২০২৪ সালের ২ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে ঢাবির শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে জড়ো হন সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে। আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে। ৪ জুলাই আপিল বিভাগ কোটা বহাল রাখলে উত্তাল হয় রাজপথ। ৬ জুলাই ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘিরে ৭ জুলাই ঢাকায় কার্যত অচলাবস্থা দেখা দেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকে অযৌক্তিক আখ্যা দিয়ে বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার বললে ক্ষুব্ধ হয় শিক্ষার্থীরা। ১০ জুলাই আদালতের স্থিতাবস্থার নির্দেশও আন্দোলন থামাতে পারেনি। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়—সংসদে আইন পাস ছাড়া মেনে নেওয়া যাবে না।
১২ জুলাই শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয় পরিস্থিতি। ১৪ জুলাই রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়ে শেখ হাসিনার “রাজাকারের নাতি-নাতনি” মন্তব্যে স্লোগান ওঠে: “তুমি কে, আমি কে—রাজাকার রাজাকার।” এরপর প্রতিদিনই পরিস্থিতি হয়ে ওঠে ভয়াবহ। ১৬ জুলাই সংঘর্ষে নিহত হন ৬ জন, বিজিবি নামানো হয় ছয় জেলায়।
১৭ জুলাই পুলিশের হামলা, ১৮ ও ১৯ জুলাই আরও প্রাণহানি, বন্ধ হয় মেট্রোরেল, ইন্টারনেট। আগুন লাগে বিটিভি, সেতু ভবন, টোলপ্লাজায়। ১৯ জুলাই পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৫।
২১ জুলাই সর্বোচ্চ আদালত নতুন করে কোটা নির্ধারণ করে—মেধা ৯৩%, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ৫%, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ ১% করে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন। ২৩ জুলাই সরকার মেধানির্ভর নিয়োগের ঘোষণা দিলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
২৬ জুলাই ডিবি হেফাজতে ছয় নেতা তুলে নেওয়া হয়। আন্দোলন ঠেকাতে সারাদেশে দুই লাখের বেশি মানুষকে অভিযুক্ত করে প্রায় ২০০টি মামলা হয়। ২৮ জুলাই ‘স্থগিত’ ঘোষণা এলেও বাইরের সংগঠকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান।
৫ আগস্ট ঢাকা ঘিরে রাখা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ হারায়। সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করেন। ঢাকার নিয়ন্ত্রণ নেয় সাধারণ জনতা।
এক বছর পরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ তালিকা
শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা এখনও তৈরি হয়নি। আহতরাও অনেকেই বঞ্চিত চিকিৎসা থেকে। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন জানায়, এখন পর্যন্ত ৮৫৪ জন নিহত ও ১৫ হাজার ৩৯৩ জন আহতের তালিকা তারা করেছে। তবে অনেক শহীদের মরদেহ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
ঢামেক মর্গে পড়ে আছে ছয়জনের লাশ। ফাউন্ডেশনের বিশেষ সেলের প্রধান মো. মশিউর রহমান জানিয়েছেন, গেজেটে নতুন ১৫-২০ জনের নাম যুক্ত হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সার্ভারে নাম এন্ট্রি বন্ধ থাকায় অনেক আবেদন ঝুলে আছে।
আর্থিক সহায়তার অংশ হিসেবে ১১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শুরু হয়েছে পুনর্বাসন কর্মসূচি। শহীদদের নামে গেজেট, বৃক্ষরোপণ, স্মৃতিফলক এবং জাতীয় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট বড় পরিসরে স্মরণসভা ও অজ্ঞাত শহীদদের শনাক্তে বিশেষ সেল গঠনের কথাও জানানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।