জুমবাংলা ডেস্ক : দ্বিতীয় দফা বন্যার পানি নামতে না নামতে তৃতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত সিলেটবাসী। প্রথম দফা বন্যার ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় ঈদুল আজহার ঈদ আনন্দ মলিন করে দেয়। ঈদের ছুটি ঘরবন্দি অবস্থায় কাটাতে হয় সিলেটের মানুষের। দ্বিতীয় দফা বন্যার সেই পানি নামার আগেই মাত্র ১৫ দিনের মাথায় তেড়ে এসেছে তৃতীয় দফা বন্যা।
সোমবার সকাল থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত অতিবৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢলে তৃতীয়বারের মতো প্লাবিত সিলেটের নিম্নাঞ্চল। জেলার জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও গোয়াইনঘাট উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ ইতোমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পানি বেড়েছে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি নদীতে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসেন জানান, সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী কয়েকদিন আরও বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসময় পানি ছিল বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার ওপরে। কুশিয়ারা নদীর পানি আমলশিদ পয়েন্টে ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি রয়েছে বিপৎসীমার ৯৩ সেন্টিমিটার ওপরে। সারি গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ইন্ডিয়া মেটিওরোলজিক্যাল ডিপার্টমেন্ট (আইএমডি)’র তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গোয়াইনঘাটের সীমান্তবর্তী মেঘালয় রাজ্যের ‘ওয়েষ্ট জৈন্তা হিলস’ ও ‘ইস্ট খাসি হিলস’ জেলায় আজ থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিন দিনে মোট ৩০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সূত্রে জানা যায়, সিলেট জেলার ৯৮টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত। ৭ লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ৬৫৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৯৫৬৮ জন লোক আশ্রয় নিয়েছেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার প্রায় ২৪৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা এবং ১৫১টি গ্রাম প্লাবিত। এছাড়া প্রায় ১৫০০ হেক্টর কৃষি জমি নিমজ্জিত। বন্যায় ১৩ ইউনিয়নের ১৯,৭৫০টি পরিবারের প্রায় ৯৮,৬০০ জন লোক ক্ষতিগ্রস্ত। গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্ট, পিয়াইন নদীর জাফলং পয়েন্ট, সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, সীমান্তবর্তী ভারতের মেঘালয়-চেরাপুঞ্জি থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় উপজেলার সকল নদ-নদীর পানি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে গোয়াইনঘাট উপজেলায় পুনরায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। গোয়াইনঘাট সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
উপজেলায় মোট ৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ৪৭টি নৌকা মাঝিসহ প্রস্তুত রাখা আছে। উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক একযোগে কাজ করবেন। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে প্রতিটি ইউনিয়নে একজন করে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।