আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সামরিক জোট ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও এর্দোয়ানের আমলে তুরস্কের সঙ্গে বাকি সদস্যদের সংঘাত বেড়েই চলেছে৷ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির পথে বাধা তারই আরেক লক্ষণ৷ খবর ডয়চে ভেলে’র।
আতাতুর্কের আধুনিক তুর্কি রাষ্ট্রের অনেক মৌলিক বৈশিষ্ট্য সরাসরি চ্যালেঞ্জ করে চলেছেন রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান৷ দেশের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র থেকে শুরু করে ইউরোপ তথা পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্ক আমূল বদলানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি৷ সিরিয়া ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ন্যাটোর সম্মিলিত অবস্থানের বদলে এর্দোয়ান তুরস্কের নিজস্ব স্বার্থ কায়েম করার উপর জোর দিচ্ছেন৷ এমনকি ন্যাটোর বদলে রাশিয়া থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনেও অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলেছেন তিনি৷
বলা বাহুল্য, এর্দোয়ানের এমন ‘একলা চলো নীতি’ পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে স্বার্থের সংঘাত বাড়িয়ে চলেছে৷ কুর্দি জনগোষ্ঠীর উপর তুরস্কের নিপীড়ন বিষয়টিকে আরও জটিল করে তুলেছে৷ অন্যদিকে তুরস্ক দেশের মধ্যে ও সিরিয়ায় কুর্দিদের শত্রু মনে করে৷ বিশেষ করে সিরিয়ায় তথাকথিত ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে কুর্দি ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে, তুরস্কের সেটা মোটেই পছন্দ নয়৷ সিরিয়া সীমান্তে এবং সে দেশের মধ্যে প্রায়ই ওয়াইপিজি যোদ্ধাদের সঙ্গে তুর্কি সৈন্যদের সংঘর্ষ হয়৷
২০১৯ সালে তুর্কি সেনাবাহিনী ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর পর অন্য অনেক দেশের মতো ফিনল্যান্ড ও সুইডেনও তুরস্কে অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ চাপিয়েছিল৷ কালিন অবিলম্বে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, নর্ডিক দেশগুলি তুরস্কের দাবি সম্পর্কে অবস্থান নেওয়া পর্যন্ত সংলাপ চালু থাকবে৷
এমন প্রেক্ষাপটেই ন্যাটোর সব সদস্য দেশ ফিনল্যান্ড ও সুইডেনকে সেই সামরিক জোটে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হলেও তুরস্কের লাগাতার আপত্তির কারণে গোটা প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে৷ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের বিরুদ্ধে তার দেশ ও সিরিয়ায় কুর্দি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তার অভিযোগ এনেছেন৷ তুরস্কের পিকেকে ও সিরিয়ার ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর সদস্যদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট পদক্ষেপ না নিলে তিনি এই দুই দেশের ন্যাটোয় যোগদানের বিরোধিতা চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন৷ সমালোচকদের ধারণা, ন্যাটোর বাকি সদস্যদের নাগালে না পেয়ে শেষ পর্যন্ত এই ইস্যুতে তাদের জব্দ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি৷
পশ্চিম ইউরোপের প্রায় সব দেশেই কুর্দি জনগোষ্ঠী বাস করে এবং রাজনৈতিকভাবেও তারা তৎপর৷ শুধু ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের উপর আলাদা করে সেই দায় চাপিয়ে দিয়ে সবাইকেই সম্ভবত বার্তা দিতে চাইছেন এর্দোয়ান৷ সমস্যা দূর করতে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের প্রতিনিধিদল তুরস্কে গিয়ে এর্দোয়ানের উপদেষ্টা ইব্রাহিম কালিনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন৷ তুরস্কের নিরাপত্তা সংক্রান্ত দুশ্চিন্তা দূর করতে এই দুই দেশের উদ্যোগ দেখতে চান তিনি৷ তুরস্ক ফিনল্যান্ডে যে ২৮ জন ও সুইডেনে ১২ জনকে সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাদের প্রত্যর্পণের দাবি করেন কালিন৷
তুরস্ক যেভাবে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের বর্তমান ‘দুর্বলতা’-র ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে, ন্যাটোর অনেক সদস্য তা ভালো চোখে দেখছে না৷ আপাতত সংলাপের মাধ্যমে বিরোধ মেটানোর উপর জোর দিচ্ছে সেই দেশগুলি৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বুধবার বলেন, তার দেশ এই দুই দেশকে ন্যাটোয় আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছে৷ নরওয়ে সফরে গিয়ে তিনি আরও বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে সদস্য না হয়েও বহুকাল ধরেই ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটোর মহড়ায় অংশ নিয়ে আসছে৷ নরওয়েও এই দুই দেশের অন্তর্ভুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে৷
২০২৩ সালে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এর্দোয়ানের প্রতি সমর্থন অনেক কমে যাওয়ায় তিনি ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের ন্যাটোয় যোগদানের বিষয়টিকে হাতিয়ার করছেন বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন৷ টার্কিশ ফরেন পলিসি ইনস্টিটিউটের সভাপতি হুসেইন বাগচি সংবাদ সংস্থা ডিপিএ-কে বলেন, এর্দোয়ান পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে কিছু একটা করে দেখাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন৷ সে ক্ষেত্রে সাফল্য এলে তিনি আগাম নির্বাচনেরও ডাক দিতে পারেন৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।