জুমবাংলা ডেস্ক: পটুয়াখালীর বাউফলে বছরের পর বছর ধরে ভাঙছে তেঁতুলিয়া নদীর দুই পাড়। বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি। ভাঙন কবলিত এলাকা থেকে প্রভাবশালীরা দেদারসে বালু ও মাটি কেটে ব্যবসা করছেন। আর এ কারণে ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুন।
উপজেলার চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরব্যারেট এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীর তলদেশ থেকে আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে বালু তুলছেন কয়েক প্রভাবশালী। ড্রেজার দিয়ে প্রতিদিন প্রায় চার লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতি ফুট বালু ৮ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩২ লাখ টাকা।
অপরদিকে, ধুলিয়া ইউনিয়নের বাসুদেবপাশা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ফসলী জমির টপ সয়েল কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করছেন স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তেঁতুলিয়া নদীর চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়ন, নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী, নিমদী, কচুয়া ও ধুলিয়া ইউনিয়ন দীর্ঘদিন ধরে নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যার কারণে এসব এলাকার বালু মহালের ইজারা বন্ধ রয়েছে। শুধুমাত্র বাউফল-দশমিনা সীমান্তবর্তী বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর ডুবোচরে বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। এর বাইরে তেঁতুলিয়া নদীর কোনো পয়েন্টে বালু মহাল নেই।
বালু মহাল না থাকার পরেও চরব্যারেট এলাকা থেকে প্রকাশ্য দিবালোকে বাণিজ্যিক ভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। অপরদিকে, অপরিকল্পিত ভাবে বালু উত্তোলন করায় ওই এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে।
বালু উত্তোলন ও পরিবহনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সরকারি বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বালু তুলছেন ভোলার বোরহানউদ্দিনের প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা মোশারেফ হোসেন। বিশালাকৃতির তিনটি ড্রেজার দিয়ে ২৪ ঘন্টা ধরে এ কাজ করছেন তার লোকেরা। আর অবৈধ ভাবে তোলা বালু বিক্রির লাভের একটি অংশ পাচ্ছেন বাউফলের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তিনটি ড্রেজার দিয়ে অবিরত বালু তোলার কাজ চলছে। এ সময় তেঁতুলিয়ার চরব্যারেট এলাকার কয়েক কিলোমিটার জুড়ে অপেক্ষায় রয়েছে সারি সারি বালু পরিবহনের বাল্কহেড (নৌযান)।
বালু পরিবহনের কাজে নিয়োজিত একাধিক শ্রমিক জানান, প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫টি বাল্কহেডে এসব বালু চলে যায় পটুয়াখালীর পায়রা বন্দর, বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, ভোলার লালমোহন, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন ও চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, অবাধে বালু তোলার জন্য মোসারেফের রয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। মোসারেফের বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায়। বালুর ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে গড়ে তোলেন বিশাল বাহিনী। এছাড়াও ভোলা ও পটুয়াখালীর একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়মিত মাসোহারা দেন মোসারেফ।
অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে মুঠোফোনে মোসারেফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বালু তোলার সঙ্গে আমি জড়িত না। আমার নামা যারা বলে তারা না জেনে বলে।
এদিকে, অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করায় তেঁতুলিয়া নদী পাড়ের চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের চরব্যারেট, চর রায়সাহেব ও চরওয়াডেল এলাকার প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। ইতিমধ্যে কয়েক বছরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে সহস্রাধিক একর জমি। ভিটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন শত শত পরিবার।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাত বছর ধরে নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে গেছে শত শত একর জমি। ভিটে মাটি হারা হয়েছেন শত শত পরিবার। দুই বছর আগে ভাঙন কবলিত এলাকায় একটি নতুন চর জেগে উঠতে শুরু করে। এতে সব হারানো মানুষের মাঝে স্বস্তি ফেরে। তবে গত এক বছর ধরে ও ডুবোচর কেটে বালু উত্তোলন শুরু করে মোসারেফ। বালু উত্তোলনে নিষেধ করলে স্থানীয়দের উল্টো হুমকি-ধামকি দেয়া হয়। নিজের ভিটে মাটি রক্ষা করতে সাত মাস আগে মোসারেফের একটি বালু বোঝাই বাল্কহেড জব্দ করে স্থানীয়রা। পরে তা প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। যদিও নামমাত্র জরিমানাই ছিল তার শাস্তি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, একটি চর জেগেছে। এতে নদী ভাঙন কমবে। কিন্তু সেই চর থেকে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা ধরে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদী ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে।
এদিকে, ধুলিয়া ইউনিয়নের বাসুদেবপাশায় কয়েক বছর ধরে ফসলী জমির টপসয়েল কেটে তা বিভিন্ন এলাকার ইট-ভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীর ছত্রছায়ায় প্রতিদিন ভেকু মেশিন দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকদের ফুসলিয়ে, আবার কখনও ভয়ভীতি দেখিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে।
একাধিক কৃষক বলেন, আমাদেরকে বলা হচ্ছে নদীতে ভেঙে যাচ্ছে সব। তার চেয়ে মাটি বিক্রি করে কিছু পয়সা নিয়ে যাও। পাশাপাশি চোখ রাঙানি দিয়ে মাটি বিক্রিতে বাধ্য করা হচ্ছে। জমির মালিকদের নামমাত্র টাকা দিয়ে প্রভাবশালীরা মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে ইট-ভাটায় ওই মাটি সরবরাহ করছে। অবাধে মাটি কাটার ফলে ওই চরে নদী ভাঙনের মাত্রা বেড়েছে।
ধুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হুমায়ন দেওয়ান বলেন, নদীতে ভেঙ্গে যাচ্ছে চরবাসুদেবপাশার ফসলী জমি। তাই জমির মালিক মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এখানে আমার কিছু করার নেই।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকায় মাটি ও বালু কাটার সুযোগ নেই। শিগগিরই অভিযান চালিয়ে মাটি ও বালু কাটা বন্ধ করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।