ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে পাঁচ দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে ভোটের আগে ও পরে অপতথ্য নিয়ন্ত্রণ এবং রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একগুচ্ছ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ১২ ফেব্রুয়ারি ভোটের তারিখ ঘোষণা করেছে। ভোটকে ঘিরে গতকাল জারি করা ‘আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিশেষ পরিপত্রে’ কমিশন জানায়, ভোটের আগে ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ভোটের পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পরিপত্র অনুযায়ী, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল (ভিডিপি) ছাড়া সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোট পাঁচ দিন মোতায়েন থাকবে। এর মধ্যে নির্বাচন-পূর্ব তিন দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের এক দিন অন্তর্ভুক্ত। তবে আনসার ও ভিডিপি সদস্যরা ছয় দিনের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন—ভোটের চার দিন আগে থেকে শুরু করে ভোটের পরের এক দিন পর্যন্ত। অর্থাৎ, আনসার-ভিডিপি মাঠে নামবে ভোটের চার দিন আগে এবং অন্য বাহিনী তিন দিন আগে, ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কেন্দ্রভিত্তিকভাবে দায়িত্ব নেবে।
এ ছাড়া নির্বাচনকে সামনে রেখে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
অপতথ্য ও গুজব প্রতিরোধে ভোটের আগে ও পরে মোট সাত দিন মনিটরিং সেল সক্রিয় থাকবে। এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করবে বলে জানানো হয়েছে। মোতায়েন সংক্রান্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হবে বলেও পরিপত্রে উল্লেখ করেছে নির্বাচন কমিশন।
ভোটের নিরাপত্তায় কত সদস্য: এবারের নির্বাচনে ভোটার রয়েছেন পৌনে ১৩ কোটি। ৩০০ আসনে প্রায় ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রে ২ লাখ ৬০ হাজারের মতো ভোটকক্ষ থাকবে। প্রাথমিক সভায় প্রত্যেক ভোটকেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৩ থেকে ১৮ জন সদস্য রাখার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ লাখের বেশি সদস্য এবার ভোটের নিরাপত্তায় দায়িত্বে পালন করবেন। ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বে আনসার-ভিডিপি সদস্যদের সংখ্যাই হবে সাড়ে ৫ লাখের মতো। সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৯০ হাজারের বেশি। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্ট গার্ড থাকবে।
বাহিনীগুলো মোতায়েন যেভাবে :নির্বাচনি মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থানের সময়কাল হবে তপশিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পরবর্তী সাত দিন থাকবে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দল ছাড়া সকল বাহিনী ভোটের আগে তিন দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরদিন মোতায়েন থাকবে। আনসারদের জন্য এই সময় হবে ভোটের আগে চার দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরদিন পর্যন্ত। কেন্দ্রভিত্তিক স্থায়ী মোতায়েন হবে কেবল ভোট ঘিরে পাঁচ দিনের জন্য। এছাড়া তপশিল ঘোষণার পর থেকে পুরো সময়ের জন্য কিছু স্থায়ী বা অস্থায়ী চেক পোস্ট থাকবে। তপশিল ঘোষণার পর থেকে সম্পূর্ণ সময়ের জন্য টহল বা আভিযানিক দল মোতায়েন করা হবে। পাশাপাশি থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্স। এছাড়া এলাকা ভিত্তিক সংরক্ষিত ফোর্স রাখা হবে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক আমন্ত্রণ, আবেদন ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত :জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণে আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও বিদেশি গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে আগামী ১৭ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করতে হবে। গতকাল ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি থেকে বিষয়টি জানা যায়। এতে বলা হয়েছে, আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সব কার্যক্রম দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে। এই প্রেক্ষাপটে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক, পর্যবেক্ষক সংস্থা এবং বিদেশি গণমাধ্যমকে স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় করে আসন্ন নির্বাচন ও গণভোট পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ভোটের আগে-পরে সাত দিন অপতথ্য মনিটরিং সেল কাজ করবে : জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে কেন্দ্র করে অপতথ্য নিয়ন্ত্রণে ভোটের আগে ও পরে মোট সাত দিন মনিটরিং সেল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পূর্ণাঙ্গভাবে কাজ করবে। একই সঙ্গে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা বিভিন্ন বাহিনীর করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেনের স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করে মাঠ প্রশাসনকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।
পরিপত্রে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করতে সব রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী যাতে নির্বিঘ্নে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন, ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পারেন এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়—সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করবে। ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাঠামো অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লিড মন্ত্রণালয় হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন-পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বাহিনী ও সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় বজায় রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। মাঠপর্যায়ে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসারদের চাহিদা অনুযায়ী অগ্রাধিকারভিত্তিতে সহায়তা দেওয়া হবে।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ :জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল ইসির উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন নির্দেশনাটি স্বরাষ্ট্র সচিবকে পাঠিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে, গত ১১ ডিসেম্বর ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি জারি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটিকে পুলিশি সহায়তা দেওয়ার নির্দেশ :জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনি অপরাধ তদন্ত ও সংক্ষিপ্ত বিচার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিচারকদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটিকে পুলিশি সহায়তার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির আইন শাখা থেকে নির্দেশনাটি ইতিমধ্যে সব বিভাগীয় কমিশনার ও পুলিশ সুপারদের পাঠানো হয়েছে।
ইসির কাছে নিরাপত্তা চাইলেন দুই প্রার্থী : জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী রেহা কবির সিগমা এবং আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী আসাদুজ্জামান ফুয়াদ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে নিরাপত্তা চেয়েছেন। বুধবার তারা নির্বাচন ভবনে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে পৃথকভাবে এ সংক্রান্ত আবেদন করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



