নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: তুরাগ নদের পাড়। সেখানে কোথাও ২০ ফুট, কোথাও ৩০ ফুট গর্ত। নদের পাড়ের এক ফসলি জমিতেও এমন গর্ত। এই চিত্র তুরাগপাড়ের গাজীপুর মহানগরের কারখানা বাজার এলাকার বিপ্লবর্থা গ্রামের। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা এটা করছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রশাসনের নাকের ডগার ওপরই এমন ঘটনা ঘটছে।
কারখানা বাজার এলাকার বিপ্লবর্থা গ্রামটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে। গত মঙ্গলবার এই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, তুরাগের দুই পাড়ের ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার এলাকা থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনের বেলা জমি থেকে মাটি কাটা হয়। কেউ না থাকলে তখন নদীর পাড় থেকে কাটা হয় মাটি। রাতেও চলে মাটি কাটার উৎসব।
গাজীপুর শহর থেকে বিপ্লবর্থা গ্রামে যাওয়ার আগেই মীরেরগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটিভর্তি ডাম্প ট্রাক সারিবদ্ধভাবে চলছে। আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই দেখা যায়, এমন ট্রাকের সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া কারখানা বাজার ও বিপ্লবর্থা গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় থামানো রয়েছে ট্রাক। তুরাগ নদের দিকে তাকালেই দেখা যায়, খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে মাটি কেটে ডাম্প ট্রাকে ভরা হচ্ছে। প্রতিটি এক্সকাভেটরের পাশে সারিবদ্ধ রয়েছে ৮ থেকে ১০টি ট্রাক। এসব ট্রাক যাতায়াতের জন্য ফসলি জমি ও তুরাগ নদের মধ্যে মাটি ফেলে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ এলাকা দিয়ে স্থাপিত বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের বড় বড় স্টিলের খুঁটির গোড়া থেকেও কেটে নেওয়া হচ্ছে মাটি।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২-৩ বছর ধরে এই মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের নগদ টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছেন। এক বিঘা জমির ১০ ফুট পর্যন্ত মাটি কাটার বিনিময়ে কৃষকেরা পাচ্ছেন ৪ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, আইন ভেঙে এভাবে মাটি কাটার ফলে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে। জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থে প্রশাসনের উচিত এই মাটি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
স্থানীয় বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘মাটি সবাই বিক্রি করছে, কেউ লোভে কেউবা চাপে। আমিও গতবার বিক্রি করেছি, সেখানে এখন মাছ চাষ করছি। তবে সত্যি বলতে, মাটি কাটার ফলে এসব জমির মূল্য কমে যাচ্ছে।’
অবৈধভাবে এমন মাটির ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে গাজীপুর মহানগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা সাধন চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘নিউজ করলে করেন, ভালো করে লিখেন। মাটি কাটতে, গেলেই সবাই বাধা দিচ্ছে। এখন আর আমি মাটি কাটছি না। অনেকেই কাটছে তাদের নাম বলব না। আমি এখন ভেকু (খননযন্ত্র) ভাড়া দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ২০১৩ সালে আইন করেছে, মাটি কাটার নিষেধ আছে। তবুও মাটি কাটেন কেন জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, দেশে কয়জন আইন মেনে কাজ করে? সবাই তো আইন ভঙ্গ করে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল হক বলেন, ‘নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি। অনেকবার সেখানে অভিযান চালিয়েও কাউকে ধরতে পারিনি। আবারো আমরা সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করব।’
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, নদীর তীর এবং চর থেকে অবৈধ মাটি কাটতে দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সদরের ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।