আন্তর্জাতিক ডেস্ক : তুরস্কের প্রাকৃতিক সম্পদ বিষয়কমন্ত্রী ফাতিহ ডোনমেজ বলেছেন, কৃষ্ণ সাগরে সন্ধান পাওয়া নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের অর্থনৈতিক মূল্য ধরা হয়েছে ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ যাবতকালে দেশটির সবচেয়ে বড় গ্যাস ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এটি। ৩২০ ঘন মিটারের এই ক্ষেত্রটি থেকে ২০২৩ সাল নাগাদ নিয়মিত গ্যাস উত্তোলন করার আশা প্রকাশ করা হচ্ছে।
এই গ্যাস ক্ষেত্রটি তুরস্কের সরকারি প্রতিষ্ঠান তার্কিশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (টিপিএও) এর তত্বাবধানে পরিচালিত হবে।
‘আমরা আগামীতে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান বিষয়ক সব কার্যক্রম নিজেরাই পরিচালনা করব। এ ধরণের কাজ আগামীতেও টিপিএও-এ কর্তৃক পরিচালিত হবে।’ বলেন ফাতিহ ডোনমেজ। তবে, কৃষ্ণ সাগরে পাওয়া নতুন এই গ্যাস ক্ষেত্রটির পাইপলাইন উন্নয়নে আন্তর্জাতিকভাবে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।
সাকারিয়া গ্যাস ক্ষেত্র নামকরণ করা নতুন এই খনিটি কৃষ্ণ সাগরের ১৭০ কিলোমিটার এলাকা বিস্তৃত। মাত্র এক মাস খনন কাজ পরিচালনা করার পর এর সন্ধান পাওয়া যায়। তবে এ সময়ের মধ্যে কৃষ্ণ সাগরে ৯টি অনসন্ধানী ড্রিলিং করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রটির উত্তলন শুরু হলে তুরস্ক তেল-গ্যাস রফতানীকারক দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপে এরদোয়ান।
খনিজ সম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘এটি নিসন্দহে অনেক বড় অর্জন। আমরা যদি ভবিষ্যতে আর কোনো গ্যাস ক্ষেত্রের সন্ধান নাও পাই এ দিয়ে নিজেদের চাহিদার মেটানো যাবে অন্তত ৭ বছর। কারণ প্রতিবছর তুরস্কের চাহিদা রয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ ঘন মিটার গ্যাস। ’
‘কিন্তু আমরা আশা করছি নিজেদের সীমানায় আমরা আরও খনিজ সম্পদের সন্ধান পাব। আমাদের অনুসন্ধান কার্যক্রম চলতে থাকবে।’ বলেন ফাথিহ।
গ্যাস ক্ষেত্রটি অন্তত ২ হাজার ১শ’ মিটার গভীরে অবস্থিত। কিন্তু সেখানে গ্যাস ক্ষেত্রটি পাওয়ার পর আরও অন্তত এক হাজার মিটার খনন করা হয়। খননকারী দল আশা করছে, সেখানে আরও বড় কোনো খনিজ রয়েছে।
তুরস্কে ৯৯ শতাংশ গ্যাস আমদানি নির্ভর। এটি পাইপলাইন এবং লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) এর মাধ্যমে বিদেশ থেকে আনা হয়। এই আমদানি রাশিয়া, আজারবাইজান এবং ইরান থেকে করা হয়।
তুরস্ক এলএনজি গ্যাসের আমদানি আরও বাড়ানোর জন্য কিছুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্র, কাতার, নরওয়ে ও আলজেরিয়ার সঙ্গে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করেছিলো। গত বছর (২০১৯ সাল) তুরস্ক সাড়ে ৪৫ ঘন মিটার প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানি করে। যার মূল্য ১২’শ মার্কিন ডলার। অন্যদিকে গ্যাস আমদানির বিল অনেকটা তেলের দামের উপর নির্ভর করে।
গ্যাস আমদানি করতে গিয়ে যে পরিমাণ খরচ তুরস্ককে করতে হচ্ছে তার জন্য মাথা পিছু অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই এই নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিস্কারের ফলে সামগ্রিকভাবে তরস্ক এগিয়ে যাবে। ২০১৪ সালে তুরস্ক গ্যাস আমদানি বাবত ২০ কোটি মার্কিন ডলার খরচ করেছিল। সে সময় তেলের দাম ১২০ ডলার ছিল। পরবর্তীতে তেলর দাম কমায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় ১০-১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
নতুন গ্যাস ক্ষেত্রটি তুরস্কের অন্য গ্যাস ক্ষেত্রগুলো থেকে অন্তত ২০ গুণ বড়। এত দিন তুরস্ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গ্যাস উত্তোলন করতো, যা চাহিদার তুলনায় নগণ্য। গত বছর আঙ্কারার উৎপাদিত গ্যাসের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭৩৮ ঘণ মিটার। তার মানে কৃষ্ণ সাগরে পাওয়া নতুন গ্যাস ক্ষেত্র থেকে প্রতি বছর অন্তত ১ লাখ ঘণ মিটার গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হবে।
নতুন গ্যাস ক্ষেত্রটি ভৌগলিকভাবে এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যেখান থেকে উত্তোলন কার্যক্রম পরিচালনা খুবই সহজ হবে বলে জানিয়েছেন তুরস্কের খনিজ সম্পদ মন্ত্রী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।