আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দুই বছর পূর্ণ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। শনিবার দ্বিতীয় বছর পূর্ণ হয়ে তৃতীয় বছরে পদার্পণ করেছে এ যুদ্ধ। তবে প্রথমদিকের চেয়ে এখন বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে ইউক্রেন। বর্তমানে ইউরোপের মাটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি সবচেয়ে দীর্ঘ প্রাণঘাতী সংঘাত।
এ দিন থেকে দুই বছর আগে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার ট্যাংক ও সেনারা সীমান্ত অতিক্রম করে বীরদর্পে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে এগোতে শুরু করেছিল। ক্রেমলিনের সেরা সমর পরিকল্পনা সত্ত্বেও যুদ্ধের সেই প্রথম কয়েকদিন ও সপ্তাহগুলোতে ইউক্রেনীয়রা অপ্রত্যাশিত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তুলনামূলক অনেক শক্তিশালী শত্রুকে প্রতিহত করে রাজধানীর পতন এড়াতে পেরেছিল।
কিন্তু যুদ্ধের তৃতীয় বছর শুরুর এ সময়টিতে আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও সামরিক সরবরাহ ধীর হয়ে এসেছে, যুদ্ধক্ষেত্রে যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে। গত গ্রীষ্মে কিয়েভের শুরু করা বহুল আলোচিত পাল্টা হামলা মুখথুবড়ে পড়েছে আর মস্কো আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।
ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে তারা পূর্বাঞ্চলের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকা দখল করে ইউক্রেনের ভেতর দিকে আরও বেশ কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে গেছে। এটি নয় মাসের মধ্যে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় জয়। এই জয়ের মাধ্যমে শহরটিতে কয়েক মাস ধরে চলা প্রাণঘাতী লড়াইয়ের অবসান হয়েছে।
দুই বছর ধরে টানা লড়াইয়ে ইউক্রেনের বহু ছোটবড় শহর, গ্রাম ধ্বংস হয়ে গেছে। লড়াই করতে করতে দেশটির সেনাদল ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। পশ্চিমা সহায়তা কমে আসায় তাদের গোলাবারুদেও টান পড়েছে। এর মধ্যেই প্রায় প্রতিদিন রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন তাদের ওপর বৃষ্টির মতো আছড়ে পড়ছে। ফলে যুদ্ধে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠছে।
পরিস্থিতি নড়বড়ে হলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির এখনো প্রচুর বন্ধু আছে। ইউক্রেনের প্রতি সংহতি জানাতে ইতালি,কানাডা ও বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট শনিবার কিয়েভে গিয়েছেন। এসব পশ্চিমা নেতার সঙ্গে নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার মতো চাপ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করছেন জেলেনস্কি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দেশটির কট্টর মিত্র হিসেবে পাশে রয়েছেন। তবে মিত্র দেশটিও ৬ হাজার ১০০ কোটি ডলারের ত্রাণ ও সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছে। ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক সংকটের কারণে এমন সমস্যার মুখে পড়েছে দেশটি। ২০২৪ সালের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তখন প্রেসিডেন্ট পদে পরিবর্তন আসতে পারে। সে রকম কিছু হলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ঘন মেঘের ছায়ায় ঢাকা পড়তে পারে। কেননা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের দৌড়ে বেশ এগিয়ে রয়েছেন। তিনি অবার কিয়েভের প্রতি মার্কিন সমর্থন নীতির বিরোধী।
তেমন কিছু হলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বাধীন রাশিয়া বিজয়ী হিসেবে আবির্ভূত হবেন, আর তখন তারা ইউক্রেনের সীমান্তে থেমে নাও থাকতে পারে বলে নভেম্বরের সফরে মার্কিন রাজনীতিকদের সতর্ক করেছেন জেলেনস্কি। তার এই সতর্কবাণীতে মার্কিন রিপাবলিকান রাজনীতিকরা কতটা উদ্বিগ্ন হয়েছেন তা সময়ই বলে দেবে।
তবে পুতিন জেলেনস্কির এসব দাবিকে বাজে কথা হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছেন। পুতিন এই যুদ্ধকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বৃহত্তর সংগ্রামের অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। আর ক্রেমলিনের অভিজাতদের ধারণা, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়াকে একঘরে করতে চায়। তাই ইউক্রেনকে নিষ্ক্রিয় করে পশ্চিম অভিসন্ধির লাগাম টেনে ধরতে চায় মস্কো। বিপরীতে পশ্চিমারা রাশিয়ার আক্রমণকে নির্লজ্জ আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করে এটি প্রতিহত করা কর্তব্য মনে করে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।