নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: দখল-দূষণ ও শিল্প-কারখানার তরল বর্জ্যে গাজীপুরের তুরাগ নদে মাছ কমেছে অনেক আগেই। বর্ষা মৌসুমে সামান্য পরিমাণ দেশীয় মাছ দেখা মেলে এই নদে। তবে, বর্তমানে এই নদের পাড়ে বসবাসকারী জেলেদের দুশ্চিন্তায় ফেলেছে সকার ফিস। নদে জাল ফেললেই উঠে আসছে এই মাছ। অনেক সময় হাতেও ধরা পড়ছে মাছটি।
গাজীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে তুরাগ নদ কানেক্টেড (যুক্ত)। যে কারণে তুরাগে সাকার ফিস বুড়িগঙ্গা থেকে আসতে পারে।
স্থানীয়রা জানান, সাকার ফিসের কারণে গাজীপুরে নদী ও জলাশয়ে থাকা অন্য মাছ হুমকির মধ্যে রয়েছে। সাকার ফিস দেশি মাছের খাবার খেয়ে ফেলে এবং অবাসস্থল ধ্বংস করছে। মানুষ এই মাছটি না খাওয়ায় তারা দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। আগে, সকার ফিস বুড়িগঙ্গা নদীতে থাকলেও নতুন করে তুরাগ নদের গাজীপুর অংশে ছড়িয়ে পড়েছে। মাছ ধরে জীবিকা চালানো জেলে আর নদীকেন্দ্রিক মানুষের জন্য এখন এক অভিশাপের নাম সাকার ফিস।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে গাজীপুর মহানগরীর তুরাগ পাড়ের কড্ডা বাজার, ইসলামপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় শিশুরা তুরাগ নদ থেকে সাকার ফিস খেলার ছলে কিংবা বিক্রির জন্য ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এলাকার লোকজন এটিকে রোহিঙ্গা ফিস বলে সম্মোধন করছেন।
মাছ ধরতে আসা ডন মিয়া জানান, তাদের গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবার মাছ ধরে জীবিকা চালাত। এখন কয়েকজন নদে মাছ ধরেন। তবে, দেশি মাছ পান না তারা। রোহিঙ্গা মাছ (সাকার ফিস) সব মাছ খেয়ে ফেলছে। যাও দুই-চারটা দেশি মাছ আছে সেগুলো ধরা যায় না অতিরিক্ত এই মাছের কারণে।
কড্ডা বাজারের মাঝি হালিম মিয়া বলেন, ‘আগে নদীতে প্রচুর মাছ ধরতাম। কারখানার ময়লা ও বর্জ্যের কারণে এখন তুরাগের পানি বিষাক্ত হয়ে গেছে। নদীতে আগের মতো মাছ নেই। গত দুই বছর ধরে নদীতে জাল ফেললে রোহিঙ্গা মাছ (সাকার ফিস) ধরা পড়ে।’
ইসলামপুর এলকার আসলাম হোসেন বলেন, ‘মাছ ধরতে যখনই জাল ফেলি তখনই সকার ফিস উঠে আসে। পরে সেগুলো আবার নদীতেই ফেলে দিয়ে আসি। অনেকেই বলে এটি খাওয়া যায়, আবার অনেকে বলে এটি খাওয়া যায় না, কারণ বিষাক্ত। মাছটি দেখতেও ভয়ঙ্কর। দেশি মাছ বাঁচাতে হলে এই মাছ ধ্বংস করার উপায় বের করতে হবে।’
গাজীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শেখ মনিরুল ইসলাম মনির বলেন, ‘বুড়িগঙ্গা তো তুরাগ নদের সঙ্গে কানেক্টেড (যুক্ত)। বুড়িগঙ্গাতে প্রচুর সাকার ফিস রয়েছে। মাছ তো পানির সঙ্গে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায়। তুরাগে সাকার ফিস বুড়িগঙ্গা থেকে আসতে পারে। সাকার ফিস সাধারণ মাছের খাবারগুলো খেয়ে ফেলে। এতে সাধারণ মাছের খাদ্যসংকট দেখা দেয়। যার কারণে দেশি মাছের দেখা পাওয়া যায় না। তুরাগের পানি দূষণ হয়ে অন্য মাছ টিকে না থাকলেও সাকার ফিস টিকে থাকবে এবং বংশবৃদ্ধি করবে।’
সাকার ফিস:
সাকার ফিসের আসল নাম সকার মাউথ ক্যাটফিস। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকাসটোমাস। সাকার ফিসের পিঠের ওপরে বড় ও ধারালো পাখনা আছে। দুই পাশেও রয়েছে একই রকমের দুটি পাখনা। এদের দাঁত ধারালো হয়। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাকার ফিস উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছ খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এটি চিংড়ি, কালি বাউস, মাগুর ও শিং মাছসহ ছোট শামুক জাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে শেষ করে ফেলে।
ডুয়েটে বিশেষ ব্যবস্থা ছাত্রলীগ নেতার পরীক্ষার, শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।