয়ারী। মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর আরামবাগ এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তারের সময় নিজেকে তিনি তাঁতী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলে দাবি করেন। বুধবার তাকে আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম জানান, এই প্রতারকের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী এক নারী। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারাদেশে তার একটি মামলাবাজ সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চাঁদপুরের শাহরাস্তি থানার আয়নাতলীর মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে ২০১৬ সালে পরিচয় হয় আজিজুল হক পাটোয়ারীর। পাওনা টাকা উদ্ধারে সহযোগিতার কথা বলে তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেন। এই টাকা ফেরত চাইলে নারী পাচারকারী, ইয়াবা ব্যবসায়ী, অসামাজিক কার্যকলাপে যুক্তসহ নানা মিথ্য অভিযোগে পাঁচটি মামলা করেন তিনি।
কেবল মনোয়ারাই নন, চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য মানুষ আজিজ পাটোয়ারীর মিথ্যা মামলায় জেল খেটেছেন, হয়রানির শিকার হয়েছেন। তার করা ২৪টি মামলার নথি পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, তার করা মোট মামলার সংখ্যা শতাধিক।
আজিজুলের মামলা ও অভিযোগগুলোর নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, ঘটনা কাছাকাছি হলেও থানা বা আসামী ভিন্ন। এমনই একটি মামলা হয় গত ২৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায়। অভিযোগ- একটি প্রতিষ্ঠানের কাভার্ড ভ্যানের চালক ও নৈশ প্রহরীরা আজিজুল এবং তার সহকর্মী সোহানকে মারধর করে ক্যামেরা-ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিয়েছেন।
সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, মিথ্যা মামলা বুঝতে পেরে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে পুলিশ।
ভুক্তভোগীদের একজন মাদ্রাসা শিক্ষক ইকবাল হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে ১১টি মিথ্যা মামলা করেছেন আজিজুল। তার ছেলে আবু ইউসুফ আরও তিনটি মামলা করেন। আর বিভিন্ন দপ্তরে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে ৯২টি। কখনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন ভাংচুর, কখনও মারধর করে টাকা ছিনতাই, কখনও চাঁদাবাজিসহ মিথ্যা সব অভিযোগ আনা হয়েছে। এমনও হয়েছে, যে তারিখে ঢাকায় আমি ছিনতাই করেছি বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, সেই তারিখে আমি মাদ্রাসার প্রশিক্ষণে অন্য জেলায় অবস্থান করছিলাম। মূলত বাড়ির পাশের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে প্রার্থী হওয়ার পর থেকে আজিজুল আমার উপর ক্ষিপ্ত হন।
তেজগাঁও থানার একটি মামলায় সৈকত পালসহ চারজনকে আসামি করেন আজিজুল। একই অভিযোগে তিনি রাজধানীর শাহজাহানপুর থানায় আরেকটি মামলা করেন। আসামী সেই সৈকত পাল। দু’দিন পরই তিনি ছিনতাইয়ের অভিযোগে পল্টন থানায় মামলা করেন। সেখানেও একই আসামি।
ই-কর্মাস ব্যবসায়ী সৈকত পাল জানান, ভালোবেসে বিয়ে করার পর থেকেই তার এই ভোগান্তির শুরু। তার শ্বশুর সুরেশ সরিষার তেলের কর্ণধার সুধীর সাহার হয়ে হয়রানির উদ্দেশ্যে ভাড়ায় এই মামলাগুলো করেন আজিজুল।
আসামী ও ঘটনা ভিন্ন হলেও মামলার সাক্ষী ঘুরে ফিরে কয়েকজনই। কখনও আজিজুল নিজে, কখনও তার ছেলে আবু ইউসুফ, কখনও সহযোগী সোহান ও আরিফুল, কখনও ভগ্নিপতি সেলিম মিয়া, কখনও ছোট ভাই আলমগীর, কখনও ভাতিজা জামাল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।